বেড়ায় কোরবানির গরুর দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত খামারিরা

ওসমান গনি, বেড়া (পাবনা) প্রতিনিধি ঃ
কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে গরু লালন পালনে ব্যস্ত সময় পার করছেন পাবনার বেড়া উপজেলার গরুর খামারিরা। উপজেলার চরাঞ্চল সহ বিভিন্ন স্থানে অনেকেই ছোট-বড় গরুর খামার তৈরি করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। তবে খামারিরা বলছে এ বছর সব ধরনের গো- খাদ্যর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমান গো- খামারে খুব একটা লাভ হচ্ছে না।
কিন্তু অন্যান্য ব্যবসার তুলনায় এ এলাকায় কৃষকরা গরু পালনে ঝুঁকে থাকে বেশি, তাঁর কারণ একসাথে অনেক পুঁজি লাগে না, দিনে দিনে স্বল্প খরচ করার কারণে খামারিদের বাড়তি ঝামেলা কম হয় এবং বছর শেষে একসাথে অনেকগুলো টাকা হাতে পাওয়ায়। কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে তারা গরু লালন পালনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় ছোট-বড় প্রায় চার হাজার গো- খামারি রয়েছে। সরেজমিনে গত মঙ্গলবার উপজেলার হাটুরিয়া – নাকালিয়া ইউনিয়নের চর নাকালিয়া ও চর সাঁড়াশিয়া গ্রাম ঘুরে দেখা যায়,প্রায় প্রতিটি বাড়িতে এক থেকে একাধিক দেশি গরু, মহিষ, ছাগল , ভেড়া কোরবানির জন্য জোগাল বা প্রস্তুত করা হয়েছে।
এ সময় কথা হয় চরসাঁড়াশিয়া গ্রামের ক্ষুদ্র খামারি সাত্তার বেপারি, ঠান্টু বেপারি, আ: আজিজ মোল্লা, আলামিন মোল্লা, হুমায়ুন, বাবলু মোল্লা সহ অনেক খামারির সাথে। তারা বলেন, বর্তমান হাট বাজারে সব ধরনের গো-খাদ্যের দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে তাছাড়া এবছর প্রচন্ড খরতাপে চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ জমিতে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো দূর্বা ( কাঁচা ঘাস) ও অন্যান্য চাষকৃত অধিকাংশ জমির কাঁচাঘাস রোদে পুড়ে বিনষ্ট হয়ে যাওয়ায় এবার খামারিরা গো-খাদ্য হিসেবে হাট- বাজার থেকে ভুষি সহ বিভিন্ন শুকনো খাদ্যের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। খামরিরা জানান, প্রতি বস্তা ভুষি ১ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার টাকা , খড় ৫ থেকে ৬শ’ টাকা মণ, ফিড ২৫ কেজির বস্তা ৮ শ’ থেকে ১হাজার ৪০০ টাকা, কুড়া চল্লিশ কেজির প্রতি বস্তা ৮ শ’ টাকা, গম চল্লিশ কেজি প্রতি বস্তা ১ হাজার ৫০০ টাকা, ভুট্টা ৪০ কেজির প্রতি বস্তা ১ হাজার ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খামারিরা বলেছেন , প্রচন্ড খরতাপে জোগালে গরুর শরীরে তুলনামূলকভাবে মাংস বাড়ছে না । তাছাড়া সব ধরনের গো- খাদ্যর মূল্য বৃদ্ধির কারণে গরুর উপর খরচ ভাঙছে বেশি তাই কোরবানির জন্য প্রস্তুতকৃত গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়ার আশানুরূপ দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন খামারিরা। তারা আরও জানান, কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা গরুর প্রতি মণ ওজন হতে খরচ পড়ে যাচ্ছে ৩০- ৩২ হাজার টাকা। সেই হিসাব ধরে হাটে গরু বিক্রি করতে গেলে গরু প্রতি খুব একটা লাভ থাকে না। আবার কোরবানি ঈদ উপলক্ষে পার্শ্ববতী দেশ ভারত থেকে অবৈধ এবং বৈধভাবে বাংলাদেশে যদি গরু আসে তাহলে ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন এ অঞ্চলের গরু খামারিরা ।
এ বিষয়ে বেড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মিজানুর রহমান এ প্রতিবেদককে জানান, এ উপজেলায় ৩ হাজার ৩৫০ জন খামারি ৮৮ হাজার ৭৬৫ টি গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন। তিনি আরও জানান, বেড়া উপজেলায় কোরবানি উপলক্ষে চাহিদা রয়েছে ৬৫ হাজার ৩৮০ টি পশু, চাহিদার তুলনায় প্রস্তুতকৃত পশুর সংখ্যা বেশি থাকলেও খামারিরা কম-বেশি লাভবান হবেন বলে তিনি আশাবাদী।#
ছবিসহ