বিয়ের ৫ মাস পর সুন্দরী বউকে রেখে স্বামী বিদেশে চলে যায়। স্বামীর অবর্তমানে কুনজরে পড়ে এলাকার দুষ্টচক্রের। প্রথমদিকে দুষ্টচক্রের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করেও শেষে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেননি। করুন মৃত্যুই হয়েছে তার শেষ পরিনতি। অপরদিকে প্রায় ৬ বছর বিদেশ ভূমিতে থেকেও এখন নিঃশ্ব হয়ে তিনটি মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরছে স্বামী। ঘটনাটি পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলার ডেমরা ইউনিয়নের বড় গোলকাটা গ্রামের। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় ২০১৩ সালে ১৩ আগষ্ট গোলাকাটা গ্রামের মৃত আজাহার আলীর ছেলে সফর আলীর সাথে গোপালনগর গ্রামের জাহিদুল ইসলাম বাবুর ১৩ বছর বয়সী মেয়ে আশা খাতুনের বিয়ে হয়। বিয়ের ৫ মাস পর সফর আলী মালয়েশিয়া চলে যায়। স্বামীর অনুপস্থিতিতে তাদের বাড়ীর পাশে ইউনুস আলী ছেলে খোকন ও হোসেন আলী দুই সহোদর ভাইয়ের কুনজরে পড়ে আশা। পারিবারিক সূত্রধরে স্বামীর অনুপস্থিতিতে মেলামেশা গভীর থেকে গভীরে পৌছাঁতে থাকে। এনিয়ে দুইপরিবারের মধ্যে ঝামেলা সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে এলাকার লোকজন মিমাংশা করে দেন। জাফর আলীর বৃৃদ্ধা মা আশার চালচলন অস্বাভাবিক হতে থাকে বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, বাপের বাড়ীতে যাওয়ার কথা বলে সে বিভিন্ন জায়গাতে চলে যায় বলে আমার কানে আসে। রাতে অন্য মানুষের শব্দ শুনে ঘরে গেলে সে আমাকে ধমকিয়ে তাড়িয়ে দিত। গত ২ সেপ্টম্বর রাত ১ টার সময় আশার খাতুনের সাথে হোসেন আলীর অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত হলে আশার শ্বাশুরী বাড়ীর লোকজনকে ডেকে আনেন। এবং হোসেন আলীকে ঘরে রেখে দরজায় তালা লাগিয়ে দেয়। পরবর্তীতে হোসেন আলীর লোকজন এসে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। আশা লজ্জা ও ভয়ে রাতেই বিষ পান করে বলে বাড়ী লোকজন এবং এলাবাসী জানায়। পরিবারের লোকজন বিষয়টি বুঝতে পেরে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হলে আশাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে ৭ সেপ্টম্বর তার মৃত্যু হয়। এব্যাপারে রাজশাহী থানায় একটি ইউডি মামলা হয়। লাশের সুরতহাল রির্পোটেও মৃত্যু কারণ আত্মহত্যা লেখা হয়েছে। আশার মারা যাবার দিন তার স্বামী সফর আলী বিদেশ থেকে ফিরে আাসে এবং আশার সাথে কথোপকথোন হয়। আশা মারা যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কাউকে বলেননি তাকে বিষ খাওয়ানো হয়েছে। আশা মারা যাবার পর তার বাবা থানায় হত্যা মামলা দিতে গেলে ওসি মামলা গ্রহণ করেননি। বিষয়টি মিমাংসা করার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যন গোলাম হোসেন গোলাপ দায়িত্ব নিয়ে এলাকার দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের নিয়ে একটি আপোষনামা করে দেন। আপোষনামায় পরকীয়ায় জড়িত হোসেন আলীকে ৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা আশার পিতা জাহিদুল ইসলাম বাবুকে দেওয়া হয়। অবশিষ্ট্য ২ লক্ষ টাকা আশার মেয়ের নামে ব্যাংকে রাখার সিধান্ত হয়। বৈঠকে উপস্তিত সকলেই স্ট্যাম্পে সই করে সভার