করোনাভাইরাসের আক্রান্তের তালিকায় যুক্ত হয়েছেন নওগাঁর এক জনপ্রতিনিধি। তিনি ক্ষমতাশীন আওয়ামীলীগের নওগাঁ-২ আসনের সাংসদ। এছাড়া তিনি দশম জাতীয় সংসদের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। বর্তমানে তিনি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। ঘটনার পর তার নির্বাচনী এলাকায় নেতাকর্মীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে সুস্থতা কামনায় জনপ্রতিনিধসহ এলাকাবাসীরা দোয়া করছেন।
জানাগেছে, গত ২১ এপ্রিল ওই জনপ্রতিনিধি নওগাঁয় আসেন। নওগাঁয় আসলেও তিনি শহরের ডাকবাংলোতে রাত্রী যাপন করতেন এবং দিনে তার নির্বাচনি এলাকায় যান।
প্রায় এক সপ্তাহ তিনি তার নির্বাচনি এলাকা নওগাঁ-২ (ধামইরহাট ও পত্নীতলা) উপজেলায় ছিলেন। যেখানে করোনাভাইরাসে কর্মহীন হয়ে পড়া অসহায়দের ত্রাণ দিয়ে সহযোগিতা করাসহ নেতাকর্মীদের সাথে মিশেছেন।
এরপর গত মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) তিনি নিজ নির্বাচনী এলাকা থেকে ঢাকায় যান এবং সরকারি ন্যাম ভবনে (সংসদ সদস্য ভবন) ওঠেন। এরপর তার শরীরে জ্বর দেখা দেয় এবং সাথে হালকা কাশি হচ্ছিল। তখন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করানো হয়।
শুক্রবার বিকেল ৫টায় আইইডিসিআর থেকে রিপোর্ট পাঠানো হয় যেখানে করোনাভাইরাস পজেটিভ আসে বলে জানানো হয়। এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো সংসদ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
এমপির গাড়ি চালক রফিকুল ইসলাম রঞ্জু বলেন, গত ২১ এপ্রিল আমরা নওগাঁয় গিয়েছিলাম। এরপর গত মঙ্গলবার (২৮এপ্রিল) নিজ নির্বাচনী এলাকা থেকে ঢাকায় আসি। ঢাকায় আসার পর থেকে স্যারের জ্বর ও কাশি হচ্ছিল। এরপর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। পরে শুনলাম স্যারের করোনা পজেটিভ। এখন অনেকটা ভাল।
ধামইরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক সরকার বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সময় এলাকার মানুষকে সহযোগীতার জন্য তিনি নওগাঁতে আসছিলেন। এমপির সাথে ত্রান বিতরণে কয়েকটি জায়গায় অংশ নিয়েছিলাম। হাতে হাত মিলিয়ে সালাম বিনিময় করতাম না এবং দুরুত্ব বজায় রেখে বসতাম বা চলাচল করতাম। কিন্তু তারপর মনের ভিতর ভয় কাজ করছে। যেহেতু এমপির সাথে আমরা অনেকেই ছিলাম।’
ধামইরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলদার হোসেন বলেন, তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন। এছাড়া তার বড় কোন ধরনের অসুখ ছিলনা। শুক্রবার (১ মে) রাতে জানতে পেরেছি তিনি করোনায় আক্রান্ত। যেহেতু তিনি তার নির্বাচনি এলাকায় কয়েকদিন ছিলেন। আমরা তার সাথে মিশেছি ও ত্রান দেয়ার কাজে অংশ নিয়েছিলাম। যেহেতু এখনো আমাদের কোন উপসর্গ দেখা যায়নি। তারপরও আমরা নিজ থেকে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছি।
তিনি বলেন, শনিবার (২মে) সকালে এমপি’র সাথে কথা হয়েছে। এলাকা থেকে এমপির কাছে অনেক ফোন যাচ্ছে। তিনি এলাকাবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য নিষেধ করেছেন। তার জন্য দোয়া চেয়েছেন।
ধামইরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) গনপতি রায় বলেন, উপজেলা প্রশাসন এবং নেতাকর্মীসহ যারা এমপি স্যারের সাথে আশপাশে ছিলেন তাদের সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যদি কোন সমস্যা দেখা দেয় তাহলে নমুনা সংগ্রহ করা হবে।
উল্লেখ্য, ৬৫ বছর বয়সি বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে আসা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র তিনি। নওগাঁ-২ আসন থেকে ১৯৯১ সালে তিনি প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর একটানা নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছেন। বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়।