গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নুরুন্নবী সরকার আবারও সুন্দরগঞ্জে বহাল। গতকাল রোববার সকালে পিআইও ফের সুন্দরগঞ্জ অফিসে কার্যক্রম শুরু করে। তাঁর বিরুদ্ধে যমুনা টিভিসহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রচার হওয়ায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর গত ২৮ সেপ্টেম্বর তাঁকে চট্টগ্রামের স্বন্দীপে বদলীর আদেশ দেয়। এনিয়ে পিআইও হাইকোটে রিট করে। যার নং-১৩০৫৭। গত ৩ ডিসেম্বর শুনানি শেষে ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও কেএম কামরুল কাদের পিআইও নুরন্নবী সরকারের বদলী আদেশ স্থগিত করে এবং বদলীর আদেশ প্রদানকারীর বিরুদ্ধে ৪ সপ্তাহের মধ্যে বদলীর আদেশের কারণ জানতে চায়।
এর আগে ঢাকা, গাইবান্ধা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ১২ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে রংপুর মেট্রোপলিটান ম্যাজিষ্ট্রেট কোতয়ালী আমলী আদালতে সুন্দরগঞ্জের পিআইও নুরুন্নবী সরকার বাদি হয়ে দুইটি মানহানির মামলা দায়ের করেন। একটি মামলায় যমুনা টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক ফাহিম আহম্মেদ, মফস্বল ডেক্স ইনচার্জ আহসানুল কবির আসিফ, গাইবান্ধা প্রতিনিধি জিল্লুর রহমান ও সহযোগি প্রতিনিধি মাহাবুর রহমান, চাঁদনী বাজার পত্রিকার সুন্দরগঞ্জ প্রতিনিধি আবু জায়েদ, জনসংকেত পত্রিকার সুন্দরগঞ্জ প্রতিনিধি রাশিদুল ইসলামকে আসামি করা হয়। আরেকটি মামলায় কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, বার্তা সম্পাদক খায়রুল বাসার শামীম, মফস্বল বার্তা সম্পাদক ছাদেক আহম্মেদ সজল, সুন্দরগঞ্জ প্রতিনিধি মামুন-উর-রশিদ, দৈনিক পরিবেশ পত্রিকার সুন্দরগঞ্জ প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম এবং ভোরের দর্পন পত্রিকার সুন্দরগঞ্জ প্রতিনিধি শামছুল হক। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক রংপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলে নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে যাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তাদের তদন্ত শুরু করেছে পিবিআই। ইতিমধ্যে সুন্দরগঞ্জ থানায় তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান পত্র দিয়েছে পিবিআই। ওসি আব্দুল্লাহিল জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়, গত ৭ সেপ্টেম্বর যমুনা টেলিভিশনে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা হয়। সংবাদে বলা হয়, সুন্দরগঞ্জের পিআইও নুরুন্নবী সরকারের বিরুদ্ধে টিআর কাবিখা ঘুষ গ্রহনের অভিযোগে দুদকে চারটি মামলা রয়েছে। মামলা থাকা সত্তে¡ও তিনি বহাল তবিয়তে আছেন। অভিযোগ সম্পর্কে বক্তব্য জানতে গিয়ে পিআইওর তোপের মুখে পড়েন যমুনার সাংবাদিক। এদিকে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৫২০ বান্ডিল ঢেউটিন বরাদ্দ পাওয়া যায়। এরমধ্যে ২০০ বান্ডিল আত্মসাতের অভিযোগে পিআইওর বিরুদ্ধে তদন্ত করে মন্ত্রণালয়। এসবের প্রমাণ পাওয়ায় মামলা করেন দুদক। এ ছাড়া চলতি বছরের জুন ক্লোজিংয়ে ১৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ না করেই ছয় কোটি টাকার বিল উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার কাছে দাখিল করেন। হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা বিল স্বাক্ষরে অপরাগতা জানালে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বিল স্বাক্ষর করান পিআইও নুরুন্নবী।
মামলার বিবরণে আরও উল্লেখ করা হয়, সুন্দরগঞ্জের পিআইও নুরুন্নবী সরকারের বিরুদ্ধে টিআর কাবিখা ঘুষ গ্রহনের চারটি মামলার কোন সত্যতা পায়নি দুদক। দুদক মামলাগুলো থেকে পিআইওকে অব্যাহতি দিয়েছে। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে মাত্র ১৫০ বান্ডিল ঢেউটিন বরাদ্দ পাওয়া যায়। যা তৎকালীন গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সাংসদ মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী বিতরণ করা হয়েছে। জুন ক্লোজিংয়ে ১৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে দুই কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। যার বেশিরভাগ কাজ শেষ হয়েছে কিছু কাজ চলমান রয়েছে।
মামলার বিবরণে আরও উল্লেখ করা হয়, পিআইওর বিরুদ্ধে এসব সংবাদ যমুনা টেলিভিশনে প্রচার করা হয়। একই সংবাদ কালের কণ্ঠ, জনসংকেত, চাঁদনী বাজার, দৈনিক পরিবেশ, ভোরের দর্পন পত্রিকায় পিআইওর বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের একাধিক প্রতিবেদন-সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। এসব সংবাদ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে সরবরাহকৃত তথ্যে এসব সংবাদ প্রচার-প্রকাশ করেন। এমন সংবাদ টিভি, বিভিন্ন পত্রিকা, অনলাইন ও ফেসবুকে প্রচারে পিআইওর নুরুন্নবীর মারাত্মক সম্মানহানি হয়েছে। এতে অপুরণীয় ক্ষতি হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তবে ক্ষতিপূরণ বাবদ কোন টাকা উল্লেখ বা দাবি করা হয়নি।
পিআইও নুরুন্নবী সরকার বলেন আমাকে অন্যায় ভাবে বদলী করা হয়েছিল। হাইকোট আমার বদলীর আদেশ স্থগিত করেছে। সে কারনে আমি আবারও কাজে যোগ দিয়েছি। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগগুলো তদন্ত করেন জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মতিনের গঠন করা তদন্ত কমিটি। কমিটি গত ১৪ অক্টোবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে যমুনা টিভিসহ কোন মিডিয়ায় প্রচারিত অভিযোগের সত্যতা পায়নি বলে উল্লেখ করা হয়। জেলা প্রশাসক এ প্রতিবেদন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দপ্তরে পাঠিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সোলেমান জানান পিআইও এর বহালের বিষয়টি আমি অফিসিয়ালভাবে জানি না। তবে লোক মুখে জেনেছি।