বোরো চাষীদের মুখে স্বস্তির হাসি, শ্রমিক সংকট প্রকট

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি

পাবনার চাটমোহরে পুরোদমে চলছে বোরো ধান কাটার কাজ। ভাল ফলন ও দাম পাওয়ায় এবং নির্বিঘেœ ফসল ঘরে তুলতে পারায় বোরো চাষীদের চেখে মুখে এবার স্বস্তির হাসি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে, শ্রমিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করায় পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে বিলম্ব হচ্ছে। শ্রমিকের মজুরী বৃদ্ধি পাওয়ায় শ্রমিক লাভবান হলেও বাড়ছে কৃষকের উৎপাদন খরচ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিলের এক ফসলী আগাম বোরো ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। বোরো চাষের পূর্বে বাড়তি ফসল পেতে যে সকল কৃষক জমিতে সরিষা চাষ করেন সেসকল জমির ধান কাটার কাজ এখন পুরোদমে চলছে।

চাটমোহর কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে চাটমোহরে বোরো চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯,৬০০ হেক্টর। অর্জন হয়েছে ৯,৬৫০ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ বেশি হয়েছে। চাটমোহরে সাধারণত হাইব্রীড এসএল ৮, হীরা, সুরভী ওয়ান, উফশী ব্রিধান ২৮, ব্রিধান ২৯, ব্রিধান ৫৮, ব্রিধান ৮১, ব্রিধান ৮৪, ব্রিধান ৯২, ব্রিধান ৯৬ ও ব্রিধান ১০০ জাতের ধান চাষ বেশি হয়ে থাকে।

উপজেলার নিমাইচড়া গ্রামের কৃষক রুহুল আমীন পলাশ জানান, প্রায় পনেরো বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন তিনি। এ ছাড়া তাদের তিনটি অগভীর সেচ যন্ত্রের অধীনে প্রায় একশত বিঘা জমিতে বোরো চাষ করছেন অন্য কৃষকেরা। বিঘা প্রতি বিশ থেকে বাইশ মন হারে ধানের ফলন পাচ্ছেন কৃষক। এছাড়াও দুই-তিন হাজার টাকার খড় পাওয়া যায়। বর্তমান বাজারে প্রতি মন ধান ১,০৫০ টাকা থেকে ১,১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষক বিঘা প্রতি দশ হাজার মতো লাভ পাচ্ছেন। তবে যে সকল চাষী অন্যের জমি বাৎসরিক ইজারা নিয়ে ধান চাষ করেন তারা কম লাভবান হচ্ছেন।

উপজেলার ধানকুনিয়া গ্রামের কৃষক মোন্নাফ হোসেন জানান, জমি চাষ করা, মই দেওয়া, সার প্রয়োগ, চারা রোপণ, জমির আগাছা উৎপাটন, কীটনাশক প্রয়োগ, কর্তন, বাড়িতে পরিবহন করা, মাড়াইসহ সব মিলিয়ে এক বিঘা জমিতে বোরো চাষ করতে প্রায় বারো থেকে তেরো হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বিঘাপ্রতি ২৪ থেকে ২৬ মন ধান পাওয়া যায়। সেচ চার্জ বাবদ সেঁচ যন্ত্রের মালিককে পাঁচ ভাগের এক ভাগ ধান দিতে হয়। স্বাভাবিক ভাবে বিঘা প্রতি দশ হাজার টাকার মতো লাভ পাচ্ছেন কৃষক।

নিমাইচড়া গ্রামের অপর কৃষক জিল্লুর রহমান জানান, এবার পঁচিশ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন তিনি। কৃষি উপকরণের দাম বেড়েছে। ধানের দামও বেড়েছে। নিজেদের ও গবাদী পশুর খাদ্যের চাহিদা মেটাতে কৃষক বোরো ধান চাষ করেন। ঘুর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে পাকা ধান মাটিতে নুয়ে পরেছে। এক বিঘা জমির ধান কাটতে শ্রমিক খরচ পরছে প্রায় ছয় হাজার টাকা। শ্রমিক সংকটের কারণে অনেকের পাকা ধান জমিতেই রয়ে গেছে।

কোলা গ্রামের কৃষি শ্রমিক হযরত আলী জানান, বর্তমান একজন শ্রমিকের প্রতিদিনের পারিশ্রমিক ৮০০ টাকা। চুক্তি ভিত্তিক এক বিঘা জমির ধান কাটতে শ্রমিক নিচ্ছেন ছয় থেকে সাত হাজার টাকা।

চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এএ মাসুম বিল্লাহ জানান, এখন পর্যন্ত ৫৮ শতাংশ জমির বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে। হেক্টর প্রতি গড় ফলন পাওয়া যাচ্ছে ৬.৫ (ছয় দশমিক পাঁচ) মেট্রিক টন। তীব্র রোদ ও খড়ার সময় কৃষককে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছি বিধায় তেমন ক্ষতি হয়নি। ধানের ভাল দাম পাওয়ায় কৃষক লাভবান হচ্ছেন।