বিশেষ প্রতিবেদক–করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সরকারের নির্দেশে সবধরনের মানুষ বাড়িতে অবস্থান করছেন। মহামারী কোভিড-১৯ এর কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে সাধারণ ছুটিতে জনজীবন বিপর্যস্ত। নিম্ন আয়ের মানুষেরা রয়েছেন সরকারি ত্রাণ সাহায্যের অপেক্ষায়। আশা করছেন তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসবেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
অথচ দেশের বেশিরভাগ সংসদ সদস্যই নেই নিজের সংসদীয় এলাকায়। আবার অনেকে এলাকায় থাকলেও খোঁজ রাখছেন না অসহায় মানুষের।
তবে নাটোরের একজন সংসদ সদস্য এক্ষেত্রে তৈরি করেছেন এক ‘ব্যতিক্রমী’ দৃষ্টান্ত। তিনি নাটোর-২সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল । এ আসনটি নাটোর সদর ও নলডাঙ্গা উপজেলা নিয়ে গঠিত।গত ২২ মার্চ, সাধারণ ছুটি ঘোষণার কয়েকদিন আগে তিনি ঢাকা থেকে এলাকায় আসেন আর তারপর থেকে এলাকাতেই আছেন।, দুই মাসের বেশি সময় ধরে নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করে যেভাবে মানুষের জন্য কাজ করছেন তা নজিরবিহীন ।করোনার ঝুঁকি নিয়ে অসহায়দের পাশে ছুটে যাচ্ছেন সাংসদ শিমুল ।
কেবলমাত্র সরকারি ত্রাণ সহায়তা বণ্টন নয়, নিজের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ত্রাণ, দুটি উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে ত্রাণ সহায়তা নিশ্চিত করা, স্থানীয় প্রশাসনকে পরামর্শ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণসহ নানা কাজে সরাসরি নিজেকে ব্যস্ত রাখছেন সারাদিন।
তারই ধারাবাহিক কাজের অংশ হিসেবে আজ (বৃহস্পতিবার) ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা সদরে একটি বাজারের আয়োজন করেন। যেখানে সবজি-মাছ-তেল-লবণ বিতরণ করা হয়। আর এ কর্মসূচিতে জড়িত করেছেন স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মীদের।
এমনকি দিন এনে দিন খাওয়া গরিব-অসহায় মানুষগুলো যখন বাধ্য হয়েই ঘরে থাকছেন, তখন ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ হয়ে গ্রামের পর গ্রাম ছুটে চলেছেন নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নাটোর সদর আসনের সাংসদ শফিকুল ইসলাম ।৮ মার্চ করোনার শুরু থেকে আজ অবধি তিনি দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তিনি । খাবার নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন নাটোরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ।
দেশের অনেক সংসদ সদস্যই নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন করোনার ভয়ে। এদের নিয়ে জনগণের মুখে মুখে সমালোচনার ঝড়ও উঠলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পর এলাকায় অবস্থান করা দলের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে জনগণের খোঁজ-খবর নেয়া এবং খাদ্যসামগ্রীর যোগান দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু করোনার শুরু আজ অবধি সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল যে ভূমিকা রেখে চলেছেন তা প্রশাংসার দাবী রাখে ।করোনার প্রাদুর্ভবের ফলে দরিদ্র মানুষগুলোর মুখ যখন আকাশপানে তাকিয়ে আছে তখন তাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে এসে বরাবরের মতোই নজর কেঁড়েছেন নাটোর-২ আসনের সরকারদলীয় এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল ।তিনি নিজের হাতে খাদ্যসামগ্রীর ব্যাগ বহন করে অভুক্ত, অসহায়, দরিদ্র, হতদরিদ্র মানুষগুলোর বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন। সরকারি অনুদান ছাড়া ৫০ হাজার পরিবারকে সম্পূর্ণ নিজের অর্থে এভাবেই খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছেন তিনি।
সাংসদ শিমুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই মানুষের বাড়ি বাড়ি খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছি। আমি চাইলে ঢাকায় হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে পারতাম। কিন্তু এই অভুক্ত মানুষগুলোকে রেখে আমি ঘরে থাকতে পারি না। নাটোরের মানুষের সেবায় আমার জীবন উৎস্বর্গ করেছি । তাদের খাবার দিতে গিয়ে যদি আমার সব সম্পদও বিক্রি করতে হয় আমি করবো তবুও কাউকে না খেয়ে মরতে দিবোনা ।
জনগণকে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন করতে নিজেই মাইক নিয়ে প্রচার প্রচারণা চালিয়েছেন সাংসদ। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম ও খাদ্য সামগ্রী নিয়ে নিম্নবিত্ত দরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি ।দলীয় নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকার দুটি উপজেলার দুটি পৌরসভা ও ১২ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় নিম্নবিত্ত, দিনমজুর, অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান ও মাস্ক বিতরণ করেন। এছাড়া তিনি করোনা ভাইরাসে আতঙ্কিত না হয়ে এটি প্রতিরোধে জনগণের সচেতনতা বাড়াতে লিফলেট বিতরণ করেন এবং নিজের গলায় রের্কডকৃত মাইকিং দিয়ে প্রচার চালিয়েছেন পুরো নির্বাচনী এলাকায় ।