২০২০-২০২১ অর্থ বছরের প্রথম সভায় গত ৬ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর- চিলমারি উপজেলা সদরের সঙ্গে সংযোগকারি সড়কে তিস্তা নদীর উপর ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ (দ্বিতীয় সংশোধীত) প্রকল্প অনুমোদন দিলেও সেতু নির্মাণ নিয়ে শংকায় এলাকাবাসি। তিস্তা সেতু বাস্তবায়ন আন্দোলনের নেতা প্রবীণ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আ.ব.ম শরিওতুল্লাহ মাষ্টার জানান ২০০০ সাল থেকে তিস্তা সেতু বাস্তবায়ন আন্দোলন শুরু করি। ২০১২ সালে এসে তিস্তা সেতু নির্মাণ আলোর মুখ দেখতে শুরু করে। এরপর সাবেক প্রধান প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম প্রামানিকের সার্বিক সহযোগিতায় ২০১৪ সালে সেতু নির্মাণ কাজের সুচনা হয়। তিনি বলেন দীর্ঘদিনেও যখন সেতুর দৃশ্যমান কোন কাজ হয়নি তখন কি করে আশা করতে পারি ২০২৩ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হবে।
২০১৮ সালে সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল উপজেলার হরিপুর-চিলমারী তিস্তা সেতু নির্মাণসহ সংযোগ সড়কের কাজ। কিন্তু ভূমি মন্ত্রণালয়ের জটিলতার কারণে সংযোগ সড়কের ভুমি অধিগ্রহণ এবং সেতু নির্মাণের কাজ ঝুঁলে যায়। হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে সেতু নিয়ে স্বপ্ন দেখা দুই জেলার মানুষগুলো। স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ১৭২ নং নোটিশ উপস্থাপন করলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী জানান গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পাঁচপীর বাজার-চিলমারী সড়কে দীর্ঘ ১ হাজার ৪৯০ মিটার সেতু নির্মাণের জন্য ১৫৩ একর ভুমি অধিগ্রহনের সিদ্ধান্ত রয়েছে। সে স্থলে শুধুমাত্র কুড়িগ্রাম জেলার ২০ একর ভুমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। গাইবান্ধা জেলার ১৩৩ একর ভুমি এখন পযন্ত অধিগ্রহন সম্পন্ন হয়নি। ভুমি মন্ত্রনালয় কতৃক দীর্ঘ ৫ বছর যাবৎ গাইবান্ধা জেলার জন্য নির্ধারিত ১৩৩ একর ভুমি প্রশাসনিক অনুমতি জটিলতা ও উন্নয়ন সহযোগি সংস্থা ঝঋউ এর সন্মতি পাপ্তির দীর্ঘসুত্রিতার কারনে ভুমি অধিগ্রহণ ও সেতু নির্মাণ কাজ বিলম্ব হচ্ছে। হরিপুর সেতু সংলগ্ন এলাকা হতে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শহর পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বর্ন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি সেতুর সংযোগ সড়কে রুপান্তের কাজ এবং গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর ধাপেরহাট থেকে হরিপুর সেতু পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের কাজ অনেকটা এগিয়ে রয়েছে। ২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাইবান্ধার সার্কিট হাউজে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হরিপুরÑচিলমারি তিস্তা সেতুর ভিত্তি উদ্বোধন করেন ।
কুড়িগ্রামের চিলমারি, রাজীবপুর ও রৌমারী এবং গাইবান্ধা জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল হরিপুর চিলমারি তিস্তা সেতুর। ৭৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বরাদ্দে নির্মাণ করার হবে তিস্তা সেতু। এর মধ্যে ২৭৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় হবে। সড়ক নির্মাণে ব্যয় হবে ১০ কোটি ২৫ লাখ টাকা, নদী শাসনে ৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা এবং জমি অধিগ্রহণে ব্যয় হবে ৬ কোটি টাকা। সেতুটিতে পিলার থাকবে ৩০টি এর মধ্যে ২৮টি পিলার থাকবে নদীর ভিতরে অংশে এবং ২টি পিলার থাকবে বাহিরের অংশে। সেতুর উভয়পাশে^ নদী শাসন করা হবে ৩.১৫ কিলোমিটার করে। সেতুর উভয় পাশে^ সড়ক নির্মাণ করা হবে ৫৭. ৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে চিলমারি মাটিকাটা মোড় থেকে সেতু পর্যন্ত ৭.৩ কিলোমিটার এবং গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর ধাপেরহাট থেকে হরিপুর সেতু পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার। চিলমারী অংশে একসেস সড়ক সেতু থেকে কাশিম বাজার পর্যন্ত ৫.৩ কিলোমিটার। এবং গাইবান্ধা ধাপেরহাট থেকে হরিপুর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার। ঝুঁলে থাকা সেতু-সড়কের মাটির কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় আসন্ন বর্ষা মৌসুমে হরিপুর-সুন্দরগঞ্জ পর্যন্ত তিস্তা নদীতে সড়কের মাটি ধসে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আবুল মুনছুর জানান- তিস্তা সেতু যাবতীয় কার্যক্রম গাইবান্ধা নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় হতে পরিচালিত হচ্ছে। এ সংক্রান্ত কোন তথ্য আমাদের কার্যালয়ে নেই।