নাজিম হাসান,রাজশাহী থেকে :
বারো মাসে তের পার্বণ কথাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য প্রচলিত থাকলেও শারদীয়া বা দূর্গা পূজাই বেশি আনন্দ উৎসবের মাধ্যমে পালন করা হয়। শারদীয় দুর্গোৎসবের বিজয়া দশমীতে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকেই বৃষ্টির মধ্যে রাজশাহীর বাগমারার তাহেরপুরে প্রতিমা বিসর্জন শুরু করা হয়। প্রশসনের পক্ষ থেকে প্রতীমা বিসর্জনের সময় বেধে দেওয়ায় বেলা ৩টার দিক থেকেই জল তর্পণের মাধ্যমে দেবী দুর্গাকে বিসর্জন দিতে শুরু করেন রাজশাহীর তাহেরপুরের সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়। এ সময় বিদায়ের বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে তাদের মন। তবে এর আগে সকাল থেকেই তাহেরপুরে বিভিন্ন মন্দির গুলোতে দেখা গেছে সিঁদুর শুভণ ও শান্তিজল গ্রহণের জন্য রমনীদের ভিড়। ম-পে ম-পে শুরু হয় নারীদের সিঁদুর খেলা। আনন্দের বন্যায় ভেসে যান তারা। নারীরা তাদের এবং পরিবারের কল্যাণে এই ধর্মীয় আচার পালন করেন। একে অপরকে আলিঙ্গণ করে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানান তারা। লাল সিঁদুর দেবী দুর্গার পায়ে নিবেদন করে সেই সিঁদুর পা থেকে তুলে নিয়ে সিঁথিতে দিয়ে আগামী দিনের জন্য শুভ কামনা করা হয় মন্দিরে মন্দিরে। কিন্তু সিঁদুর খেলা হিন্দুদের রঙ খেলার থেকে কিছুটা ভিন্ন বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এই খেলা কেবল বিবাহিত নারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই বৈশিষ্ট্যের কারণ হলো সিঁদুর বিবাহিত নারীদের প্রতীক। তাই অবিবাহিত নারী ও বিধবাদের জন্য এ খেলার ক্ষেত্রে বিশেষ নিষেধ রয়েছে। এর পরই ভক্তদের মনে বেজে ওঠে বিদায়ের সুর। বিকাল থেকে দেবী দুর্গাকে বিসজর্ননের প্রস্তুতি শুরু হয় তাহেরপুরে মন্দিও গুলোতে। সিঁদুর খেলার প্রাথমিক ইতিহাস অজানা। তবে ধারণা করা হয় সিঁদুর শুভণের এই আচার অনুষ্ঠান আনুমানিক ৪ শত বছর আগে শুরু হয়েছিল। যে সময় মানুষ সবে মাত্র দুর্গাপূজা উদযাপন শুরু করে। সিঁদুর খেলার আগে-পরে কিছু নিয়ম রয়েছে। বিজয়া দশমী দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানোর দিন। দিনটি শেষ হয় মহাআরতির মাধ্যমে। এর মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার সব কার্যক্রম শেষ হয়। তাই ঢাক-ঢোল ও বাদ্য বাজিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে একের পর এক প্রতিমা বারনই নদিতে। দেবী দুর্গাকে বিদায় দেওয়া হচ্ছে এনদীতে। তবে প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত কঠোর নিরাপাত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ। উল্লেখ্য, ১৪৮০ সালে সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে বাংলার বারো ভূঁইয়ার অন্যতম রাজা রাজশাহীর কংস নারায়ণ তাহেরপুরের তাহের খানকে যুদ্ধে পরাজিত করেন। যুদ্ধজয়ের স্মৃতি ধরে রাখতে রাজ পুরোহিত রমেশ শাস্ত্রীর পরামর্শে রাজা কংস নারায়ণ দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। তার আহ্বানে মা দুর্গা স্বর্গ থেকে সাধারণ্যে আবির্ভূত হন। সেই সময় ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে কংস নারায়ণ প্রথম যে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন,সেই প্রতিমা ছিল সোনার তৈরি। এরই ধারাবাহিকতায় আজ পর্যন্ত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব হিসেবে দুর্গাপূজার স্বীকৃত পায় সারা বিশ্বে।