তিনতলা বিদ্যালয় ভবন ও দোতলা আবাসিক ভবনের মধ্যে সরু গলি। কিছুটা অন্ধকার, স্যাঁতসেঁতে ভাব আর ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা আবর্জনা, কাচের টুকরা। তার ওপর জটলা পাকিয়ে আবাস গড়েছে মশা। দেখে শহরের সাধারণ গলি মনে হলেও সংবিৎ ফিরে এল ইউনিফর্ম পরা শিক্ষার্থীদের দৌড়াদৌড়িতে। মাঠ না থাকায় শহরের মছিরন নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের খেলার জায়গা এটি।
বিদ্যালয়ের শিশুরা সেখানে লুকোচুরি খেলছিল। মাঝেমধ্যে অন্য শিক্ষার্থীরাও তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছিল। দৌড়াদৌড়ি, ডাকাডাকি আর চিৎকারে শিশুরা মজা পেলেও দুর্ঘটনার ভবনা তাদের মাথায় নেই। খেলার একটু জায়গা পাওয়াতেই যেন তাদের আনন্দ।
নাটোর শহরে এমন আরও ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খোঁজ পাওয়া গেল, যেগুলোতে নেই শিশুদের খেলার জন্য পর্যাপ্ত মাঠ। শহরে মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ১৩টি। এ ছাড়া, ২০টি বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন আছে। যার মধ্যে ১৮টি স্কুলেই শিশুদের শৈশব কাটে চার দেয়ালের ভেতর। কোনো বিদ্যালয় চলছে বাসাবাড়ি ও বাণিজ্যিক ভবনের কক্ষ ভাড়া করে।
রবিবার দুপুরে মছিরন নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের সীমানার ভেতর শিক্ষার্থীদের হাঁটাহাঁটির জায়গাও নেই। প্রধান শিক্ষক সুচিত্রা রানী জানালেন, বিদ্যালয়ের কিছু অংশ নারদ নদের মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। শহরের এই এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় মাঠ তৈরির জন্য বিদ্যালয়ের আশপাশে ফাঁকা জায়গাও নেই।
নাটোর শহরের লালবাজার, উপরবাজার, নিচাবাজার ও বড়গাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়গুলোতে একাডেমিক ভবন ছাড়া খেলাধুলার কোনো সুযোগ নেই।
উপরবাজার লালবাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লিটন নামের এক শিক্ষার্থী বলছিল, মাঠ না থাকায় ইচ্ছা করলেও খেলার সুযোগ পাওয়া যায় না। এ নিয়ে মন খারাপ হয়। স্কুল শেষে বাসায় ফিরেও আশপাশে খেলাধুলার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই।
নাটোর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘যদিও শিক্ষার্থীরা খেলাধুলার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কিন্তু নগরগুলো এমনভাবে তৈরি হচ্ছে, যেখানে আমাদের কিছু করার থাকে না।