এমপি শিমুল বলেন, যে কোনো দুর্যোগ ও বিপদে আমি আমার সাধ্যমতো এলাকার সাধারণ দরিদ্র মানুষের পাশে সবসময় ছিলাম, বর্তমানেও আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব ইনশাআল্লাহ। তারই ধারবাহিকতায় আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে পর্যায়ক্রমে আমার দুটি উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে করোনায় কর্মহীন হয়ে ঘরে থাকা হত-দরিদ্র মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত থাকবে। আমার নাটোরে কোনো মানুষ অভুক্ত থাকতে পারবে না। তার নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন গোডাউনে কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবক টিমের মাধ্যমে এ খাবার সামগ্রী প্যাকেটিং ও বিতরণের কাজ চলমান রয়েছে। ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে না আসা পর্যন্ত এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন এমপি শিমুল ।
রহিদুল ইসলাম নামে একজন স্কুল শিক্ষক জানান, করোনা ভাইরাস নিয়ে জনগণকে সচেতন করতে নিজেই মাইক হাতে রাস্তায় নেমেছেন নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল। বৃষ্টিতে ভিজে তার নিজ আসনের নাটোর পৌর শহরের কানাইখালী বাষ্ট্যান্ডে দেখলাম হ্যান্ড মাইকের মাধ্যমে সচেতনতা মূলক বার্তা দিচ্ছেন। এ সময় তিনি প্রয়োজন ছাড়া নাগরিকদের বাজারে না আসা এবং বারবার হাত ধোয়ার কথা মনে করিয়ে দেন। এছাড়া বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে মানুষের কাছে ত্রাণ সামগ্রী দিতে দেখলাম । যা সত্যিই প্রশাংসার দাবী রাখে ।
শহরের বড়গাছা এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মতিন বলেন, ‘এমপি শুধুমাত্র সরকারি সাহায্য নিশ্চিত করছেন না, উনার ব্যক্তিগত খাত থেকেও প্রচুর ত্রাণ সহায়তা করছেন। অন্যরা যেখানে এমপিদের এলাকায়ই পাচ্ছেন না, সেখানে আমাদের এমপি প্রথম থেকেই এলাকাতেই আছেন আর দিনরাত কাজ করছেন।’নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছুটে চলেছেন মানুষের কাছে ।
কেবলমাত্র দরিদ্র জনগোষ্ঠী নয়, হিজরা, আদিবাসী, রিকশা ভ্যান,সিএনজি চালক, মটর শ্রমিক ,কুলি,হোটেল কর্মচারী,মসজথেকে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ যারা কাজের অভাবে সংকটে আছেন, তাদেরও সহযোগিতা করছেন এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল।
এছাড়াও যারা মধ্যবিত্ত এবং প্রবাসে আছেন তাদের দেশের বাড়িতে থাকা পরিবারের সদস্যদের সাহায্যে তিনি তার ব্যক্তিগত ফোন নাম্বারে কল করতে আহ্বান জানিয়েছেন। এখন পর্যন্ত অসংখ্য অসংখ্য মধ্যবিত্ত পরিবারকে মাসের বাজার পাঠিয়েছেন।
নাটোরের স্বাস্থ্য বিভাগকে দিয়েছেন করোনা কীট সহ স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা পোষাক । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাজের অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানোর কথা বলেছেন। শেখ হাসিনার আহবানে সাড়া দিয়ে দিনমজুর শ্রেণীপেশার প্রায় ৪শ জনের মাঝে ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে তিনি এ খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছেন। এছাড়া সকলকে বাড়িতে অবস্থান নিয়ে সুস্থ ও সর্তক থাকার আহব্বান করেছে
সরকার তাঁদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণসহ যথাসম্ভব সহযোগিতা করার চেষ্টা করছে। পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী দুস্থদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত থাকবে।
সাংসদ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা সবাই যার যার জায়গা থেকে কাজ করে যাচ্ছি। দুস্থ ও অসহায় মানুষদের জন্য মানবিক বিবেচনায় খাদ্যসামগ্রী বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করে চলমান রেখেছি । আগামীতেই থাকবে।
দুই মাসের বেশি সময় ধরে নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করে সরকারি খাদ্যসামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি আমার এবং পরিবারের পক্ষ থেকে সহায়তা করে যাচ্ছি।
ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন বেলু বলেন,দেশের ভয়াবহ করোনাভাইরাসের এই মুহুর্তেও সাধারণ মানুষের পাশে দুই মাস ধরে শিমুল (এমপি) বিরামহহীন ভাবে নাটোরে থেকে মানবিক কাজ করে চলেছেন। প্রতিনিয়ত ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করছেন প্রতিটি এলাকায়। তিনি নাটোরের সাধারণ গরীবের পাশে থেকে যেভাবে কাজ করছেন প্রতিনিয়ত তা দেখে দেশের সংসদ সদস্যদের শিক্ষা নেয়া উচিত।
গণমাধ্যম কর্মী সাব্বির হোসেন জানান,করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে অধিকাংশ সংসদ সদস্য যেখানে নির্বাচনী এলাকার জনগণ থেকে দূরে আছেন। সেখানে করোনা ভীতি উপেক্ষা করে জ ত্রাণ ও খাদ্যসহ নানা সহায়তা নিয়ে নির্বাচনী এলাকার জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন আছেন সংসদ সদস্য শিমুল ।মোবাইলে সমস্যার কথা জানালেই তাদের বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছেন খাদ্য সামগ্রী।করোনার কারণে কর্মহীন অনেক মানুষ প্রকাশ্যে সাহায্য চাইতে লজ্জা পায়। তাদের জন্য হটলাইন চালু করা হয়েছে। হটলাইনে যোগাযোগ করলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা রাতে তাদের বাড়িতে খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেট পৌঁছে দেয়।