বাস-ট্রাকের সংঘর্ষে হাত হারানো রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী ফিরোজ সরদার মধুমতি ব্যাংকে চাকরি পাচ্ছেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ দেখে এ ব্যাপারে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ হবিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাদের কথামতো,ব্যাংকে সিভিও জমা দিয়েছেন ফিরোজ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন,ঈদের পরেই সব প্রক্রিয়া শেষে শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী একটি পদে চাকরি পাবেন ফিরোজ। রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ হবিবুর রহমান বলেন, সম্প্রতি গণমাধ্যমে ফিরোজ সরদারের খবর দেখে ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমার সাথে যোগাযোগ করেন। এ সময় তিনি ফিরোজকে তাদের ব্যাংকে চাকরি দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। সঙ্গে সঙ্গে আমি বিষয়টি ফিরোজকে জানাই এবং সে সিভি পাঠায়। এই মুহূর্তে ফিরোজের আসলে চাকরিটা খুব দরকার ছিল।
মধুমতি চাকরি দিলে আমরা সবাই কৃতজ্ঞ থাকব।রাজশাহী কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ফিরোজের গ্রামের বাড়ি বগুড়ার নন্দীগ্রাম পৌরসভার নামোইট মহল্লায়। গত ২৮ জুন সকালে তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার জন্য রাজশাহী থেকে বগুড়ায় যান। বিকালে বগুড়া থেকে ফেরার সময় রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠ কাটাখালি এলাকায় বিপরীত দিকের একটি ট্রাকের চাপায় তার ডান হাতের কনুইয়ের ওপর থেকে কেটে পড়ে যায়। এরপর তিনি ১৪ জুলাই পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ফিরোজ বর্তমানে বাড়িতে অবস্থান করছেন। ফিরোজ জানান, আমরা তিন ভাইবোন। সবার ছোট আমি। বাবা মাহফুজুর রহমান দরিদ্র কৃষক। বড় ভাইয়ের নন্দিগ্রাম বাজারে ছোট একটি দোকান আছে। বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। বাবা ও ভাইয়ের সামান্য উপার্জনে কোনরকমে সংসার চলে। বাবা খুব কষ্ট করে আমাকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। এ অবস্থায় এত বড় একটি দুর্ঘটনা আমার জীবনের জন্য অনেক বড় ধাক্কা। তিনি বলেন,আমি রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক হবিবুর রহমানসহ শিক্ষক, সহপাঠী এবং শিক্ষার্থীদের কাছে কৃতজ্ঞ। দুর্ঘটনার পর থেকেই তারা আমার ব্যাপারে অত্যন্ত আন্তরিক ছিলেন। অনেকেই দিনের পর দিন হাসপাতালে সার্বক্ষণিক পাশে থেকেছেন।
রক্ত দিয়েছেন। সাংবাদিকরাও খোঁজ-খবর নিয়েছেন। অধ্যক্ষ হবিবুর রহমান স্যার মনোবল চাঙা রাখতে সেই সময়ই আমাকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। মধুমতি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের চাকরির প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে ফিরোজ বলেন, অধ্যক্ষ স্যার কয়েকদিন আগে ফোন করে মধুমতি ব্যাংকে সিভি জমা দেয়ার জন্য বলেন। আমি সিভি পাঠিয়েছি। ব্যাংকটির কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তারা আমাকে চাকরির আশ্বাস দিয়েছেন। ফলে ভবিষৎ নিয়ে আমি যে অনিশ্চয়তায় ছিলাম, তা দূর হয়েছে। মধুমতি ব্যাংক আমাকে কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। আমি জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ব্যাংকটির ঊর্ধ্বতন কমকর্তাদের প্রতি ঋণী থাকব। মধুমতি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিউল আজম বলেন,ফিরোজের হাত হারানোর বিষয়টি অত্যন্ত অমানবিক। বিষয়টি পত্র-পত্রিকায় দেখে আমরা জানতে পারি। এরপর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তার পাশে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। যথাযথ নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ফিরোজের শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী একটি পদে চাকরি দেয়া হবে। আশা করছি, ঈদের পরেই ফিরোজ আমাদের ব্যাংকে জয়েন করতে পারবেন।