নুরজাহান আশরাফী (সুইটি)প্রতিটি শিশুর জন্মের পিছনে বাবা- মায়ের ভূমিকা থাকে । অনেক আশা ও স্বপ্ন নিয়ে বাবা- মা তাদের আগত শিশুকে লালন- পালন করেন। আর শিশু পায় বাবা- মায়ের অপরিসীম ভালোবাসা,আদর ও যত্ন। আজ শুনাবো এমন এক মানুষের মা ও বাবা হয়ে উঠার গল্প । নূরী যখন বাবা ও মা উভয়ের অভিনয় করে তার মেয়ে আলোকে লালন-পালন করে তখন নূরী’ই বুঝে মায়ের ও বাবার ভালোবাসার অভিনয় ভিন্ন ভিন্ন এবং তা কতটা কঠিন থেকে কঠিনতম । শিশুর জন্ম থেকে বাবা-মায়ের দায়িত্বের কোন শেষ নেই। আলোর বাবার সাথে আলোর মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ। তাই আলোর বাবা খোঁজ খবর রাখেন ঠিকই কিন্তু কখনোও মেয়ে হিসেবে আলোকে নীজ চোখে দেখেন নাই। দেশের বাইরে থাকেন আলোর বাবা। আলোর বাবা ও মা বলতে একমাত্র নূরীই। নূরী থাকেন বাবা-মায়ের সাথে মেয়েকে নিয়ে। বাবা-মায়ের সংসারে যেন বোঝা না হয় সেই চিন্তা করে এলাকার একটা কিন্ডারগার্টেনে নূরী একটা ছোট চাকরি করেন । শিক্ষিত হওয়ায় আলোর দেখা-শুনা ও ভালো- মন্দ নিয়ে নূরী ছিলো সব সময় সচেতন। আর আলোর আবদারেরও কোন কমতি ছিল না। নূরী আলোর কোন আবদারে অপূর্ন রাখেন না।
আর আলোও ছিল এমন স্বভাবের সবসময় মায়ের চারপাশে মাছির মত ভোঁ ভোঁ করা মাছির মত মায়ের গন্ধ শুকে আদর করে জড়িয়ে ধরা,মায়ের কোলে উঠা,মায়ের হাতে খাওয়া ও গোসল করা এককথায় কোন কিছুই আলো মা কে ছাড়া করতে নারাজ। আর নূরী ও একবারে ছেলেমানুষী স্বভাব আলো যা যা বলবে হাজার কষ্ট হলেও নূরী তা করতে ইচ্ছুক।কারণ নূরী আলোর দিকে চেয়ে সামনে প্রকাশ করতে না পারলেও মনে মনে মেয়ের বাবার অভাব, চাওয়া-পাওয়া গুলো নূরীর মনে ঘন্টাধ্বনি বাজায় প্রতিনিয়ত। নূরীর স্বপ্ন ছিল দশটা মেয়ের মত, তার মেয়ে আলোও বাবার সাথে খেলা করবে,বাবার হাত ধরে হাটবে,বাবার কোলের পরী হবে,বাবার হাতে খাবার খাবে,বাবার বুকে রাজকন্যার মতো করে ঘুমাবে আরো কত কি?কিন্তু না! ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ আলোর বাবা ও মা দু’অভিনয় করে আলোকে বড় করে তুলতে নূরীর কতশত স্বপ্ন-আশা ও ভালোবাসা। কখনও বাবার অভাব বুঝতে দেয়নি ছোট আলোকে। নূরীর আশা আলোকে সে লেখাপড়া, আদব কায়দা শিখিয়ে সৎ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। একদিন দেশে সুনাম ছড়িয়ে বিদেশেও যেন বাবার কানে পৌছে মেয়ের সুনাম। বাবা ও দাদা-দাদীর আদর যত্ন ছাড়াও মা হিসেবে মেয়ে আলোকে গড়ে তুলেছে সেভাবে ভবিষ্যতে দেশ ও দশে চিনবে। মায়ের মুখ উজ্জ্বল করবে। এ আশায় নূরী স্বপ্নে বিভোর। আল্লাহ্ সহায় হবে তো? তারপরও আশা ছাড়ে না নূরী!!
আমাদের সমাজে এমন হাজারো নূরী আছে স্বামীর অধিকার থেকে বঞ্চিত ও দায়িত্ব অবহেলিত । আবার অনেক আলো জন্ম পায় কিন্তু বাবা পায় না, পায় না বাবার অধিকার ও ভালোবাসা। নূরী, আলো এরা কখনোও তাদের না পাওয়ার দুঃখ,বেদনা, আশা প্রকাশ করতে পারে না। হ্যাঁ পারে মনের জোরে মনে মনে স্বপ্ন দেখতে। আমরা নূরী ও আলোর মত হাজারো মা-মেয়ের অধিকার আদায়ে অবদান রাখতে পারব না। কিন্তু এমন কতশত কাহিনী বা ঘটনা পড়ে শুনে চোখের কোনে মনের অজান্তে পানি ফেলি, মনের ভিতর দুঃখগুলো নাড়া দিতে পারে মনকে এইই। শুধু পারি নূরী ও আলোর মত সকলের জন্য মন থেকে দোয়া ও আর্শিবাদ করতে । যেন তাদের মনের জোর আরো বাড়ে ।
নুরজাহান আশরাফী (সুইটি) , সহকারী শিক্ষক ফ্লাইট লেঃ কাইমূল হুদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কুতুবদিয়া, কক্সবাজার।