কাজ সমাপ্ত করেন। আশার বাবা ১০ দিন পর আপোষ মিমাংশা অস্বীকার করে আবারও থানায় মামলা দিতে যায়। থানা মামলা না নিলে গত ৩১ অক্টোবর তিনি জামাই সফর আলীসহ ৫জনের নামে আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এদিকে আশার স্বামী সফর আলী শ্বশুর জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে চুরি ও ডাকাতির মামলা ফরিদপুর থানা পুলিশ তা গ্রহণ করে জাহিদুলকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। এক মাস হাজত শেষে ছাড়া পেয়ে আবারও মেয়ে হত্যার বিচারের দাবিতে স্বোচ্চার হয়ে উঠেন বাবু। গত ২ ডিসেম্বর আশা হত্যা বিচারের দাবিতে গোপালনগরে একটি মানব বন্ধন কর্মসুচি পালন করে । আশার স্বামী সফর আলী বলেন, বিয়ের পর থেকে আমার শ্বাশুরীর নামে বিদেশ থেকে টাকা পাঠাতাম। গত ৯ মাসে শ্বশুর আমাকে গোপালনগর জায়গা কিনে দেওয়ার কথা বলে ৮ লক্ষ ৬০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আমার স্ত্রী আশা খাতুন হোসেন আলীকে স্বামী বানিয়ে আমার নামে বুরে্য বাংলাদেশ থেকে মৃত্যুর ১০ মাস পূর্বে ৫০ হাজার টাকা লোন তুলে দেয়। শ্বশুর আমার বিরদ্ধে হত্যা মামলা সহ তিনটি মামলা দিয়েছেন। আমার সঞ্চয় বলতে আর কিছুই নেই। এখন আমি পথের ফকির। জাহিদুল ইসলাম বাবু বলেন, আমার মেয়ের সাথে সাইফুল ইসলামে অবৈধ সর্ম্পক দেখে ফেলায় মেয়ের মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে হত্যা করেছে। বাবু বলেন, থানায় ওসি মামলা না নিয়ে ওল্টা আমার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠায়। জামাইয়ের টাকা পাওনা বিষয়ে বলেন আমি জামাইয়ের কাছে ৪ লক্ষ টাকা পাবো। আমি মেয়ে হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। এ প্রসঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন গোলাপ বলেন, জাহিদুল ইসলাম বাবু এলাকায় একজন টাউট বলে পরিচিত । এবিষয়ে অনেক টাকা আদায় করেছে। আরও টাকা আদায় করার জন্য তালবাহানা করছে। থানার ওসি তদন্ত জালাল উদ্দীন বলেন, আমি বিষয়টি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে দেখেছি, আশা আত্মহত্যা করেছে। অফিসার ইনচার্জ এসএম আবুল কাশেম জানান, আত্মহত্যাকে হত্যা বলে চালিয়ে দেবার জন্য উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আশরাফুল কবির আমাকে চাপ দিচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছেন। দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। তিনি হিংসার বসবর্তী হয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, পরকীয়ার কারণে লজ্জায় মেয়েটি আত্মহত্যা করতে পারে। স্থানীয় ওয়ার্ডের মেম্বর মজিবর রহমান বলেন, মেয়েটির হোসেন আলীর সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। রাতে ধরা পরার পর লোক লজ্জার ভয়ে সে আতœহত্যা করে। তিনি বলেন, মেয়ের বাবার সাথে বসে স্ট্যাম্পে লিখিতভাবে আপোষ মিমাংসা করা হয়েছে। আরও টাকা আদায় করার জন্য বাবু তালবাহানা করছেন। একাধিক এলাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, হোসেন আলীর সাথে আশার পরকীয় সম্পর্ক ছিল। হোসেন আলীকে আশা বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে দোকান করে দিয়েছেন। লোক লজ্জার ভয়ে সে আত্মহত্যা করেছে।