পবিত্র কাবা শরীফ। আল্লাহর ঘর। কোন কোন তাফসিরকারক মনে করেন, মানব সৃষ্টির বহু আগে মহান আল্লাহ তায়ালা কাবাঘর সৃষ্টি করেন। তফসিরবিদ মুজাহিদ বলেন, আল্লাহ রাববুল আলামিন বাইতুল্লাহর স্থানকে সমগ্র ভূপৃষ্ট থেকে দু হাজার বছর আগে সৃষ্টি করেন। মুসলিম শরীফের একটি হাদীসে হযরত আবু যর গিফারী হতে বর্ণনা হয়েছে, রাসূল (সা.) তাঁর একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, বিশ্বের সর্বপ্রথম মসজিদ হলো মসজিদে হারাম। এর পরের মসজিদ হলো মসজিদে আকসা। মসজিদে হারাম নির্মাণের ৪০ বছর পর মসজিদে আকসা নির্মিত হয়।
হযরত আদম (আঃ) কাবাঘর আল্লাহর আদেশে পুনঃনির্মাণ করেন। এরপর বহুদিন অতিক্রম হলো। শত শত বছর অতিবাহিত হলো। আল্লাহর বান্দারা কাবাঘর জিয়ারত করতো, আল্লাহর কাছে হাজিরা দিতো এ কাবাঘরে সমবেত হয়ে। কাবাঘরে এসে মহান আল্লাহর পবিত্রতা ও একত্ব ঘোষণা দিত।
‘লাববাইক আল্লাহুম্মা, লাববাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নেয়ামাতা, লাকাওয়াল মুলক, লাশারীকা, লাকা লাববাইক।’ এভাবে চলে আসছিল। এরপর হযরত শীষ (আঃ) কাবাঘর পুনঃনির্মাণ করলেন। দিন দিন একত্ববাদীর সংখ্যা বাড়তে থাকলো। এরপর কাবা শরীফ নির্মাণ বা পুনঃনির্মাণ করেন হযরত ইব্রাহীম (আঃ)। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) হযরত ইসমাঈল (আঃ) কে সাথে নিয়ে কাবাঘর নির্মাণ বা পুনঃনির্মাণ করেন।
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কাবাঘর সংস্কার করে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন।‘হে আমার প্রতিপালক! আমাদের উভযকে আজ্ঞাবহ কর। আমাদের বংশ থেকে একটি অনুগত দিন সৃষ্টি কর। নিশ্চয়ই তুমি দয়ালু। হে প্রতিপালক! তাদের মধ্য থেকেই তাদের কাছে একজন পয়গম্বর প্রেরণ করুন। যিনি তাদের কাছে তোমার আয়াত তেলাওয়াত করবেন। তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দিবেন এবং পবিত্র করবেন। নিশ্চয়ই তুমি মহাপরাক্রমশালী।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশ হতে হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে শেষ নবী ও রাসূল হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। শতাব্দীর পর শতাব্দী অতিবাহিত হলো। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুয়ত প্রাপ্তির ৫ বছর আগে কাবাঘর সংস্কার করে মক্কার বিখ্যাত কোরাইশ বংশ। এ কুরাইশ বংশেই মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ৫৭০ খৃস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) জীবিত অবস্থায় ৬ হিজরীতে আব্দুল্লাহ ইবনে জোবায়ের (রা.) কাবা শরীফ সংস্কার করেন।
হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ৭৪ হিজরীতে কাবা শরীফ সংস্কার করেন। সুদীর্ঘ ১৪শ’ বছরে কাবাগৃহে কোনো সংস্কারের প্রয়োজন হয়নি। শুধুমাত্র কাবাঘরের চারপাশে অবস্থিত মসজিদে হারামের পরিবর্ধন, সংস্কার বা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়েছে।
মুসলমানদের কেবলা কাবা শরীফ। এ কাবা শরীফ মহান আল্লাহ তায়ালার এক অপূর্ব সৃষ্টি। প্রতি বছর লাখ লাখ মুসলমান কাবাঘর তওয়াফ করতে মক্কা গমন করেন। পৃথিবীতে সর্বপ্রথম আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতারা কাবাঘর নির্মাণ করেন। কাবাঘরকে লক্ষ্য করে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের সূরা আল-ইমরানের ৯৬ নম্বর আয়াতে বলেন, নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের ইবাদতগাহরূপে নিরূপিত হয়েছে, তা ঐ ঘর যা মক্কাতে অবস্থিত। কাবাঘরটি আল্লাহর আরশে মুয়াল্লাইর ছায়াতলে সোজাসুজি বায়তুল মামুরের আকৃতি অনুসারে স্থাপন করেন।
পবিত্র হজ্ব পালন করতে লাখ লাখ মুসলমান মক্কা শরীফে গমন করেন। জিলহজ্ব মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে হজ্ব অনুষ্ঠিত হয়। জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ ঈদুল আযহার দিন। এ দিন কোরবানী দিতে হয়, যা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর স্মৃতি বহন করে চলেছে হাজার হাজার বছর ধরে। যমযম কূপ ঠিক তেমনি হযরত ইসমাঈল (আঃ) ও তার মা হযরত হাজেরা (আঃ)-এর স্মৃতি বহন করে চলেছে। এ যমযম কূপ মহান আল্লাহর কুদরতের অপরূপ ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ মাত্র।