পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার বালিয়াতলী খেয়াটি এখন সরকার নির্ধারিত চার্টের ভাড়া অনুযায়ী চলছে। কিছুদিন ধরে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিভিন্ন অনিয়ম ও অভিযোগ সংবাদ মাধ্যম ও সোস্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত হলে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এখন চার্টের নির্ধারিত ভাড়ায় পারাপার হচ্ছে যাত্রীরা। এতে স্বস্তি ফিরে এসেছে খেয়া পারাপারের সাধারন যাত্রীদের মাঝে। তবে, বর্তমান দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি ও সময়ের সাথে তালমিলিয়ে চলতে কয়েক বছর আগে নির্ধারন করা চার্টের ভাড়া বৃদ্ধিকরনসহ ভাড়ার তালিকা পরিবর্তনের জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করছেন খেয়া ইজারাদার।
জানা যায়, উপজেলার বালিয়াতলী, লালুয়া, মিঠাগঞ্জ, ধুলাসার ও ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ এ খেয়া দিয়ে প্রতিদিন উপজেলা শহর কলাপাড়ায় যাতায়াত করে। সাগর কন্যা কুয়াকাটা যাওয়ার বিকল্প সড়ক হিসাবেও এ খেয়াঘাটের পরিচিতি রয়েছে। এপথ দিয়ে সাধারন যাত্রীদের যাতায়তের জন্য সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা রয়েছে। সে মূল্য তালিকার অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি গনমাধ্যম ও সোস্যাল মিডিয়ায় উঠে আসলে বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসে। প্রশাসনের তদারকি ও তোপের মুখে সরকার নির্ধারিত ভাড়াতেই চলছে বালিয়াতলীর খেয়া। ন্যায্য ভাড়ায় খেয়া পারাপার করায় সাধারন যাত্রীরা প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বালিয়াতলীর এক যাত্রী তুহিন জানান, আমি প্রতিদিন এ খেয়া দিয়ে কলাপাড়া শহরে যাতায়ত করি। আগে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করত তবে এখন ন্যায্য ভাড়া নেয়ায় আমরা অত্যানÍ খুশি। ধুলাসার হতে আগত যাত্রী আসমা ও আনোয়ারা বেগম বলেন, এখনতো ভাড়া ঠিকমত নিচ্ছে তবে এটা যেনো সবসময় বহাল থাকে আমরা এটা আশা করছি।
তবে, খেয়া পারাপারের বর্তমান মূল্য তালিকা পরিবর্তন না করলে অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্ভাবনা দেখছেন ইজারাদার কর্তৃপক্ষ। তাদের মতে, খেয়া পারাপারের বর্তমান মূল্য তালিকাটি ২০১৫-১৬ সালে করা হয়েছে। তখনকার সময়ে খেয়া পরিচালনা খরচ আর এখনকার খরচের মধ্যে অনেক ব্যবধান রয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে বালিয়াতলী খেয়া বাবদ ইজারাদারকে ভ্যাট ও আইডিসহ সরকারী কোষাগারে প্রায় ৯০ লক্ষ টাকা জমা দিতে হয়েছে। খেয়া পারাপারের জন্য ২ টি বোর্ড ও লোকবলসহ বছরে প্রায় ১ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা খরচ হয়। এসব মূলধন হিসাব করার পরে ব্যবসায়ের হিসাব কষতে হয় ইজারাদারকে। তদুপরি, করোনা প্রাদুর্ভাবের কারনে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষতির ঘানি টানতে হয়েছে। তাই, বর্তমান দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ও বাজার চাহিদার সাথে তালমিলিয়ে চলতে ভাড়ার তালিকাটি পরিবর্তন করা প্রয়োজন বলে তারা মনে করছেন।
ইজারাদারের পক্ষে বালিয়াতলী খেয়া পরিচালনাকারী মো. মুছা গাজী বলেন, আমরা এখন সরকার নির্ধারিত তালিকা অনুযায়ী ভাড়া আদায় করছি। কিন্তু বর্তামান বাজার মূল্যের সাথে মিল রেখে আমরা চলতে পারছি না। তাই, কর্তৃপক্ষ ভাড়ার তালিকাটি সংষ্কার করে আমাদের চলার মত ব্যবস্থা করে দিবেন বলে আমরা আশা করছি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কলাপাড়া সার্কেল আহম্মদ আলী বলেন, ভাড়া টাকা বেশী নেওয়ার অভিযোগ আসলে তাদেরকে সরকার নির্ধারিত ভাড়া নেওয়ার অনুরোধ করি। তদারকি থাকবে অতিরিক্ত ভাড়া নিলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে সরকার নির্ধারিত আইনে ব্যবস্থা নিবো।
এবিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, সরকার নির্ধারিত বর্তমান চার্টের ভাড়ার বিষয়টি জেনেই তারা খেয়া ইজারা নিয়েছে, তাই নির্ধারিত এ ভাড়াতেই তাদের লোক পারাপার করতে হবে। খেয়া পারাপারের ভাড়া বৃদ্ধি করার কোন পরিকল্পনা আপাতত আমাদের নেই। তবে, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা আসলে বিষয়টি বিবেচনা করা যাবে বলে তিনি জানান।