পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের রাঙামাটি সদর রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেনের তত্বাবধানে একের পর এক চোরাই সেগুন কাঠ জব্দ হওয়ায় যেন বন ও পরিবেশ রক্ষা আর বনজ সম্পদ রক্ষায় রাঙামাটি বন বিভাগের সরকারি রাজস্ব খাত এক নব জাগরণ উন্মোচন হয়। তিনি যোগদানের পর থেকে গত সাড়ে ৫ মাসে প্রায় ৫৪৮৪.২৯ ঘনফুট মহামূল্যবান সেগুন ও গোদা গাছ উদ্ধার করে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিনত হয়েছেন এ বন কর্মকর্তা। এরই ধারাবাহিকতায় ২৩ ডিসেম্বর রবিবার সকালে রাঙামাটি রাজবাড়ি কাঠের ডিপো এলাকায় ( রাজবাড়ি স-মিল) রেঞ্জার মো. মোশারফ হোসেনের তত্বাবধানে অভিযান চালিয়ে ৩৫ টুকরা সেগুনের গোল কাঠ উদ্ধার করে রাঙামাটি বন বিভাগ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে সদর রেঞ্জ।
এসময় রাজবাড়ি ঘাট কাঠের ডিপো এলাকায় তল্লাশী চালিয়ে ৩৫ টুকরা মালিক বিহীন গোল সেগুন কাঠের টুকরা ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় দেখতে পান কিন্তু আশপাশ এলাকায় তল্লাশী এবং অনুসন্ধান চালিয়েও কাঠের টুকরা গুলির কোন দাবিদার বা প্রকৃত মালিক এবং কাঠের টুকরাগুলির কোন বৈধ কাগজপত্র না পাওয়ায় ১৯২৭ বন আইনের ৫২ ধারায় কাঠগুলি পরিমাপ করে জব্দ করে স্থানীয় ব্যাবস্থাপনায় রেঞ্জ সদরের হেফাজতে নেয়। যার ইউ.ডি. ও.আর আসামী বিহীন মামলা নং ১৯/ রাঙামাটি অব ২০১৯-২০। চোরাই কাঠ উদ্ধার অভিযানে সদর রেঞ্জের ফরেষ্টার চন্দ্রশেখর দাস, ফরেষ্টার কিসলু চাকমা, মোনাব্বর হোসেন, মনির হোসেন ও রবিউল ইসলাম অংশ নেন। উদ্ধারকৃত ৩৫ টুকরা কাঠের পরিমান ৩৮৩.৭৭ ঘনফুট এবং আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার অধিক। একশত বছরের বয়স্ক এই সেগুন কাঠগুলি উদ্ধার পুরো রাঙামাটিকে নাড়া দিয়েছে। উদ্ধারকৃত ১০ ফুট বেড় এর বড় আকারের সেগুন কাঠ চাকুরী জীবনেও দেখেননি বলে মন্তব্য করেছেন অনেক বন কর্মকর্তা।
এবিষয়ে রাঙামাটি দক্ষিণ বন বিভাগের সদর রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন, ধারনা করা হচ্ছে জুরাছড়ি বা কাপ্তাই রিজার্ভ ফরেষ্ট থেকে এই কাঠগুলি চিড়াই করে চোরা চালানের উদ্দেশ্যে রাজবাড়িস্থ স-মিলের কাছে আনা হয়েছে। যা পরবর্তীতে কৌশলে লুকিয়ে রাঙামাটি জেলার বাহিরে পাচার করা উদ্দেশ্যে মজুদ করা হয়েছে। এত বড় আকারের গাছ কোন গাড়ি বহন করবেনা তাই চিড়াই করে পাচার করা ছাড়া কোন উপায় নাই। আর ব্যক্তি মালিকানাধীন বাগানে এত বড় বেড় এর গাছ আদৌ নাই এ ধরনের সেগুন গাছ একমাত্র বন বিভাগের রিজার্ভ ফরেষ্টে রয়েছে। এমন ১০ ফুট বেড় এর বড় আকারের সেগুন কাঠ রাঙামাটিতে প্রতি ঘনফুট সাড়ে ৪ হাজার টাকা আর ঢাকায় ৮ হাজার টাকা বিক্রি হয়। উদ্ধারকৃত সেগুন কাঠগুলি রাজবাড়ি স-মিল এলাকা থেকে বনরুপা বন বিভাগের হেফাজতে আনতে ৪৮জন শ্রমিক কাজ করেছিল। যা রাঙামাটি বন বিভাগের জন্য নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করল, বলেন এই চৌকস বন কর্মকর্তা।
এই অপরাধটি ১৯২৭ সালের বন আইনের (যাহা ২০০০ সনে সংশোধিত) ও পার্বত্য চট্টগ্রাম ট্রানজিট রুলস ১৯৭৩ এর ৫ নং বিধিমতে সংঘটিত এবং ৯ নং বিধিমতে বিচার্য। তিনি আরো বলেন, এসব সেগুন কাঠের মজুতদার বা চোরাই কাঠ ব্যবসায়ী আসামীদের ধরতে আমরা বিভিন্ন স্থানে তল্লাশী অব্যাহত রেখেছি। বনজ সম্পদ এবং সরকারি রাজস্ব রক্ষায় কাঠের চোরা কারবারিদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান রাঙামাটি সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে রাঙামাটি কাঠব্যবসায়ী সমিতির সাবেক দপ্তর সম্পাদক বর্তমান কমিটির সদস্য আব্দুল মোনাফ সওদাগর সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন, কাপ্তাই থেকে আলিক্ষং পর্যন্ত প্রায় ৬০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ইংরেজ শাসন আমলে এবং আইয়ুব খান সরকারের আমলে হেলিকপ্টার থেকে সেগুনের বীজ ছিটিয়ে পাহাড়ি অঞ্চলে রিজার্ভ ফরেষ্ট সৃষ্টি করা হয়, যা এখন মাদার ট্রি গাছ হিসাবে রক্ষা করা হচ্ছে। এসব গাছ কেটে একটি পক্ষ পার্বত্য অঞ্চলের সেগুনের প্রকৃত বীজ বিলুপ্ত করে ফেলছে।
মাদার ট্রি বা মা গাছ রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগের আরো নজরদারি জোড়দার করা প্রয়োজন বলে মত দেন এই ব্যবসায়ী।
উল্লেখ্য, গত ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সালে মো. মোশারফ হোসেন পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের সদর রেঞ্জের ২৮তম রেঞ্জ কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর থেকে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে যেমন সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন তেমনি ২০১৯-২০২০ চলতি অর্থ বছরের সাড়ে ৫ মাসে ২০টি মামলা ও ৫৪৮৪.২৯ ঘনফুট সেগুন ও গোদা গাছ আটক করতে সক্ষম হয়েছেন। যার আনুমানিক বাজার দর প্রায় ৬৫-৭০ লক্ষ টাকার অধিক।