মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি’- শিরোনামে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে সদস্য দেশগুলোর উপস্থিতিতে উন্মুক্ত ভোটের মাধ্যমে আবারও রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে বিপুল ভোটে একটি রেজুলেশন গৃহীত হয়েছে।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) জাতিসংঘের বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা যায়।
এতে বলা হয়, রেজোলুশনে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন উপায়ের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে এবং মিয়ানমারকে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে, তা স্পস্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া রেজোলুশনটি নিরাপত্তা পরিষদকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। যা নিরাপত্তা পরিষদের ওপর সরাসরি চাপ সৃষ্টি করবে। এতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যর্থতার জন্য এতে মিয়ানমারকে দায়ী করে স্পষ্ট রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রদর্শন এবং প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ তৈরিসহ সুনির্দিষ্ট ১০টি বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতেও বলা হয়েছে। এছাড়া মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতকে বাস্তব পরিস্থিতির বিষয়ে রিপোর্টিং বাধ্যতামূলক করার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারের সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে যেসব প্রস্তাবনা দেন, তার বেশ কয়েকটি প্রস্তাবনা রেজোলুশনটিতে স্থান পেয়েছে। এছাড়া ‘রোহিঙ্গা মুসলিম’ শব্দটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। যা গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।
রেজোলুশনটির পক্ষে ভোট দেয় ১৪০টি দেশ। বিপক্ষে নয়টি ভোট পড়ে। আর পক্ষ অবলম্বনবিহীন ভোট পড়ে ৩২টি দেশের।
২০১৭ সাল থেকেই নিয়মিতভাবে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশনের (ওআইসি) নেতৃত্বে মিয়ানমারের মানবাধিকার সংকট ইস্যুতে তৃতীয় কমিটিতে এই রেজোলুশন আনা হচ্ছে।
গত বছর থেকে ওআইসি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যৌথভাবে তৃতীয় কমিটিতে রেজোলুশনটি উত্থাপন করছে এবং প্রতিবারই বিপুল ভোটে গৃহীত হচ্ছে। এবারের রেজোলুশনটি মিয়ানমারের ওপর রাজনৈতিক চাপকে শুধু জোরদারই করবে না বরং তা অব্যাহত রাখতে ভূমিকা রাখবে।
ওআইসি ও ইইউয়ের সদস্যরাষ্ট্র এবং যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড ও মেক্সিকোসহ মোট ১০২টি দেশ রেজোলুশনটি কো-স্পন্সর করে। যা রোহিঙ্গা বিষয়ে বিশ্ব জনমতের জোরালো প্রতিফলন।
রেজোলুশনটি গৃহীত হওয়ার পর এ বিষয়ে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে স্থানীয় সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।
জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন বক্তব্যে রেজোলুশনটির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে এটি সমর্থন করতে সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, এটিকে আমরা শুধু একটি দেশভিত্তিক রেজোলুশন হিসেবেই দেখছি না। এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি দায়বদ্ধতার দলিল। যার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে পারে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবর্তন।
তৃতীয় কমিটিতে গৃহীত এই রেজোলুশন আসছে ডিসেম্বরে সাধারণ পরিষদের প্লেনারিতে উপস্থাপন করা হবে। ওআইসি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে রেজোলুশনটি এবার উপস্থাপন করে যথাক্রমে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ফিনল্যান্ড।
এছাড়া জাতিসংঘের বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন শুরু থেকেই এই রেজোলুশনটি প্রক্রিয়াকরণ, উপস্থাপন ও গ্রহণের ক্ষেত্রে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
রেজুলেশনটি ভোটে যাওয়ার আগে এর পক্ষে ভোট দেওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরে বক্তব্য রাখে ফিনল্যান্ড (ইইউ), কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, সৌদি আরব ও সুইজারল্যান্ড। ভোট গ্রহণের আগে ও পরে দেওয়া বক্তব্যে প্রায় সকল সদস্য দেশের প্রতিনিধিগণই জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার সংরক্ষণ, টেকসই পুনর্বাসন, জাতিগত নিধন ও গণহত্যার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ, সহিংসতার দায় নিরূপণ ও অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করা এবং রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদানসহ মিয়ানমারে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রেজুলেশনটি তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।