কলমাকান্দায় লাইসেন্স বিহীন রিকশা-অটোরিকশা, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
নেত্রকোনার কলমাকান্দায় অধিকাংশ রিকশা-অটোরিকশা চালাচ্ছে শিশু-কিশোরেরা। ফলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। স্থানীয়দের অভিযোগ, ইউনিয়ন পরিষদের উদাসীনতা ও যানবাহন চলাচলের সুষ্টু পরিকল্পনা না থাকায় শিশু-কিশোর চালকেরা প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। আর যানবাহন ও চালকদের লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন কার্যক্রম জোরদার না হওয়ায় সরকার ব্যাপক রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অপরদিকে অন্যান্য উপজেলার হাট-বাজারে রিকশা ও অটোরিকশার নির্ধারিত ভাড়ার মূল্য তালিকা থাকলেও কলমাকান্দা উপজেলায় নেই নির্ধারিত ভাড়ার কোন মূল্য তালিকা।
সোমবার দুপুরে সরেজমিন পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, উপজেলা সদরের একাধিক সড়কে অধিক গতিতে বিভিন্ন এলাকার শিশু-কিশোরেরা রিকশা ও অটোরিকশায় যাত্রী ও মালামাল পরিবহণ করছে। ওইসব রিকশা ও অটোরিকশা ব্যাটারি চালিত হওয়ায় তারা অতি সহজেই চালাতে সক্ষম হচ্ছে। আর কিছু রিকশা ও অটোরিকশা রয়েছে যেগুলোতে দুই জনের অধিক যাত্রীর আসন ব্যবস্থা রয়েছে। ওই যানবাহনগুলোই অধিক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। শিশু-কিশোর চালকদের অনেকেই বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থী। তাদের পরিবারের অভাব মেটাতেই অভিভাবকদের ইচ্ছায় তারা অপরিণত বয়সে রিকশা ও অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে এ পেশায় নিজেদের সম্পৃক্ত করেছে।
একাধিক রিকশা ও অটোরিকশার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাদের লাইসেন্স নিতে হবে এ বিষয়টি তাদের জানা নেই। আর এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাদেরকে অবহিতও করা হয়নি। লাইসেন্সের বিষয়ে বাজারে কোন প্রকার মাইকিংও করা হয়নি। তারা আরো জানায়, গ্যারেজে থাকা রিকশা ও অটোরিকশা চালকেরা না নিলে তবেই তারা শিশু-কিশোরদের কাছে ভাড়া দেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রিকশা ও অটোরিকশার অধিকাংশ চালক শিশু-কিশোর হওয়ায় তাদের মধ্যে নেই কোনো শৃঙ্খলা। আর অদক্ষ ওইসব চালকেরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে যাত্রীদের সঙ্গে বাক-বিত-ায় জড়িয়ে পড়ছে। ফলে স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে এ নিয়ে চরম ক্ষোভ।
আমতৈল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইন্দ্রজিত সাহা বলেন, ব্যাটারি চালিত রিকশা ও অটোরিকশার গতি বেশি হওয়ায় সড়ক চলাচলে সাবধান থাকতে হয়। স্থানীয় সড়কগুলিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে না আনলে অবস্থা খুবই ভয়াবহ হবে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের কলমাকান্দা উপজেলার শাখার সভাপতি আব্দুর রশিদ আকন্দ বলেন, শিশু শ্রম আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যেতে পারে। তাছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যদি ভাড়ার নির্ধারিত মূল্য তালিকা দেয়া হয় তাহলে ওইসব চালকেরা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে পারবে না।
কলমাকান্দা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মৌলা বলেন, লাইসেন্সের জন্য আমরা বাজারে মাইকিং করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ রিকশা ও অটোরিকশার লাইসেন্স করতে আসেনি। আর যে সকল শিশু-কিশোর রিকশা চালায় এর সবকটিই অবৈধ্য।
এ বিষয়ে কথা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ইতিমধ্যে মাসিক সমন্বয় সভায় উপজেলার আটটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে ২০১৯-২০২০অর্থ বছরে রিক্সসহ বিভিন্ন যানবাহনের লাইসেন্স প্রণয়ন ও নবায়নের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।