ভারতে ১৪০ কোটির বেশি মানুষের বসবাস। জনবহুল দেশটিতে রতন টাটার চেয়ে বেশি সম্মান ও ভালোবাসা খুব কম শিল্পপতির কপালেই জুটেছে।
রতন টাটা—ভারতের বিশ্ববিখ্যাত শিল্পপতিদের একজন। দেশটির অন্যতম বৃহত্তম শিল্পপ্রতিষ্ঠান টাটা সন্সের ইমেরিটাস চেয়ারম্যান। ভারতের মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বুধবার তিনি মারা যান। বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
ধনকুবের হলেও জনহিতৈষী ব্যক্তি হিসেবে রতন টাটার খ্যাতি ও সম্মান ভারতজোড়া। ভারতের অর্থনীতির অগ্রযাত্রায় তাঁর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।
ভারতের বিখ্যাত টাটা পরিবারে ১৯৩৭ সালে রতন টাটার জন্ম। শৈশবে পারিবারিক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে। রতন টাটার বয়স যখন ১০ বছর, তখন তাঁর মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়ে যায়। রতন টাটা বেড়ে ওঠেন দাদির কাছে। যদিও এই পরিস্থিতি তাঁকে ধীরস্থির হতে এবং পারিবারিক মূল্যবোধের গভীরতা সম্পর্কে উপলব্ধি করতে বেশ সহায়তা করেছিল।
অকৃতদার ও লাজুক স্বভাবের রতন টাটা আন্তর্জাতিক মহলে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ভারতীয় ব্যবসায়িক নেতাদের একজন। দুই দশকের বেশি সময় টাটা শিল্পগোষ্ঠীর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন শেষে ২০১২ সালে ৭৫ বছর বয়সে অবসর নেন রতন টাটা।
রতন টাটা স্বনামধন্য শিল্পপতি। দীর্ঘদিন নেতৃত্ব দিয়েছেন টাটা শিল্পগোষ্ঠীকে। এত দিনে সমালোচনা ও বিতর্ক তাঁকে খুব কমই স্পর্শ করেছে। ব্যবসায়িক দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মক্ষেত্রে বলিষ্ঠ নীতির জন্য তিনি পরিচিত ছিলেন।
রতন টাটা তাঁদের পারিবারিক ব্যবসাকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তাঁর হাত ধরেই টাটা শিল্পগোষ্ঠীর রাজস্বের পরিমাণ বহু গুণ বেড়ে ২০১১-১২ সালে ১০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়।
শুরু ও সাফল্য
ভারতের বিখ্যাত টাটা পরিবারে ১৯৩৭ সালে রতন টাটার জন্ম। শৈশবে পারিবারিক জটিলতার মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে। রতন টাটার বয়স যখন ১০ বছর, তখন তাঁর মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়ে যায়। রতন টাটা বেড়ে ওঠেন দাদির কাছে। যদিও এই পরিস্থিতি তাঁকে ধীরস্থির হতে এবং পারিবারিক মূল্যবোধের গভীরতা সম্পর্কে উপলব্ধি করতে বেশ সহায়তা করেছিল।
অতি ধনী পরিবারের বিলাসবহুল বাড়িতে বেড়ে ওঠা রতন টাটার। পড়াশোনা করেছেন স্থাপত্য ও কাঠামোগত প্রকৌশল নিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে। হার্ভার্ডে অ্যাডভান্সড ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামে পড়াশোনা করেছেন তিনি। এরপরও বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান আইবিএমে চাকরির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
সময়টা ১৯৬২ সাল। টেলকোতে (এখন টাটা মোটরস) কাজ শুরু করেন রতন টাটা। এই শিল্পগোষ্ঠীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরাসরি কাজ করার দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর ঝুলিতে।
১৯৭১ সালে ন্যাশনাল রেডিও অ্যান্ড ইলেকট্রনিকসের পরিচালক হন তিনি। শিক্ষানবিশ থেকে পরিচালক—বন্ধুর এ যাত্রা রতন টাটা সফলতার সঙ্গে পার হন মাত্র ৯ বছরে। তবে কখনোই কঠোর পরিশ্রম, বাস্তবতা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেননি। নিজেকে ক্রমাগত দক্ষ ও অভিজ্ঞ করে তুলেছেন। সেই সঙ্গে কাজের জায়গায় উন্নতি করেছেন।
২০০০ সালে ভারত সরকার রতন টাটাকে পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত করে। ২০০৮ সালে পান পদ্মবিভূষণ। দুটিই ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদকের তালিকায় রয়েছে। ভারত ও ভারতের বাইরের বহু বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানজনক ডিগ্রি দিয়েছে। তবে রতন টাটা তাঁর দীর্ঘ জীবনে যেটা সবচেয়ে বেশি পেয়েছেন, তা সাধারণ মানুষের সম্মান ও ভালোবাসা।
ঝুঁকি নিয়েছেন বারবার
ভারতের যে প্রান্তেই যান না কেন, একটি ব্র্যান্ড সবখানে চোখে পড়বে। সেটি টাটা। এমনকি ভারতজুড়ে এমন একজন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন, যিনি টাটার কোনো পণ্য ব্যবহার করেননি। টাটার সেবা নেননি। লবণ থেকে ইস্পাত, মোটর—টাটা খুঁজে পাবেন সবখানেই। বলা যায়, টাটা হলো ভারতে সবখানে ছড়িয়ে পড়া ব্র্যান্ড।
তবে এ যাত্রা সহজ ছিল না। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও টাটাকে এগিয়ে নিতে রতন টাটা বড় ধরনের সাহস দেখিয়েছেন। যদিও বড় ধরনের অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সীমিত রেখেছিলেন রতন টাটা।
১৯৯১ সাল, রতন টাটা একাধারে টাটা সন্স ও টাটা ট্রাস্টের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। তিনি এমন এক সময়ে টাটা শিল্পগোষ্ঠীতে পুনর্গঠন শুরু করেন, যখন রাষ্ট্র হিসেবে ভারত অর্থনৈতিক উদারীকরণের পথে হাঁটছিল।