সিরাজগঞ্জের তাড়াশে করোনা রোগীর সাথে গ্রামবাসীর অমানবিক আচরনের ঘটনা
ঘটেছে। করোনায় আক্রান্ত রোগীর নিজ জন্মস্থানে জায়গা না হলেও জায়গা হল
সিরাজগঞ্জ কোভিট-১৯ হাসপাতাল বাগবাটিতে। ঘটনাটি ঘটেছে.উপজেলার তালম
ইউনিয়নের চৌড়া গ্রামে।
জানা গেছে, করোনায় আক্রান্ত রাসেল আহমেদ (২৬)
চৌড়া গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে বগুড়ার শেরপুড়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে
ল্যাব সহকারি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ১২ মে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্বেচ্ছায় নমূনা দেয় সে। পরে ১৭ মে তার করোনা
পজেটিভ ধরা পড়ে। বিষয়টি মঙ্গলবার সকালে মুঠোফোনে বগুড়া সিভিল সার্জন ডা:
মো: গউসুল আজিম চৌধুরী তাড়াশ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা:
মো: জামাল মিয়া কে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর পরপরই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ,
উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনী তৎপর হয়ে ওঠে।
করোনায় আক্রান্ত রাসেল আহমেদ মোবাইল ফোনে জানান, সে শেরপুরে একটি ভাড়া মেসে থেকে চিকিৎসা নিলেও তার খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এবং কোন সাহায্যকারী না থাকায় মঙ্গলবার দুপুরে সে তার নিজ বাড়িতে এ্যাম্বুলেন্স যোগে রওনা দেয়। কিন্তু গ্রামবাসী তাকে গ্রামে ঢুকতে বাঁধা দেয়। এবং রীতিমতো লাঠিসোটা নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। নিরুপায় হয়ে সে প্রশাসনের সহায়তা চাইলে, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও তাড়াশ উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো:ওবায়দুল্লাহ, স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে তাড়াশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আইসোলেশনে রাখেন।
কিন্তু সেখানেও তার স্থান হয়নি । স্থানীয় চিকিৎসক সহ সাধারণ রোগীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে রায়গঞ্জ-তাড়াশ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা: মো: আব্দুল আজিজের সহায়তায় রাতে পূণরায় তাকে সিরাজগঞ্জ বাগবাটি কোভিট-১৯ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রাসেল আহমেদ মুঠে ফোনে সাংবাদিদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, এমনিতেই আমি মানসিকভাবে বিধস্ত। তার উপর গ্রামের মানুষের এ অমানবিক আচরণ আমাকে ব্যাপক হারে আঘাৎ করেছে।
তাড়াশ হাসপাতালের আইসোলেশনের বিষয়ে তিনি বলেন, নামেই আইসোলেশন। নোংরা বাথরুম, বেডে ধূলায় আস্তরণ। চিকিৎসা ও খাদ্য কোনটাই মেলেনি। সারাদিন গরমে জার্নিক্লান্ত হয়ে গোসল করাও সম্ভব হয়নি। তবে বিকেলে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইফ্ফাত জাহান তার জন্য খাদ্য পাঠালে তিনি খেতে পান।
তালম ইউনিয়নের ৪ নং ওর্য়াড আওয়ামীলীগের সভাপতি ও চৌড়া গ্রামের মো. গোঞ্জের আলী রাসেল কে গ্রামে ঢুকতে বাধা দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, যা করেছি ঠিকই করেছি। সরকারের তো অনেক হাসপাতাল আছে সেখানে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে গ্রামে ফিরে আসুক।
তাড়াশ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: জামাল মিয়া বলেন, তাড়াশে এই প্রথম দু’ ব্যক্তি করোনা পজেটিভ ধরা পরলো। ই-মেইলে তথ্য পাওয়ায় পরপরই আমরা ব্যবস্থা নিতে তৎপর হয়ে উঠি। দুজনের মধ্যে রাসেল আহমেদ কে রাতে, সিরাজগঞ্জ বাগবাটি কোভিট-১৯ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। অপর রোগী, উপজেলার কাস্তা গ্রামের মো: ফিরোজ আহমেদ (২৮) তার নিজ বাড়িতে হোম কোয়াইন্টিনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইফ্ফাত জাহান বলেন, এ ঘটনাটি আসলেই অমানবিক । নিজ গ্রামে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেওয়াটা তার অধিকার ছিল। আমরা উপজেলা প্রশাসন সব সময় করোনা আক্রান্ত রোগীর খোঁজ খবর নিচ্ছি। আল্লাহ যেন তাকে দ্রুত সুস্থতা দান করে।