রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় বিলসুতি বিলের সাব লিজ গ্রহীতাদের উচ্ছেদ করে জোরপূর্বক বিলটি দখল করে নিয়েছে মুল ইজারাদারের লোকজন। বিলটি দখলে নেয়ার পর থেকেই ওই বিলে আর মাছ ধরতে না পারায় বিলসংলগ্ন খালিশপুর,সিন্দুরলং ও তার পার্শবত্তী গ্রামের আড়াই শত পরিবারের জেলে সদস্যরা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ অবস্থায় প্রভাবশালীদের কবল থেকে বিলটি উদ্ধারের জন্য উপজেলা জলমহাল ইজারা কমিটির সভাপতি বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বাগমারা উপজেলা (ভুমি) অফিস বরাবর বিলসুতি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির লিজ বন্ধের জন্য আবেদন করেছেন এলাকাবাসির পক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ আলী নামের এক ব্যাক্তি। লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়,ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিল মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বড়বিহানালী ইউনিয়নের বিলসুতি বিলটি হাসানপুর বিলসুতি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির পক্ষে লিজ নেন সভাপতি অমূল্য কুমার চন্দ্র হলদার।এ সমিতির আওতায় বাগমারার বড়বিহানলী ইউনিয়নের দ্বীপপুর, হাসানপুর,খাঁপুর,বিলবাড়ী,কুলিবাড়ী,সিন্দুর লং,বাগান্না,পাহাড়পুর,হুলিখালী ও নানসরসহ বিলসুতি বিলসংলগ্ন ১৫-১৬টি গ্রামের ৮৪০টি মৎস্যজীবী পরিবারের একজন করে সদস্য রয়েছেন। বাপ-দাদার আমল থেকেই তারা ওই বিলে স্বাধীনভাবে ধান চাষ ও বন্যার পানিতে ভেসে আসা মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। এদিকে, প্রভাবশালী মুল ইজারাদার অমূল্য কুমার সরকারি ভাবে জেলা জলমহাল কমিটির কাছ থেকে লিজ নিয়ে বিলসংলগ্ন খালিশপুর,সিন্দুরলং ও তার পার্শবত্তী গ্রামের আড়াই শত পরিবারের সদস্যদের নামে নিজের তৈরী করা রশিদ বইয়ের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে সাব ইজারা দেন। এরপর থেকে পৈতিক ও সরকারি খাস যায়গায় স্বাধীনভাবে ধান চাষ ও বন্যার পানিতে ভেসে আসা মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা। এছাড়া ওই বিলের মধ্যে তিনটি দীঘি ও কিছু কুয়া রয়েছে। এ সব দীঘি ও কুয়ায় সমিতির অন্তর্ভুক্ত সাব ইজারা মৎস্যজীবীরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু হঠাৎ করে প্রভাবশালী মুল ইজারাদার অমূল্য কুমার চাঁদা দাবি করেন। এবং টাকা না দিলে বিল ও কুয়ায় নামতে দেয়া হবে না বলে হুমকি দেয়া হয়। এসময় মৎস্যজীবীরা চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় অমূল্য কুমার তাদের সাব লিজ বন্ধ করে দিয়ে বিলটি জবর দখল করে নেয়। এরপর থেকে মৎস্যজীবী ও সমবায় সমিতির লোকজনের মধ্যে চলে দ্বন্দ। এবং চলতি বছরের মে মাসে মৎস্যজীবীরা তাদের জমি ও কুয়াতে মাছ ধরতে গেলে সমবায় সমিতির লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। এবং মৎস্যজীবীদেরকে মাছ ধরতে না দেওয়া তারা নিরুপায় হয়ে উপজেলা জলমহাল ইজারা কমিটির সভাপতি বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বাগমারা উপজেলা (ভুমি) অফিস বরাবর বিলসুতি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির লিজ বন্ধের জন্য দুইটি আবেদন করেন। এরপর সেখানে দফায় দফায় দেন দরবার করে অবশেষে দুই পক্ষকে কুয়া ও জমির পানি সেচ দিয়ে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে আধা আধা করে ভাগ বাটোয়ারা করে নেওয়ার জন্য মিমাংসা করে দেন। এবং ওই বিলে স্বাধীনভাবে মাছচাষের জন্য এলাকার মৎস্যজীবীরা চলতি বন্যার পানিতে মাছ ধরার জন্য জাল পেতে রাখলে মুল ইজারাদার অমূল্য কুমার চন্দ্রের লোকজন এসে জাল গুলো তুলে নিয়ে যায়। এবং বিলসুতি বিলের সাব লিজ গ্রহীতাদের উচ্ছেদ করে জোরপূর্বক বিলটি দখল করে নেওয়ায় তারা মাছ ধরতে না পারায় বিলসংলগ্ন গ্রামের আড়াই শত পরিবার ও স্থানীয় জেলেরা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অপরদিকে, সরকারি বিধান অনুযায়ী এসব সরকারি সম্পদ মাছ চাষের জন্য প্রকৃত মৎস্যজীবীদের ইজারা দেয়ার কথা। কিন্তু প্রভাবশালী মুল ইজারাদার অমূল্য কুমার প্রকৃত মৎস্যজীবীদের বাদ দিয়ে তার মনোনিত কয়েকজনকে সাথে নিয়ে ইজারার শর্ত অনুযায়ী সমবায় ও সমাজসেবা দপ্তর থেকে নিবন্ধন নিয়ে এবং জেলা জলমহাল কমিটি কাছ থেকে ইজারা নিয়ে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বিঘার বিলসুতি বিলের খাস জলাশয় কয়েক বছর ধরে ভোগ দখল করে রাজত্ব কায়েম করছেন। এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মুল ইজারাদার অমূল্য কুমার চন্দ্র বলেন,আমার নামে বিলসুতি বিলের খাস জমি লিজ রয়েছে। তবে খালিশপুর,সিন্দুরলং ও তার পার্শবত্তী গ্রামের লোকজনেরা বিল থেকে চুরি করে মাছ মেরে নিয়ে যাওয়ার কারনে থানায় একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। সাব লিজ গ্রহীতাদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো কেছু না বলে এড়িয়ে যান। তবে উপজেলা জলমহাল ইজারা কমিটির সভাপতি বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন,এ বিষয়ে বিলসুতি মৎস্যজীবীদের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ পাওয়ার পর তা সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।