রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় রোগীর চেয়ে ঔষুধ কোম্পানির লোকজনদের ভিড় বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। বিভিন্ন কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভের ভিড়ে বৃদ্ধ শিশু এবং মহিলা রোগীরা নাকাল আস্থায় পড়েছেন।রোগীদের প্রেসক্রিপশন নিয়ে কৌশলে ফটোশেসনে মেতে উঠছেন ঔষুধ কোম্পানি প্রতিনিধিরা। এছাড়া ঔষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেনটেটিভরা নিজেদের অবস্থান কোম্পানির কাছে তুলে ধরতে তারা রোগীর ব্যবস্থাপত্রে নিয়ে মোবাইলে ছবি তুলে নিচ্ছেন। কোন রোগী ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তার প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে ছবি তোলা হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রিপ্রেজেনটেটিভদের ভিড় পড়ে বাগমারা মেডিকেলসহ উপজেলার তাহেরপুর মোহনগঞ্জ,হাটগাঙ্গোপাড়া ও ভবানীগঞ্জের বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার,ক্লিনিক এবং ফার্মাসী গুলোতে।
ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিয়ে রোগীরা বেরিয়ে এলেই প্রেসক্রিপশন দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে কোম্পানির লোকেরা। এতে করে রোগী ও তার স্বজনরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। নিয়মানুযায়ী সপ্তাহে দুদিন হাসপাতালে চিকিৎসকদের ভিজিট করার কথা। কিন্তু রিপ্রেজেন্টেটিভরা নিয়ম অমান্য করে প্রতিদিন ডায়াগনস্টিক সেন্টার,ক্লিনিক এবং ফার্মাসী গুলোতে প্রবেশ করে চিকিৎসকদের সঙ্গে খোশ গল্পে মেতে উঠছেন তারা। এ ছাড়া রোগীদের প্রেসক্রিপশন নিয়ে তাদের কোম্পানির ষুধ লেখা আছে কি না তা দেখতে রোগীদের ওপর প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন তারা। একটি সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি কোম্পানি থেকে বিক্রয় প্রতিনিধিদের ওপর একটি চাপ থাকে নির্দিষ্ট ওষুধের বিক্রি বাড়ানোর। আর ওষুধের বিক্রি বাড়ানো ও লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ওপর নির্ভর করে তাদের চাকরি এবং প্রমোশন। একারণে প্রেসক্রিপশনে প্রতিটি কোম্পানির প্রতিনিধিরা ঔষুধ লেখাতে অনেক সময় বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। চিকিৎসকদের ম্যানেজ করতে প্রয়োজনীয় উপহার কোম্পানির পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হয়। আর এ কারণেই চিকিৎসকেরা তাদের পছন্দের কোম্পানির ওষুধ লিখতে প্রভাবিত হন। বাগমারা আসা কয়েকজন বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, প্রতি তাদেরকে সপ্তাহে একটা টার্গেট দেয়া হয়। ওই টার্গেট অনুপাতে চিকিৎসকরা প্রেসক্রিপশন দিচ্ছেন কিনা, তাও মনিটরিং করতে হয়।
কোম্পানিকে বিশ্বাস করানোর জন্য মোবাইলে প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলে রাখতে রোগীর প্রেসক্রিপশন দেখতে হয়।উল্লেখ্য,সপ্তাহে দুই দিন চিকিৎসকদের সঙ্গে ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের (রিপ্রেজেনটেটিভদের) দেখা করার সময় আছে। কিন্তু এ নিয়ম তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা নির্ধারিত সময়ের বাইরেও চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা করেন। এতে রোগীরা নাকাল আস্থায় পড়েছেন। এছাড়া তাদের কারণে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। চিকিৎসা নিতে আসা রোগি ও তাদের স্বজনরা চরম দুর্ভোগে পড়ছেন।