মহামারী করোনায় বন্ধ নেই কাস্টমস। নেই পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে কাস্টমস কর্মকর্তাদের। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনকালে এ পর্যন্ত প্রায় ২৫ জন কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবুও দেশপ্রেম আর দায়িত্ববোধ থেকে সরে আসেনি তারা। জাতির দুর্দিনে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। করোনায় আক্রান্ত ঢাকা কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ফয়সাল বিন আশিক। তার বাড়ি পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার ভবানীপুর গ্রামে। পিতার নাম আশেকে এলাহি সিদ্দীক।
মেধাবী এই কর্মকর্তা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনকালে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১২ দিন আগে। সেই থেকে তিনি বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মাতৃভূমির সেবা করতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হওয়ায় এ কর্মকর্তা গর্ববোধ করেন। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ফেসবুকে নিজের টাইমলাইনে তিনি লিখেছেন এ কথা।
অনলাইন অনাবিল সংবাদের পাঠকদের জন্যে তার কিছু অংশ তুলে ধরা হলো-
তিনি লিখেছেন, ‘আমি গর্বিত যে, এই ক্রান্তিকালে মাতৃভূমির সেবা করতে গিয়ে আমি ‘করোনা পজিটিভ’ হয়েছি। আজ করোনা সনাক্ত হবার ১০ম দিন। শুরু থেকে নিজেকে সবার থেকে আলাদা রেখেছি। আমার সান্নিধ্যে আসা সবাইকে নিজ উদ্যোগে সতর্ক করেছি। ঈদ কাটালাম একা একা ঢাকাতেই। যেদিন আমার নমুনা সংগ্রহ করা হয় সেদিন এবং তার আগেরদিনও আমি ডিউটি করেছি। করোনাকালীন লকডাউন জুড়েই আমি ও আমরা কখনো রেগুলার ও কখনো শিফট ভিত্তিতে ডিউটি করেছি। আমার সঙ্গে ডিউটি করা রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুর রহমান মৃধা স্যারও করোনা আক্রান্ত। হয়তো একই দিনে একই বাহকের দ্বারা আক্রান্ত হতে পারি।’
তিনি তার ফেসবুকে আরও তুলে ধরেন, ‘মানসিকভাবে শক্ত থাকাই এই রোগ থেকে সেরে ওঠার আসল ঔষধ। আমার কোনো প্রকার লক্ষণ ছাড়াই করোনা পজিটিভ আসে। আর সনাক্ত হবার পরেও বেশ কিছুদিন কোনো উপসর্গ ছিল না। পঞ্চম দিন থেকে গলা ব্যথা, হালকা কাশি দেখা দেয়। ড. মোহসিন স্যার এর তত্ত্বাবধান ও পরামর্শে গরম পানির ভাপ, সহনীয় গরম জলে গড়গড়া করা, প্রেসক্রাইবড ঔষধ সেবন, পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন সি এবং ডি গ্রহণ ইত্যাদির মাধ্যমে দিনগুলোকে অতিবাহিত করে চলেছি। শীঘ্রই হয়তো পুনরায় স্যাম্পল দেব নেগেটিভ হলো কিনা তা জানতে।’
তিনি লিখেছেন , ‘বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতসহ গুরুত্বপূর্ণ বন্ডেড প্রতিষ্ঠানের কাঁচামালের স্যাম্পল শুল্কায়নের দায়িত্ব থাকে আমাদের। এই কাজ বন্ধ রাখা সম্ভব নয়। তাই জরুরী অবস্থার অধীনে শিফট ডিউটির মাধ্যমে পুরোদমে কাজ চলেছে। গড়ে ৭০০-৮০০ পেপার সমাধান করতে হয় আমাদের সেকশনে। এই কাজটি যেমন গুরুত্ব যেমন অনেক, তেমনি এই কাজে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাও অনেক কঠিন। নিজেদের এই ঝুঁকিকে মেনে নিয়েই কাজ করতে আমরা স্বতঃস্ফুর্ত। কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অন্যান্য জরুরী সেবার মতোই বুক চিতিয়ে সেবা দিয়ে যাবে রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণার্থে।’
আরো লেখেন, ‘পাবনা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডাক্তার Zakaria Manik ভাই পরামর্শ দিয়েছেন Arsenic Album 30 (হোমিও) ঔষধটি সেবন করার। এতে আক্রান্ত ব্যক্তি দ্রুত সেরে ওঠেন। পুলিশ হাসপাতাল ইতোমধ্যেই হোমিও মেডিক্যাল ইউনিট খুলেছে আর পুলিশ হেডকোয়ার্টারও এ ব্যাপারে নির্দেশনা জারি করেছে। তাই আমিও এই ঔষধ ডাক্তারি পরামর্শ মোতাবেক সেবন করেছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে কল করে একজন চিকিৎসক পরামর্শ প্রদান করেছেন এবং বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়েছেন।’
সবার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘যারা রোগটাকে একটুও পাত্তা না দিয়ে ‘স্বাস্থ্যবিধি না মেনে’ ঘুড়ে বেড়ান, কিংবা উপসর্গ থাকার পরেও টেষ্ট করাচ্ছেন না তাদের বলব রোগটা মোটেও এতটা সহজ নয়। সপরিবারে আক্রান্ত হয়ে সবাইকে মারার জন্য এই রোগটা ভাল কার্যকরী হতে পারে, তাই সাবধান করছি। খুব জরুরী কাজ ছাড়া ঘরের বাইরেই যাওয়া যাবে না। আর যেতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মানুন। লক্ষণ দেখা দেয়া মাত্রই নিজেকে আলাদা করে ফেলুন।
তিনি আরও বলেন, ‘আর যারা সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন, আগে থেকেই পর্যাপ্ত ভিটামিন সি গ্রহণ করছেন, বাসায় ব্যায়াম করছেন, সতর্কতা হিসেবে গরম পানির ভাপ নিচ্ছেন, গড়গড়া করছেন, তাদের বলব, এই ভাল অভ্যাসগুলো চালিয়ে যান এবং খুব বেশি চিন্তিত হবেন না। আক্রান্ত হলেও আতঙ্কিত হবেন না।’
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘ আমার বাড়িওয়ালা চমৎকার একজন মানুষ, ভাল মানুষ। তিনি ও তার পরিবার আমার আইসোলেশন নিশ্চিত করতে মানসিক সাপোর্ট দেবার পাশাপাশি ঔষধপত্র ও কাঁচাবাজার এনে দিয়েও সহায়তা করেছেন। এমন মানসিকতা সত্যিই প্রশংসনীয়। মানবতা একেবারেই উঠে যায় নি।’
তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েকে ধন্যবাদ। এক বছর হতে চলেছে বয়স। ওকে আবার কোলে নেবার অদম্য ইচ্ছা আমাকে মানসিকভাবে শক্ত রেখেছে। ধন্যবাদ তাকে যে আড়ালে কাঁদলেও, হেসে হেসে কথা বলে আমাকে শক্তি জোগায়।’
তিনি আশা প্রকাশ করেন, ‘আল্লাহ তায়ালা সুস্থ করলে, ইনশাল্লাহ প্লাজমা ডোনেটের মাধ্যমে অপর আক্রান্তদের দ্রুত সুস্থ রাখায় অবদান রাখবো।’