স্থায়ীভাবে ভিক্ষুক মুক্ত বাংলাদেশ গঠনে ও পুর্নবাসনে সহায়তা করতে ব্যক্তিক্রম উদ্যোগ গ্রহন করেছে নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ( ইউএনও)। ভিক্ষুক পুর্নবাসনে সদর উপজেলা পরিষদের সামনের বাজারে বুধবার দুুপুরে মান সম্মত মাংসের দোকান ‘আস্থা’ চালু করা হয়েছে। প্রধান অতিথি হিসেবে এটি উদ্ধোধন করেন নওগাঁ সদর আসনের সাংসদ ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন। দোকানের আয় থেকে উপজেলা সদরের শিকারপুর ইউনিয়নের ৪৯ জন ভিক্ষুককে স্থায়ীভাবে পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। যা জেলায় রোল মডেলে পরিনত হতে চলেছে। ব্যতিক্রম এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সচেতনরা।
ভিক্ষুক পুর্নবাসনে ‘আমার বাড়ি, আমার খামার প্রকল্পে’ সদর উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের ১১টি গ্রাম থেকে ৪৯ জন ভিক্ষুকদের নিয়ে একটি সমিতি গঠন করা হয়েছে। তাদের স্থায়ীভাবে পুর্নবাসন এবং বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের বাস্তবায়নে সদর উপজেলা পরিষদের সামনের বাজারে মান সম্মত মাংসের দোকান ‘আস্থা’ চালু করা হয়েছে। গত ২০ দিন আগে দোকানে মাংস বিক্রির কার্যক্রম শুরু হলেও বুধবার দুুপুরে আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু করা হয়েছে। যেখানে প্রতিদিন ১টি গরু ও ১টি ছাগল জবাই করা হচ্ছে।
যেখানে রয়েছে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ। পশু জবাইয়ের আগে পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। এছাড়া বাজারদর ও স্বাভাবিক হওয়ায় সকল শ্রেণী পেশার মানুষ মাংস কিনছেন। ইতোমধ্যে কয়েকটি খাবার হোটেল স্থানীয় ভাবে এ দোকান থেকে গোস্ত নেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তবে দোকানটি চালু করার কয়েকমাস আগে থেকে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের আইনশৃঙ্খলা সভায় আলোচনা এবং সকলকে মাংস কেনার জন্য অনুরোধ করা হয়। স্বাস্থ্য সম্মত এ দোকান চালু করার পর বেশ সাড়া পড়েছে।
শিকারপুর ইউনিয়নের বিলভবানিপুর গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ ময়না বলেন, গত তিন বছর আগে স্বামী আহাদ আলী অসুস্থতায় মারা গেছেন। কোন সন্তান নাই। থাকেন অন্যের জমিতে টিনের কুড়ো ঘরে। এরআগে স্বামীকে নিয়ে শহরে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। নদীতে মাছ শিকার করে তাদের জীবন চলত। স্বামী মারা যাওয়ার পর গ্রামে ফিরে যান। আয়ের কোন উৎস না থাকায় ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। সপ্তাহে ৩/৪দিন ভিক্ষা করেন। এতে করে ৩/৪ কেজি চাল ও ১০০-১৫০ টাকা পান। কখনো অসুস্থ হলে বাড়ি থেকে বের হতে পারেন না। ভিক্ষুক পুর্নবাসনের যে উদ্যোগ ইউএনও সাহেব নিয়েছে তাতে আমরা অনেক খুশি । আল্লাহ তাকে দীর্ঘজীবি করুক।
একই গ্রামের বিধবা মাজেদা বেগম বলেন, গত ৫ বছর আগে স্বামী মারা গেছেন। দুই ছেলে মাছ শিকার করে কষ্ট করে জীবন চলে। ছোট ছেলের মধ্যে থাকেন। ভিক্ষা করে কিছুটা সহযোগীতা করেন। ভিক্ষুক পুর্নবাসন তালিকায় তার নাম দিয়েছে। যদি পুর্নবাসন থেকে সহযোগীতা পায় তাহলে আর ভিক্ষা করব না। মানুষের কাছে হাত পাততে লজ্জা লাগে।
আমার বাড়ি, আমার খামার প্রকল্পের সমন্বয়কারী মনোয়ার হোসেন ও ফিল্ড সুপার ভাইজার রুজিনা আক্তার বলেন, ৪৯ জন ভিক্ষুক নিয়ে একটি সমিতি গঠন করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ২০০ টাকা করে নেয়া হয়েছে এবং সরকার দিয়েছেন ২০০ টাকা। মোট ৪০০ টাকা দিয়ে ভিক্ষুক ফান্ড গঠন করা হয়েছে। সঞ্চয়ের টাকা থেকে গরু ও ছাগল কিনে দোকান থেকে মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। লভ্যাংশ থেকে ভিক্ষুকদের পুর্নবাসন করা হবে।
নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো: আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, শহরে কোয়ালিটি সম্পূর্ন কোন গোস্তের দোকান না থাকায় যত্রতত্র বিক্রি করা হয়ে থাকে। কিভাবে মানুষদের মানসম্পন্ন গোস্ত সরবরাহ এবং ভিক্ষুকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও পুর্নবাসন করা যায় এ ধারনা থেকেই ‘আস্থা’ নামে গোস্তের দোকান চালু করা হয়েছে। এখান থেকে যে লভ্যাংশ আসবে দুইজন কসাইকে বেতন দেয়ার পর বাঁকী টাকা ৪৯ জন ভিক্ষুকদের পুর্নবাসনে ব্যয় করা হবে।
তিনি বলেন, ভিক্ষুকদের টাকার পরিবর্তে ছাগল, ভেড়া ও মুরগি দেয়া হবে। যাতে করে তারা নিজেরা লালন পালন করে আর্থিক দিক দিয়ে স্বাবলম্বী হতে পারেন। এছাড়া পৌরসভার মধ্যে ৫০ টাকার বিনিময়ে ‘হোম ডেলিভারী’ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেখানে বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। এটি একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। এখান থেকে সফলতা পেলে বাঁকী ইউনিয়নের জন্য কার্যক্রম চালু করা হবে।#