নাজিম হাসান,রাজশাহী প্রতিনিধি:
রাজশাহীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক বন্ধ করে দেয়া অবৈধ বালুমহাল চালু ও আট শ্রমিকদের মুক্তির দাবিতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) কার্যালয় ঘেরাও চেষ্টা করেন। আজিজুল আলম বেন্টুর লোকজন একজোট হয়ে একটি মিছিল নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে তারা ডিসি অফিস চত্বরে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদেরকে বাধা দেয়। এ সময় তারা সেখানে অবস্থান নিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। এবং সমাবেশ শেষে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দেন। এসময় জেলা প্রশাসকের পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রুহুল আমীন। এলাকা সুত্রে জানাগেছে,মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল আলম বেন্টু মেসার্স আমিন ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক। তার প্রতিষ্ঠান এ বছর নগরীর পদ্মা নদীর চরখিদিরপুর ও চরশ্যামপুর মৌজায় একটি বালুমহাল ইজারা নেয়। কিন্তু বালু তোলা হচ্ছিল কাজলা মৌজা থেকে। এ নিয়ে হাইকোর্টে একটি রিট হয়। এর প্রেক্ষিতে ইজারাবহির্ভুত এলাকা থেকে বালু তোলা হলে তা বন্ধের জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তবে আদেশ পেয়ে গত ২৪ জুলাই নগরীর তালাইমারী এলাকায় কাজলা মৌজার ওই বালুমহাল বন্ধ করে দেন জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। একই সঙ্গে ইজারাবহির্ভুত এলাকায় বালু তোলার কারণে আট শ্রমিককে গ্রেপ্তার করে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দেয়া হয়। এছাড়া কাজলা মৌজা থেকে বালু উত্তোলন ও পরিবহন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে একটি সাইনবোর্ডও টাঙিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু আজিজুল আলম বেন্টু এই বালুমহাল খুলে দেয়ার দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন। বালুঘাট বন্ধের পরদিনই তিনি সংবাদ সম্মেলন করে এটি খুলে দেয়ার দাবি জানান। পরে রোববার তার ব্যবসায়ীক অংশীদ্বার ও সমর্থকরা নগরীর তালাইমারী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। ওই মানববন্ধনে ইউনিফর্ম পরা স্কুল শিক্ষার্থীদেরও দেখা যায়। সেদিনই ঘোষণা দেয়া হয় যে সোমবারের মধ্যে গ্রেপ্তার শ্রমিকদের মুক্তি এবং বালুমহাল খুলে দেয়া না হলে মঙ্গলবার ডিসির কার্যালয় ঘেরাও করা হবে। সে অনুযায়ী মঙ্গলবার দুপুরে আজিজুল আলম বেন্টুর সমর্থকরা নগরীর হড়গ্রাম কোর্ট স্টেশন মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিল নিয়ে তারা ডিসি অফিস চত্বরের প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ বাঁধা দেয়। এ সময় ডিসির কার্যালয়ের প্রবেশমুখে তারা অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করেন। সমাবেশ শেষে আজিজুল আলম বেন্টুর চারজন ব্যবসায়ীক অংশীদার ডিসির কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি দেন। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালত চরশ্যামপুর ও চরখিদিরপুর বালুমহাল বন্ধই করেনি। বন্ধ করা হয়েছে ইজারাবাহির্ভুত কাজলা মৌজার অবৈধ বালুমহাল। চরশ্যামপুর ও চরখিদিরপুর বালুমহাল থেকে সোমবারও বালু তোলা হয়েছে। এতে জেলা প্রশাসন বাঁধা দেয়নি। সোমবার চরশ্যামপুর থেকে বালু তুলে কাটাখালি পৌরসভার শ্যামপুর এলাকার রাস্তা দিয়ে পরিবহন করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু বালুভর্তি অতিরিক্ত ওজনের ট্রাক চলাচলের কারণে রাস্তাটি নষ্ট হয়ে যাবে বলে বাঁধা দিয়েছেন এলাকাবাসী। এ সময় উত্তেজনা দেখা দিলে বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনকে জানান স্থানীয়রা। পরে সংসদ সদস্য অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন। তখন কাটাখালি থানা পুলিশ গিয়ে শ্যামপুরের রাস্তা দিয়েও বালু পরিবহন বন্ধ করে দেয়। এবিষয়ে জেলা প্রশাসক হামিদুল হক জানাননযে এলাকার বালুমহাল ইজারা দেয়া নেই, সেখানে বালুমহাল চালুরও কোনো সুযোগ নেই। আজিজুল আলম বেন্টুকে ইজারা দেয়া চরশ্যামপুর ও চরখিদিরপুর মৌজা থেকে বালু তোলা হলে বন্ধ করা হতো না। কিন্তু ইজারাবাহির্ভুত এলাকা থেকে বালু তোলা হচ্ছিল বলেই হাইকোর্টের নির্দেশে বন্ধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে কিছু বলার থাকলে তা হাইকোর্টে গিয়েই বলতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।