ইতিহাসে মুক্তিযোদ্ধা


এনামুল হক টগর

প্রিয় দেশবাসি আমি মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধার ইতিহাস বলছি,
আজ বহুদিন পরে এই অক্লান্ত শরীরটা বড় ক্লান্ত মনে হচ্ছে ভাবছি,
সেই উনিশ বছর বয়সে আমি যুদ্ধে গিয়েছিলাম,
তখন প্রদীপ্ত যৌবন আমাকে ডেকেছিল এই প্রিয় জন্মভূমি!
এই সুন্দর গ্রাম নগর নদী সাগর আমাকে ডেকেছিল,
বৈচিত্রময় পাখি ও প্রজাপ্রতিরা আমাকে ডেকেছিল,
দীর্ঘ আকাশ মেঠোপথ পিচ ঢালা রাজপথ আমাকে ডেকেছিল,
ক্ষুধার্ত অনাহারীর বেদনাভরা বিক্ষোপ মিছিল আমাকে ডেকেছিল,
এক দীর্ঘ ও রক্তাক্ত ইতিহাস আমাকে মহাকালের গান শুনিয়েছিল।
আমি শুনতে, শুনতে,শুনতে-
উত্তাল জনতার মুক্তির বার্তা নিয়ে ছুটে গেলাম
একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের জন্য দীপ্তিময় যুদ্ধে আগাম-
সহস্র বছর ও জীবনের পরাধীনতার গ্লানি ভেঙে আমি ও আমরা যুদ্ধ করলাম,
আমাদের জাতি আমাদের মাটি রক্তাক্ত হলো আর রক্তাক্ত হলো আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি।
বহু বছর কেটে গেছে প্রিয় দেশবাসি এই নিরব জীবন অবেলায়,
তবুও ক্ষুধা শীর্ণ অনাহারী পেট আমাকে এখনো কাঁদায়
নিসর্গ মাটির বুকে প্রখর বেদনা আর কঠিন ব্যথা মিশে
ক্লান্ত সমাজের ভাগ্যহীন জীবন ও জীর্ণ বসতির কর্ণে ভেসে আসে,
রাতের অন্ধকারে কতো তরুণীর দেহ ভাঙে অপূর্ণ নিটোল যৌবন,
পাপের বিলাস বৃন্তে ফোটে রজনীগন্ধা গোলাপ আর কীটের বিষে মরণ!
দূর্নীতিবাজ ও পুঁজিবাদ প্রাচুর্যের দীর্ঘশ্বসে নিরুপায় গ্রাম নগর ও জনতা।
কিন্ত আমার সময়ের ক্লান্ত শরীর অসুখে রুক্ষ ও যন্ত্রণার ত্বকে তীব্র ক্ষত!
এই গ্রাম আর ঐ নগরে কতো শিশু ও কিশোর যন্ত্রণায় ঘুরে ফিরে,
তাঁরা পশু পাখির মতো খুঁজে খুজেঁ খাদ্যের সন্ধান করে!
আমার শাণিত যুদ্ধের অস্ত্রটি আজ মরিচায় ক্ষত!
কিন্ত প্রাচুর্যের দম্ভে ঘেরা অসংখ্য খুনি লুটেরা ও মাদক সন্ত্রাসীরা হিংসা ও ক্রোধের খেলায় মত্ত।
তারা লোভ ও লালসার প্রবল বিদ্বেষে ভেঙে দিতে চায় জাতির ভিত ও মূল শেকড়।
তাই মানবতার সামনে মাঝে মাঝে নেমে আসে কুটিল কালের ভ্রুকুটি আঁধার!
