নাটোরে লালপুরে একাই দুই প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করছেন নৌ বাহিনী সদস্য

নাটোর প্রতিনিধি- চাকুরি করেন বাংলাদেশ নৌ বাহিনীতে। কিন্তু সরকারী বাহিনীতে চাকুরি করার পরও আব্দুল মোনায়েম সরকার নামে এক ব্যক্তি টাকার জোরে নিয়োগ নিয়েছে নাটোরের লালপুর উপজেলার ওয়ালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শরীর চর্চা শিক্ষক হিসেবে। বর্তমানে নৌ বাহিনীর সদর দপ্তরে চাকুরিতে কর্মরত রয়েছেন তিনি। একই ব্যক্তি দুটি জায়গায় চাকুরি করেন কিভাবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

তবে অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রনজু আহমেদ, প্রধান শিক্ষক ওমর আলী, মোনায়েম সরকারের চাকুরীর বিষয়টি জানার পরও অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তাকে নিয়োগ দিয়েছেন। বর্তমানে চার বছর ধরে বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন মোনায়েম সরকার। আর এই বেতন ভাতা বিদ্যালয়ের সভাপতি, প্রধান শিক্ষক এবং মোনায়েম সরকার ভাগবাটোয়ারা করে নেন।
সূত্র জানায়, ২০১৬সালে শরীর চর্চা শিক্ষকের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় লালপুর উপজেলার ওয়ালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি। ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে ওয়ালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে শরীর চর্চা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান মোনায়েম সরকার।অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যালয়ের সভাপতি রনজু আহমেদ সহ ৫সদস্যের নিয়োগ কমিটি সাত লাখ টাকার বিনিময়ে তাকে নিয়োগ দেয়।

এরপর থেকে আব্দুল মোনায়েম সরকার বহাল তবিয়তে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে এবং ওয়ালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে একাই দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করে যাচ্ছেন। তবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে মোনায়েম সরকার বিদ্যালয়ে হাজির না হলেও এমপিও ভুক্তি হয়েছেন ঠিকই। যাহার এমপিও নম্বর ১১৩৫৪৩৭। তবে সম্প্রতি মোনায়েম সরকার তার পরিবর্তে ওয়ালিয়া গ্রামের মঞ্জুর হোসেনের ছেলে সবুজ হোসেন নামের এক যুবককে বিদ্যালয়ে পাঠায়। আর সবুজ হোসেন তার পরিবর্তে ক্লাশ নিচ্ছে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক জানান, চাকুরি বিধি লঙ্ঘন করে ম্যানেজিং কমিটি এবং প্রধান শিক্ষক শুধু মাত্র টাকার জোরে আব্দুল মোনায়েম সরকারকে চাকুরি দিয়েছেন। বিদ্যালয় সভাপতি স্থানীয় ব্যক্তি হয়ে সব জানার পরও টাকার বিনিময়ে তিনি অবৈধ ভাবে নিয়োগ দেন। বিদ্যালয় সভাপতি রাজনৈতিক ভাবে সকল শিক্ষককে চাপে রাখেন, তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।

ওয়ালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওমর আলী বলেন, তথ্য গোপন করে শরীর চর্চা শিক্ষক মোনায়েম সরকার নিয়োগ নিয়েছিল। বিষয়টি জানার পর শিক্ষক মোনায়েম সরকারকে বারবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি চাকুরি ছেড়ে দেয়নি বা বিদ্যালয়ে যোগদানও করেনি।
প্রধান শিক্ষক ওমর আলী আরও বলেন, রাজনৈতিক চাপের কারনে তাকে নিয়োগ দেওয়া হযেছে। এখন ম্যানেজিং কমিটি যে সিদ্ধান্ত নেয়, সেটাই বয়াল থাকবে। তবে অনৈতিক সুববিধার কথা অস্বীকার করেন প্রধান শিক্ষক।
বিষয়টি জানার জন্য বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রনজু আহমেদ কে তার সেল ফোনে একাধিক বার ফোন দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে অভিযুক্ত আব্দুল মোনায়েম সরকার এর সাথে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে তিনি সরাসরি কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন। পরে আবারও তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রতিবেদক বলেন, এই বিষয়ে তার কোন কথা নেই।
এবিষয়ে লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মুল বানিন দ্যুতি বলেন, একই ব্যক্তি দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করতে পারে না। এটা একটা বড় ধরনের অনিয়ম। একজন সরকারী কর্মকর্তা দুই জায়গা চাকুরি করেন কিভাবে। বিষযটি জানলাম। বিধি মোতাবেক ওই শিক্ষকের নামে ব্যবস্থা নিবো।জেলা শিক্ষা অফিসার রমজান আলী আকন্দ বলেন, একজন ব্যক্তি সরকারী বাহিনীতে চাকুরি করার পর কিভাবে নিয়োগ পেল তা বোধগম্য নয়। রবিবারই ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।
এবিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, আইনের উদ্ধে কেউ নয়, এই ব্যাপারে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওযার জন্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিবো।