পাবনায় ইছামতি নদী খননের নামে পৌনে তিন কোটি টাকা আত্মসাত

আবদুল জব্বার, পাবনা
পাবনায় ইছামতি নদী খননের নামে প্রায় পৌণে তিন কোটি টাকা আতœসাত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পাউবোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং ঠিকাদাররা যোগসাজশ করে খনন কাজের দুই কোটি ৬২ লক্ষ টাকার বিল তুলে ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছেন। ফলে স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্র জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড দেশের ৬৪ টি জেলায় ছোট নদী, জলাশয়, খাল খননে (প্রথম পর্যায়ের) একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। তারই অংশ হিসেবে পাবনা সদর উপজেলার ভাড়ারা ইউনিয়নের উপর দিয়ে বহমান ইছামতি নদী খননের জন্য স্থানীয় পাউবো চার কোটি ১৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। চলতি বছরের ১১ মার্চ কাগজে কলমে কাজ শুরু দেখানো হলেও মাঠ পর্যায়ে কোন খনন হয়নি বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। এমনকি গত গত চার মাসে উল্লেখযোগ্য কোন শ্রমিকও এলাকায় খনন কাজে অংশ নেয়নি। তবে আশ্চর্য্যরে বিষয় হলো নদী খনন না হলেও ইতোমধ্যে ৪ কোটি ১৬ লক্ষ টাকার মধ্যে ২ কোটি ৬২ লক্ষ টাকার বিল সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এশিয়ান ড্রেজার লিমিডেটকে পরিশোধ করা হয়েছে।
অপর একটি সুত্র জানায়, ইছামতি নদী খননে কোন কাজই করা হয়নি। ঢাকার ৫৬-৫৭ মতিঝিলের শরীফ ম্যানশনের তৃতীয় তলার ‘এশিয়ান ড্রেজার লিমিডেট’ নামের প্রতিষ্ঠান টি এই কাজ পেলেও ঐ প্রতিষ্ঠানের কোন কর্মকর্তা কর্মচারী বা প্রকৌশলী প্রকল্প এলাকায় একদিনের জন্য যাননি। তার পক্ষে আলতাফ হোসেন নামের এক ব্যক্তি এলাকায় গিয়ে মানুষজনকে খাল খনন করার নামে নদীর পাড় ছেটে দিয়েছে।
ভাড়ারা চরপাড়া গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান সমকাল‘কে বলেন, ‘দোগাছির আলতাফ নামের এক ব্যক্তি ৫/ ৬ মাস আগে দড়িভাওডাঙ্গা নামকস্থানে কয়েকজন লেবার নিয়ে এসে নদী খননের ফটো তুলেই আবার চলে গেছে। এর পর একতিদনও কোন কাম অয়নি’।
সরেজমিনে দেখা গেছে ভাড়া থেকে দড়িভাওডাঙ্গা হয়ে আশুতোষপুর পর্যন্ত ইছামতির খাল খননের কোন চিহ্ন নেই। বর্তমানে বৃষ্টির পানিতে নদীতৈ হাটু পানি জমেছে। যাতে পাট জাগ দেওয়াও সম্ভব নয়।
আব্দুস সাত্তার নামের রানীনগর গ্রামের এক কৃষক সমকাল‘কে বলেন, নদী কাটা তো দূরের কথা শুধু আমাদের উঠতি ফসলগুলো ছেটে দিয়ে আলতাফ আমাদের লক্ষ লক্ষ টাকার ফসলের ক্ষতি করেছে। ফসলের ক্ষতি বাবদ আমাদের কোন কানাকরি দেয়া হয়নি। ঠিকাদার ইছামতি খননের নামে সব টাকা আত্মসাত করেছে বলে গ্রামবাসি ক্ষোভে ফেটে পরেন।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী পরিচালক (ভূমি ও রাজস্ব) মোশারফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ ব্যাপারে কোন তথ্য দিতে অপরাগতা প্রকাশ করে সমকাল‘কে বলেন, আমি কিছু জানিনা। নির্বাহী প্রকৌশলীর মোবাইল নং দিয়ে ফোন কেটে দেন।
পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম জহুরুল হক সাংবাদিকদের সঙ্গে নিয়ে খাল খনন এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেন। তার সামনেই খাল খননের নামে টাকা চুরির অভিযোগ তোলেন এলাকাবাসী। এ সময় নির্বাহী প্রকৌশলী গণরোষের মুখে পরে ফিরে আসেন। তবে পরে এক লিখিত বিবৃতিতে নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম জহুরুল হক সাংবাদিকদের জানান, সিডিউল মোতাবেক খনন কাজের দৈর্ঘ্য ৮ কিলোমিটার খাল এবং ১৬ মিটার প্রস্থ। মোট ৫২ দশমিক ৫০ ফুট মিটার খাল খনন করা হয়েছে। ‘যথাযথ’ ভাবে কাজ সম্পন্ন হওয়ায় ইতোমধ্যে ৪ কোটি ১৬ লক্ষ টাকার মধ্যে ২ কোটি ৬২ লক্ষ টাকার বিল সংশ্লিষ্ট ঠিাকাদারী প্রতিষ্ঠান এশিয়ান ড্রেজার লিমিডেটকে পরিশোধ করা হয়েছে। কাজের মান ভাল ছিল।
এদিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এশিয়ান ড্রেজার লিমিডেট এর কারো সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। দোগাছির আলতাফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।