তখনই দৃঢ় সবল ও ভাগ্যহীন মানবের এই গ্রাম ও নগর ক্ষধায় জীর্ণশীর্ণ কাঁদে
ব্যভিচার ঘৃণা ও পাপের সদৃশ্য মলিন সমাজের বিক্ষত নদে,
আর নগরের রঙিন আলোর রহস্যে ও বিকৃতি কামনার ক্লেদে,
অনাহারী অসহায় বধু বিক্রি হয় পুঁজির উচ্চ প্রাসাদে।
দীপ্ত উজ্জ্বল্যের ভেতরেই এক কালো কালো রেখার ঝলক।
ভণ্ড আমলারা কবিতা ও উপন্যাস লিখে সাজতে চায় মানবতার সেবক।
তারা জ্ঞান দিতে চায় ভণ্ড রাজনীতিবিদ ও মূর্খের বিবেকে।
আর তখনই বিশাল মৃত্তিকার বুকে অগাছা বুনোঘাস বাড়ে অবাক।
গরীবের ছোট ছোট নীড়ে কালো প্রাসাদের ছায়া পড়ে,
যারা পাইনি খুঁজে সৌভাগ্যের নতুন সিঁড়ি উঠতে উপরে
চক্ষু ওঠাও প্রিয় দেশবাসি আমি মুক্তিযোদ্ধা বলছি-
দেখো তোমার এই সৌন্দর্যভরা প্রিয় বাংলাদেশকে,
বিপ্লবে জেগে উঠছে জীবন ও প্রকৃতির বৈচিত্রময় রংয়ের ঝলকে।
সাহসী নারী পুরুষ ও সৌম্যকান্ত যুবক যুবতী
সৌভাগ্যের সিঁড়ি খুঁজছে সুন্দর আর্দশ নীতি।
সাম্যের সুষমবন্টন শ্রণির উচ্ছেদে,
কলো টাকার দাসদের অট্রালিকা ভেঙে চুরমার করে ভেদাভেদ।
শেষে জনতার এক মিতালী মিছিল ও ভালোবাসায়
জেগে উঠবে গ্রাম নগর ও ছোট ছোট গলিতে সূর্য উদয়।
ইথারে ও তরঙ্গ ঢেউয়ে ঢেউয়ে আর তৃঞ্চাময় অক্লান্ত জীবন যৌবন,
শ্যামল শরীরে তাদের আলো ঝলমল করবে সুদিন।
দীর্ঘ পৃথিবীর সবুজ দিগন্তের বিচ্ছেদ মায়াজালে
প্রাচীন রক্তাক্ত ইতিহাস পেছনে ফেলে তোমরা হেঁটে যাও প্রিয় দেশবাসি,
ভেঙে ফেলো নগ্নতা অসচেতন অশুভ মাদক ক্যাসিনো সম্রাজ্য বিলাস,
অসৎ টাকার বাড়ি গাড়ি পণ্য সামগ্র ধ্বংস সকল প্রকার।
জ্ঞানহীন বিজ্ঞানহীন ব্যর্থ অগ্রযাত্রা ভেঙে করো চুরমার
আর গড়ে তোল নতুন কারখানা ও শস্য আবাদের সাম্য খামার।
সুন্দর জ্ঞান ও সত্য দর্শন অনুসন্ধান করে সত্য আলো ছিনিয়ে আনো,
বাস্তব বিজ্ঞানের দিন আর চেতনার নতুন আবিষ্কার শান।
অনার্যের ইতিকথা সংঘবদ্ধ নিপুণ চেতনা শক্তি মান।
তোমাদের সাথে আছে ছাত্র শ্রমিক
তাঁতি ও সুপ্রাচীন গৌরব ইতিহাসের অভিজ্ঞ কৃষক।
সাথে আছে সাতচল্লিশ বায়ান্ন একাত্তুর ও গণঅভ্যুত্থান
জাতির স্বাধীনতা রক্তবীজ ও বিপুল দেশপ্রেমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অর্জন।
রাজপথে উত্তাল জনতার গণমিছিল,
লক্ষস্থির বিপ্লবে তোমরা সামনের পথে হেঁটে যাও সবল
ঘাতক দালাল স্বৈরাচারী লুটেরা মাদক সব ধ্বংস করে
আর সব হিংসা ক্রোধ বিদ্বষ ও আমিত্ব বিনাশ করে!
কালের ভেদাভেদ ও বৈষম্য মুছে দাও শ্রেণিহীন সাম্যের পথে।
তারপরও শাসক আসবে শাসক বদলাবে
তাদের মুখে থাকবে নতুন কৌশলের স্বর্ণ বাণী ও কথা
সিংহাসনে নব্য ও নতুন প্রভু জন্ম দেবে নতুন শেকড় অসুন্দরে গাঁথা।
আর ধীরে ধীরে গড়ে তুলবে শ্রেণিভেদ ও বৈষম্যভরা সমাজ অযথা!
এভাবে চলছে দেশ এভাবে চলবে দেশ,
তবুও তোমরা হেঁটে যাবে সাহসী ও ডিজিটাল দেশরত্ন আর স্বদেশ নক্ষত্র দেশনৈত্রীর উন্নয়নের সাথে অশেষ।
শ্রেণিহীন এক সৌন্দর্যভরা নতুন সাম্যের মাটিতে,
আস্তে আস্তে বদলে দিতে পারবে সময়ের নিপুণ ও দক্ষ নীতিতে।
সে দিন পণ্য দেবে শিল্প দেবে অন্ন বস্ত্র ও চিকিৎসা দেবে,
আর নিগুঢ় বিশ্বাস ও সেবায় কল্যাণ গড়ে তুলবে
স্নেহ মমতাভারা প্রিয় মাটি ও প্রিয় বাংলাদেশকে।
আমি মুক্তিযোদ্ধা বলছি প্রিয় দেশবাসি জীবনের আলোক,
আমি মুক্তিযোদ্ধা বলছি প্রিয় দেশপ্রেমের মুক্ত ঝলক,
তোমরা হেঁটে যাও তোমরা হেঁটে যাও অবাক।