করোনায় মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে শার্শার মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক সহ আটক-১১ ও পলাতক-১০

ইয়ানূর রহমান : করোনার প্রভাবে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির ৪০ দিনে করোনা সংক্রমণ রোধে শার্শা উপজেলার বিভিন্ন বাজার ও মোড়ে মোড়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চৌকি বসিয়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা স্বত্তেও, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে মাদক পাচারের গুটি কয়েক মাদক ব্যবসায়ী ধরা পড়া ও তারা কিভাবে এই নিরাপত্তা চৌকি পেরিয়ে সীমান্ত প্রবেশ করছে। তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যেখানে নিজ এলাকার এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে যেতে গেলেও, জবাবদিহিতা করতে হচ্ছে। সেখানে দূর-দূরান্ত থেকে প্রাইভেটকার কিংবা মোটরসাইকেল সহ বিভিন্ন যান ছুটিয়ে সীমান্ত থেকে মাদক পাচার করায় ও মাদক কারবারের গডফাদাররা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকায় প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যাচ্ছে প্রশাসনের নজরদারি ও তাদের টহলদারি।

স্থানীয় সীমান্তবাসীরা অভিযোগ করে বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধের অজুহাতে আমরা যেখানে প্রশাসনের নজরদারিতে বন্দী। সেখানে দূর-দূরান্ত থেকে গাড়ি হাঁকিয়ে, মাদক পাচার করতে আসা সত্যিই রহস্যজনক। আমরা গ্রাম থেকে গ্রামে গেলে কিংবা বাজারে ঔষধ অথবা সদাই-পাতি করতে গেলে প্রশাসনকে জবাবদিহিতা করতে হচ্ছে। কঠোর নজরদারিতে সীমান্তে গ্রামবাসীরা আসা যাওয়া করছে। মাদক ব্যবসায়ীরা সেখানে কি করে গাড়ি হাকিয়ে অবাধে যাতায়াত করছে। আমরা তো পাঁয়ে হেঁটে কোথাও যেতে ভয় পাচ্ছি। তারপরও সরকারি নির্দেশনা মেনে নিজের, নিজ পরিবারের তথা গোটা দেশের কথা ভেবে নিজ ঘরে গৃহবন্দী জীবন যাপন করছি। অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বাহির হচ্ছি না। করোনাতে নিজের ও পরিবারের সুরক্ষার কথা ভেবে। তাহলে আমাদের ঘরে থেকে লাভ কি? মাদক ব্যবসায়ীরাই তো সঙ্গে করে করোনা এনে সীমান্তের গ্রাম-গঞ্জে ছড়িয়ে দেবে।

কারণ ভারত করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। সে দেশের সরকার, আমাদের দেশের আগে, ভারতকে লকডাউন ঘোষণা করেছে। সেখানে পাচারকারীদের অবাধে যাতায়াত সীমান্তে করোনা ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে বলে তারা মন্তব্য করেন। প্রশাসনের কাছে কিছু মাদক ব্যবসায়ী আটক হওয়ায়, তারা প্রশাসনকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, প্রশাসন যদি আর একটু সজাগ দৃষ্টিতে কঠোর নজরদারিতে এসব মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় এবং কঠোর হস্তে দমন করে। তাহলে এসব মাদক ব্যবসায়ীরা ভবিষ্যতে সীমান্ত এলাকায় ঢুকতে আর সাহস পাবে না।

ফিরে দেখা, গত ০২ মে শার্শা কায়বা সীমান্ত থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৪৪৮ বোতল ফেনসিডিল ও একটি প্রাইভেটকার উদ্ধার করে ২১ বিজিবি।

০২ মে বেনাপোল পোর্ট থানার বারোপোতা শিবনাথপুর গ্রাম ৫শ’ গ্রাম গাঁজা সহ মহিদুল ইসলামকে আটক করে পোর্ট থানা পুলিশ।

০১ মে শার্শার পাকশিয়া থেকে ৩৬ বোতল ফেনসিডিল ও ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৪শ’ টাকা সহ শফিকুল ইসলাম নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে ৪৯ বিজিবি। আর এঘটনায় ফুলসদ্দিন নামে অপর এক মাদক ব্যবসায়ী পলাতক রয়েছে।

০১ মে বেনাপোল ভবেরবেড় গ্রাম থেকে ৭৫ পিস ইয়াবাসহ আলেয়া খাতুন নামে এক নারী মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে পুলিশ।

২০ এপ্রিল নজরুল ইসলাম সুমন নামে বরিশাল সরকারী মডেল স্কুল এন্ড কলেজের এক সহকারী শিক্ষককে বেনাপোল পোর্ট থানার শিকড়ী বটতলা থেকে ৮২ বোতল ফেনসিডিল ও একটি মোটরসাইকেল সহ আটক করে বেনাপোল বিজিবি কোম্পানী সদরের সদস্যরা। আর এঘটনায় তার সহযোগীরা অপর ৫ সহযোগী আইনজীবি আলম রশীদ লিখন, ডাক্তর মিঠু, ব্যাংকার ডোনা, ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন বুলেট ও মনির হোসেন পলাতক রয়েছে।

১৯ এপ্রিল বেনাপোল পোর্ট থানার ভবারবেড় গ্রাম থেকে ৫০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট সহ হাফিজা খাতুন নামে এক নারী মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে পোর্ট থানা পুলিশ। এসময় সেলিম নামে তার এক সহযোগী এসময় পালিয়ে যায়।

১৩ এপ্রিল বেনাপোল পোর্ট থানাধীন খড়িডাঙ্গা গ্রাম থেকে ৭০ বোতল ফেনসিডিল সহ লিটন ও মিকাইলকে আটক করে পোর্ট থানা পুলিশ।

১২ এপ্রিল শার্শা বাগআঁচড়া গালর্স স্কুলের সামনে থেকে ৬০ বোতল ফেনসিডিল ও একটি পালসার মোটর সাইকেলসহ রনি বাবু নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে বাগআঁচড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ। এসময় রজব আলী নামে অপর এক পাচারকারী পালিয়ে যায়।

১০ এপ্রিল বেনাপোল পোর্ট থানার সাদিপুর সীমান্ত থেকে ৮৭ বোতল ফেনসিডিল সহ সাগর নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে ৪৯ বিজিবি।

১০ এপ্রিল শার্শার গোগা সীমান্ত থেকে একটি পালসার মোটরসাইকেলের তেলের ট্যাংকির মধ্যে থেকে ৪৯ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে বিজিবি। আর এঘটনায় শামীম হোসেন নামে ও মাহাবুব নামে দুইজনকে পলাতক আসামি করা হয়।

০২ এপ্রিল বেনাপোল পোর্ট থানাধীন কৃষ্ণপুর গ্রাম থেকে ১১ বোতল ফেনসিডিল ও একটি পালসার মোটরসাইকেল সহ সাইদুর রহমান শাওন ইউসুফ আলীকে আটক করে পোর্ট থানা পুলিশ।

২৩ মার্চ বেনাপোল পোর্ট থানাধীন বাহাদুরপুর গ্রাম থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৪৮ কেজি গাঁজা ও ১০০ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করে বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ।

অভিযোগ উঠেছে, উত্তর ও দক্ষিন শার্শার কয়েকটি পয়েন্টে বর্তমানে মাদক হাট বসছে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কিছু অসাধু ব্যক্তির সহযোগীতায় মাদকের কারবার চলছে।