ইয়ানূর রহমান : ১৫ বছর আগে স্ত্রীর সাথে পরোকীয়া এবং সংসার ভাঙার প্রতিশোধ হিসেবে যশোর সদরের সালতা গ্রামের মিনারুলকে হত্যা করেন ওসমানপুর গ্রামের চাঁদ আলী মোল্লার ছেলে হাফিজুর রহমান (৪৮)। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ঘটানো এ হত্যাকান্ডের কথা আটক হাফিজুর রোববার আদালতে স্বীকার করেছেন।
আগে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) যশোরের সদস্যরা হাফিজুরকে আটক করেন। পিবিআই বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে।
পিবিআই এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমকেএইচ জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন, হাফিজুর রহমান যশোর জাগরণী সমিতির কৃষিবিভাগে কাজ করেন। তার ছোট ভাই আব্দুল মান্নানের বন্ধু নিহত মিনারুল। মান্নান বাড়িতে দর্জির কাজ করতেন। মিনারুল দর্জির কাজ শেখার জন্য মান্নানের বাড়িতে যেতেন। এ যাতায়াতের ফলে হাফিজুরের স্ত্রী (প্রথম) সাবিনার সাথে মিনারুলের পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠে। যা শারীরিক সম্পর্কে গড়ায়। এ বিষয়টি একদিন হাফিজুর দেখে ফেলেন। ঘটনার দিন হাফিজুরের কাছে ক্ষমা চান মিনারুল। হাফিজুর এ বিষয়টি আর কাউকে বলেননি। কিন্তু হাফিজুর মনের দুঃখে তার স্ত্রী সাবিনাকে তালাক দেন এবং পরে ডলি নামে আরেকজকে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন। কিন্তু প্রথম স্ত্রীর কথা কখনো ভুলতে পারেননি হাফিজুর।
এরপর নিহত মিনারুল তার গ্রামের বিলকিস নামে আরো এক নারীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। শারীরিক সম্পর্কের ফলে বিলকিস অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। কিন্তু মিনারুল তাকে বিয়ে করতে চাননি। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মিনারুল কয়েক বছর হাজতবাসও করেছেন। এ সব ঘটনায় হাফিজুরের আরো বেশি ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সে মিনারুলকে হত্যার পরিকল্পনা তখন থেকেই করে। পরবর্তীকে হাফিজুর আরো বেশি করে মিনারুলের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে। মিনারুলকে মামা বলে সম্বোধন করতে থাকে। সেই থেকে মামা-ভাগ্নে সম্পর্ক তাদের মধ্যে।
হাফিজুর ঈদ উল আযহার কয়েকদিন আগে মিনারুলের বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে স্ত্রী সাথীর সাথে মিনারুলের আমোদফুর্তি দেখে হাফিজুরের রাগ হয়। স্বামী-স্ত্রীর ওই সম্পর্ক দেখে প্রথম স্ত্রীর কথা মনে পড়ে। ওই সম্পর্ক উস্কে দেয় হত্যার। ঈদের পরদিন রাত ১টার দিকে হাফিজুর ফের যান মিনারুলের বড়িতে। ঘুম থেকে ডেকে উঠিয়ে বাড়ির পাশের আম গাছের নিচে বসে দুইজন ধূমপান করেন। পরদিন ১৪ আগস্ট রাত ১০টার দিকে ফের হাফিজুর তার বাড়িতে যান। আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখেন স্ত্রীকে পাশে নিয়ে মিনারুল বাড়ির বাইরে বসে আছেন। মিনারুল গরুর বিচালি দিতে ওঠে ও স্ত্রী ঘরের মধ্যে যান। এ সময় মিনারুলকে ইশারায় ডেকে বাড়ির পাশে ইসমাইলের বাগানে নিয়ে যায় হাফিজুর। বলে, ‘জঙ্গলের ভেতর একটি ম্যাগনেট আছে খুঁজে দেখ মামু।’ এর আগে হাফিজুর একটি ধারালো দা বাড়ি থেকে নিয়ে এসে জঙ্গলে রেখে দেন। গায়ে শুধুমাত্র একটি গামছা পেচিয়ে আসেন যাতে রক্ত সহজে ধুয়া যায়। মিনারুল একটি টর্চ দিয়ে মাথা নিচু করে কথিত ম্যাগনেট খুঁজতে থাকেন। সে সময় হাফিজুর ওই দা দিয়ে ঘাড়ে দুইটি কোপ দেন। মিনারুল পেছন দিকে তাকাতে গেলে তার কপালে দা এর উল্টো পিঠ দিয়ে আঘাত করে। এতেই মিনারুলের মৃত্যু হয়। পরে হাফিজুর বাড়িতে গিয়ে রক্ত মাখা দা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলেন।
১৫ বছর আগে প্রথম স্ত্রীর সাথে পরোকীয়ার জেরে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন এবং তার কারণে তালাক দেয়ার ক্ষোভে মিনারুলকে হত্যা করেন হাফিজুর।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমকেএইচ জাহাঙ্গীর হোসেন আরো জানিয়েছেন, হাফিজুরের বাড়ির চৌকির ওপর কাঁথার নিচ থেকে দা’টি উদ্ধার করা হয়েছে। হাফিজুর রোববার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিলে সিনিয়র চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গৌতম মল্লিক জবানবন্দী রেকর্ড করেন।
জানাগেছে, মিনারুল হত্যাকান্ডের পর এ মামলায় পুলিশ তার স্ত্রীসহ বেশ কয়েকজনকে সন্দেহজনক হিসেবে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু কারোর কাছ থেকে তথ্য উদঘাটন করতে পারেননি। পিবিআই কয়েকটি উপসর্গের ভিত্তিতে হাফিজুরকে আটক করে এবং তার কাছ থেকে হত্যার তথ্য জানতে পারেন। হাফিজুর একাই এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত বলে জানিয়েছেন জাহাঙ্গীর হোসেন।