রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলা, বাঙালি ও বাংলাদেশ। তিনি স্বাধীনতার মহান স্থপতি, সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। এ বছর স্বাধীনতার সেই অগ্নিপুরুষের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপিত হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ক্ষণগণনা শুরু হয়ে গেছে। আগামী ১৭ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের ঠিক ৮দিন আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের কার্যক্রম শুরু হবে। চলবে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত।’
সোমবার গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাকে জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বাংলাদেশ স্কাউটস আয়োজিত নবম জাতীয় কাব ক্যাম্পুরির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ও চীফ স্কাউট মো. আব্দুল হামিদ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘গোটা দেশবাসী এবং প্রবাসী বাংলাদেশিরা গভীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে তাদের প্রিয় নেতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের জন্য। ঠিক এমনি সময়ে ক্যাম্পুরি অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যা সকলের নিকট স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে সোনার বাংলায় পরিণত করতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। আমাদের তরুণ প্রজন্ম, যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, বঙ্গবন্ধুকে দেখেনি, তারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করবে।’
রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, ‘রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তি ছিল আমাদের স্বাধীনতার লক্ষ্য। জাতির পিতা সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামো পুনর্গঠনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাসহ তার পরিবারের আপনজনদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ফলে দেশে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রা থমকে দাঁড়ায়। উত্থান ঘটে স্বৈরশাসন ও অগণতান্ত্রিক সরকারের। দেশে আজ মুক্তিযুদ্ধের পতাকাবাহী গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজকে পরিপূর্ণতা দানের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ভিশন ২০২১’, ‘ভিশন ২০৪১’ এবং শতবর্ষ মেয়াদি ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ গ্রহণ করেছেন। জাতিসংঘ ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ২০৩০’ অর্জনসহ ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করা এসব পরিকল্পনার উদ্দেশ্য। তবে উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে জনগণকে ইতিবাচক, আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে উন্নয়ন যাত্রায় সামিল হতে হবে। স্কাউটিং কার্যক্রম পারে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আধুনিক, প্রগতিশীল, সৃজনশীল হিসেবে গড়ে তুলতে এবং সমাজকে এগিয়ে নিতে।’
রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, ‘স্কাউটিং একজন শিক্ষার্থীকে লেখাপড়ার পাশাপাশি সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হাতে কলমে শিক্ষা দেয়। স্কাউটিং দেশসেবা ও মানবিক কল্যাণে কাজে লাগাতে হবে। স্কাউটিং এর শিক্ষা ব্যক্তি, পরিবার ও সামাজিক জীবনে প্রতিফলিত করা গেলে জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। জীবনে বড় হতে হলে কঠোর পরিশ্রম আর অনুশীলনের বিকল্প নেই। আমি আশা করি নবম জাতীয় ক্যাব ক্যাম্পুরিতে অংশগ্রহণকারী স্কাউটসগণ নিজেদের উন্নয়নের পাশাপাশি পরোপকারী স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে গড়ে তুলবে। তাহলেই তোমরা সমাজের কাছ থেকে আরো স্নেহ-ভালবাসা পাবে এবং অন্যরা তোমাদেরকে অনুসরণ কওে স্কাউটিং এ উৎসাহিত হবে। স্কাউট জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন ‘‘প্রেসিডেন্টস স্কাউট অ্যাওয়ার্ড” অর্জন করেছ। অ্যাওয়ার্ড অর্জনকারী সকলকে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি। আগামী দিনের সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণে তোমরা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাবে এটাই সকলের প্রত্যাশা। আমি তোমাদের সার্বিক কল্যাণ কামনা করি।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ স্কাউট সদস্য সংখ্যা বর্তমানে ১৯ লাখ থেকে ২১ লক্ষে উন্নীত করার উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। ২০২১ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে ৩২ তম এপিআর স্কাউট জাম্বুরি। আমি জেনে আরো আনন্দিত যে, স্কাউট সদস্য সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধিও জন্য বাংলাদেশ বিশ্ব স্কাউট সংস্থার ‘টপ ফাইভ কান্ট্রি অ্যাওয়ার্ড’ এবং ‘এপিআর সাসটেনেবল গ্রোথ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। এজন্য আমি সকল পর্যায়ের স্কাউট ও স্কাউট নেতৃবৃন্দকে অভিনন্দন জানাই। আগামী দিনে তোমরাই বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে। তোমরাই জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত, ধর্মনিরপেক্ষ উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে। সবসময় মনে রাখতে হবে অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এ দেশ আমাদের। এ জন্য তোমাদের যোগ্য ও দক্ষ হয়ে গড়ে উঠতে হবে। সমাজসেবা সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে তোমরা সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভবন ধ্বস ও ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্ধার কাজে তথা জাতীয় দুর্যোগে স্কাউটদের সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে।’
বাংলাদেশ স্কাউটসের সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসাবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি।
এর আগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ও চীফ স্কাউট ২০১৮ সালের স্কাউটদের সর্ব্বোচ্চ অ্যাওয়ার্ড ‘প্রেসিডেন্ট’স স্কাউট অ্যাওয়ার্ড’ এবং রোভার স্কাউটদেও সর্ব্বোচ্চ অ্যাওয়ার্ড ‘প্রেসিডেন্ট’স রোভার স্কাউট অ্যাওয়ার্ড’ অর্জনকারীদের মধ্যে অ্যাওয়ার্ড বিতরণ করেন।