সরকারী বরাদ্দ না থাকায় মশক নিধনে আগ্রহ নেই নাটোরের পৌর মেয়রদের

ডেঙ্গু প্রতিরোধে নাটোরের ৮টি পৌরসভায় তেমন একটা কার্যক্রম নেই। দু’একটি পৌরসভায় মশক নিধন কার্যক্রম দু’একদিন চোখে পড়লেও অর্থের অভাবে সেগুলো তা বন্ধ হয়ে গেছে। আবার কিছু কিছু পৌরসভা মশক নিধন কার্যক্রম শুরুই করেনি। যার কারনে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার আতঙ্কে রয়েছে পৌরসভার বাসিন্দারা।

সূত্র জানায়, মশক নিধনে সরকারী কোন বরাদ্ধ বা প্রকল্প না থাকায় পৌর পরিষদের অর্থ খরচ করতে চায় না মেয়ররা। যার কারনে মশক নিধন কার্যক্রমে তাদের খুব একটা আগ্রহ নেই। আবার কিছু কিছু মেয়র লোক দেখানো কার্যক্রম করলেও তা পর্যাপ্ত নয়। আবার মশক নিধনের জন্য ফগার মেশিন কিনলেও তা প্যাকেটজাত অবস্থায় নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। তবে পৌরসভার মেয়ররা মশক নিধনের জন্য সরকারী বরাদ্ধ বা প্রকল্পের দাবী জানিয়েছেন।

গত ২৫ জুলাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে নাটোরের সিংড়া পৌর শহরে মশক নিধন অভিযানের উদ্বোধন করা হয়। এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন সিংড়া পৌরসভার মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস। পৌর শহরের কোয়াটারপাড়া, পাড়াজয়নগর, গোডাউনপাড়া, মাদারীপুর, চাঁদপুর ও দমদমাসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সপ্তাহব্যাপি এই অভিযান পরিচালনা করার ঘোষনা দেন মেয়র।

কিন্তু অর্থের অভাবে মশক নিধন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়নি। পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে খরচের কারনে আগ্রহও নেই মেয়রের।

এবিষয়ে সিংড়া পৌরসভার মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আমার পৌরসভায় ৭টি ফগার মেশিন ছিল, যার বর্তমানে ৩টি ভাল রয়েছে। সেগুলো দিয়েই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তাছাড়া এই মেশিন গুলো খুব ব্যায় বহুল। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫হাজার টাকা ঔষধ লাগে। এত পরিমান টাকা যোগাড় করা পৌর পরিষদের সমর্থ নেই।

তিনি বলেন, সরকারী ভাবে কোন প্রকল্প দেওয়া হলে প্রতিবছরই মশক নিধন করা সম্ভব হবে, তাছাড়া সম্ভব নয়।

জেলার ৮টি পৌরসভার মধ্যে সবচেয়ে বড় নাটোর পৌরসভা। তবে ডেঙ্গু নিয়ে সারা দেশে হইচই পড়লেও মশক নিধনে এই পৌরসভার খুব একটা তোড়জোড় নেই। পৌরসভার এমন কার্যক্রমে আতংঙ্কিত শহরবাসী। তারপরও মেয়রের দাবী পর্যায়ক্রমে প্রতিটি ওয়ার্ডে মশক নিধনের ওষধ ছিটানো হচ্ছে।

এবিষয়ে নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরি জলি বলেন, মশক নিধনের জন্য ফগার মেশিন আগে থেকেই নষ্ট রয়েছে। পরবর্তীতে দেশিয় পদ্ধতিতে তৈরী স্প্রে মেশিন দিয়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে ওষধ ছিটানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, মশক নিধন করতে গিয়ে পৌরপরিষদের প্রচুর টাকার প্রয়োজন হয়। যেহেতু সরকারী কোন বরাদ্ধ থাকেনা, সেকারনে পর্যাপ্ত পরিমানে ঔষধ ছিটানো সম্ভব হয়না। মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ দেওয়া হলে এই সমস্যা থাকবে না।

একই অবস্থা জেলার গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, বনপাড়া, গোপালপুর, বাগাতিপাড়া এবং নলডাঙ্গা পৌরসভার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মশক নিধনের তাদের খুব একটা তোরজোড় নেই।

এবিষয়ে গুরুদাসপুর পৌরসভার মেয়র শাহনেওয়াজ আলী মোল্লা বলেন, আমার পৌরসভায় মাত্র দুটি মেশিন রয়েছে। দুটি মেশিন দিয়ে আমরা মশক নিধন কার্যক্রম শুরু করবো। কিন্তু কোন বরাদ্দ না থাকার কারনে আমরা মশক নিধন করতে পারিনা।

এদিকে, পৌরসভায় মশক নিধন কার্যক্রম সন্তোষ জনক না হলেও ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু হয়েছে মশক নিধন কার্যক্রম। বুধবার দুপুরে নাটোর সদর উপজেলার তেবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ এলাকা সহ ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ন বিভিন্ন এলাকায় স্প্রে মেশিনের সাহায্যে ওষুধ ছিটানো কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন তেবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওমর আলী প্রধান। পর্যায়ক্রমে ইউনিয়নের সকল ওযার্ডে এই কার্যক্রম চলবে।

নাটোর সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার জেসমিন আক্তার বানু বলেন, মশক নিধনের জন্য প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে দুই লাখ টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেশিন ক্রয় করে প্রতিটি জায়গা মশক নিধনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সূত্র—সজাগ নিউজ