ভাঙ্গুড়া ::
পাবনার ফরিদপুর পৌর শহরে প্রবেশের আধা কিলোমিটার প্রধান সড়কে অসংখ্য খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে শহরের খাদ্য গুদাম থেকে থানাগেট পর্যন্ত সড়কের বেহাল অবস্থা হলেও পৌর কর্তৃপক্ষ রয়েছে উদাসীন। এতে দুর্ভোগের শিকার সড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত অর্থবছরে কোটি টাকা ব্যয়ে পৌর শহরের কম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সম্প্রসারণ ও সংস্কার কাজ করা হয়েছে।
কিন্তু আঞ্চলিক বৈষম্যের কারণে শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক পৌর কর্তৃপক্ষের অবহেলায় অচল হয়ে পড়েছে।
বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফরিদপুর পৌর শহরে প্রবেশ মুখ থেকে শহরের ভিতরে থানাগেট পর্যন্ত আধা কিলোমিটার সড়কে ছোট-বড় অর্ধশতাধিক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি গর্তের গভীরতা এক ফুটেরও বেশি। সামান্য বৃষ্টি হলেই সব গর্তে পানি জমে ভয়ংকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। নতুন যান চালকরা
প্রায়ই এসব গর্তে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। অথচ এই সড়কের পাশে পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর সাব জোনাল অফিস, ব্র্যাক এর উপজেলার শাখার প্রধান কার্যালয় সহ একাধিক এনজিওর কার্যালয় ও উপজেলার সর্ববৃহৎ কারিগরি এতিমখানা মাদ্রাসা অবস্থিত। তাই প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের সহ¯্রাধিক
সেবা প্রত্যাশী মানুষ যাতায়াত করে। এছাড়া শহরে প্রবেশের অন্যান্য সড়ক সংকীর্ণ হওয়ায় পণ্যবাহী ভারী যানবাহনগুলো ঝুঁকি নিয়ে এই সড়ক দিয়ে শহরে প্রবেশ করে। এতে প্রায়ই এসব ভারী যানবাহন গর্তে আটকা পড়ে দুর্ভোগের শিকার হয়।
জানা যায়, ১৯৯৯ সালে ফরিদপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে তিনজন মেয়র এর কার্যকাল চললেও পৌর শহরের রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা বিরাজ করে। প্রথম দিকে এই সড়কের কর্তৃত্ব নিয়ে জেলা সড়ক ও জনপথ এবং ফরিদপুর পৌরসভার মধ্যে মতপার্থক্য ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সেটি সমাধান হয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ সড়কটির
দেখভালের দায়িত্ব পায়। পরে সড়কটিতে নামমাত্র দুয়েকবার সংস্কার করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। গত বছর শুরুর দিকে পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত হয়। এরপর কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছোট বড় বেশ কয়েকটি রাস্তাঘাটের প্রশস্তকরণ ও সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়। কিন্তু শহরে প্রবেশের প্রধান ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি সংস্কারের বাইরে থাকে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই এলাকাটি বর্তমান পৌর মেয়রের নিজ এলাকা না হওয়ায় এই এলাকাটি এখনো উন্নয়ন বঞ্চিত রয়েছে।
এই সড়কের পাশে অবস্থিত ডিজিটাল কম্পিউটার নামের একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মিঠু জানান, সড়কটিতে লোকজন ঠিকমত চলাফেরা করতে পারে না।
একটু বৃষ্টি হলেই সড়কে হাঁটু পানি জমে যায়। মাঝেমধ্যেই ভ্যান গাড়ি, বাই সাইকেল, মোটর সাইকেলের চাকা গর্তে পড়ে উল্টে গিয়ে চালক ও যাত্রীরা আহত হন। পৌর কর্তৃপক্ষ এ অবস্থা দেখেও কোন ব্যবস্থা নেয় না।
সড়কে চলাচলকারী অটো ভ্যান গাড়ির চালক সাজু বলেন, সড়কের গর্তে ভ্যান গাড়ির চাকা পড়ে প্রায়ই যাত্রীদের কাপড়-চোপড় ভিজে যায়। তাই বেশিরভাগ যাত্রী এই ভাঙাচোরা রাস্তায় ভ্যানে না চড়ে হেঁটে চলাচল করে। এতে দরিদ্র ভ্যান চালকদের আয় রোজগার কম হয়।
ফরিদপুর ব্র্যাকের উপজেলা শাখার হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা হাসানুর রহমান বলেন, প্রতি বছর পৌরসভাকে ২৮ হাজার ৫’শ টাকা কর দেয়া হয়। কিন্তু এই এলাকা দীর্ঘদিন ধরে সকল প্রকার উন্নয়নের বাইরে রয়েছে। সাত-আট বছর ধরে সড়কটির বেহাল অবস্থা। অনেকবার পৌর কর্তৃপক্ষকে সড়কটি মেরামতের জন্য আবেদন করা
হয়েছে। কিন্তু তারা কর্ণপাত করছেন না।
ফরিদপুর পৌরসভার প্রকৌশলী আব্দুস সালাম মন্ডল জানান, সড়কটি সংস্কার করার জন্য বেশ কিছুদিন আগে একটি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে প্রকল্পটি এখনো পাস হয়নি। প্রকল্পটি পাস হলেই কাজের দরপত্র আহবান করা হবে।