আমার রাজনীতির প্রেরণা

।! আমিরুল ইসলাম রাঙা।
১৯৬৭ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারী উদযাপনের মধ্যে দিয়ে আমার রাজনীতি শুরু। আমার বয়স তখন ১৪ বছর। পাবনা শহরের রাধানগর মজুমদার একাডেমীর সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম। যদিও আমার এইটে পড়ার কথা ছিল। আমাদের স্কুলটি অত্যন্ত প্রাচীন এবং এডওয়ার্ড কলেজের আঙ্গিনায় মনোরম পরিবেশে অবস্থিত। স্কুলের উত্তর পশ্চিম দিকে কলেজ ক্যাম্পাস। স্কুলের পুর্বদিকে ইছামতি নদী এবং নদীর ওপর পাড়ে পাবনা সদর থানা। স্কুলের দক্ষিন দিকে পাবনা আলিয়া মাদ্রাসা অবস্থিত। বৃটিশ এবং পাকিস্তান আমলে এডওয়ার্ড কলেজ ছিল শিক্ষার সুতিকাগার। পাঁচ/ দশ জেলা নয় অবিভক্ত ভারতের ছাত্র-ছাত্রীরা এডওয়ার্ড কলেজে এসে পড়াশুনা করতেন।

তৎকালীন সময়ে রাধানগর মজুমদার একাডেমী তথা আর,এম একাডেমি ছিল জেলার সর্ব বৃহৎ একটি স্কুল। এডওয়ার্ড কলেজের আঙ্গিনায় স্কুলটির অবস্থান হওয়ায় স্কুল ও কলেজকে একই প্রতিষ্ঠান মনে হতো। এডওয়ার্ড কলেজ ছিল তৎকালীন সময়ে ছাত্র রাজনীতির প্রধান কেন্দ্রস্থল। শিক্ষার পাশাপাশি ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডেও কলেজের সুনাম ছিল দেশব্যাপী। তৎকালীন সময়ে ছাত্র আন্দোলন এবং কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচনের প্রচারণা আমাদের কিশোর মনের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতো । এডওয়ার্ড কলেজের ঐতিহাসিক আমতলায় ছাত্র নেতাদের জ্বালাময়ী বক্তৃতা শোনার নিয়মিত শ্রোতা ছিলাম। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সেই নৃত্য প্রচার এখনো চোখের সামনে ভেসে উঠে। ছাত্রলীগ এবং ছাত্র ইউনিয়নের নির্বাচনী প্রচারনা দেখে খুব মজা পেতাম। ছোট ছোট রঙ্গীন লিফলেটে প্রার্থীদের নাম থাকতো। কে কোন পরিষদ বা কোন সংগঠন লেখা দেখলেই বুঝতাম। আমরা ছোট ছেলেরা লিফলেট সংগ্রহ করতাম আর বড়দের সাথে প্রচারণায় শরীক হতাম। মজা পেতাম যখন নৃত্য করে প্রচারণা চলতো। ভোট দিচ্ছেন কাহাকে? সবাই বলতো মুনছুর আলী চুনুকে। আরেক দল বলতো ভোট দিচ্ছেন কাহাকে? সবাই বলতো সোহরাব উদ্দিন সোবাকে। বড়দের সাথে এমন প্রচারে আমরাও শরীক হতাম। এমনকি পাড়ায় এসে সমবয়সী বন্ধুদের সামনে জ্বালাময়ী ভাষন দেবার আসর বসাতাম। তখন ভাল বক্তা হবার স্বপ্ন দেখতাম। এভাবেই মনের মধ্যে রাজনীতির বীজ অঙ্কুরিত হতে থাকে।

ষাটের দশক হলো রাজনীতির স্বর্ণযুগ। পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল আইয়ুব খানের এক দশকের শক্ত মসনদ ভেঙ্গে দেবার যুগ। যা থেকে অতি অল্প সময়ের মধ্যে বাঙালী জাতি অর্জন করে আজকের বাংলাদেশ। আমার শিশুকালে দেখা আইয়ুব খানের স্বৈরশাসন, ১৯৬২ এর শিক্ষা কমিশন আন্দোলন এবং ঐ একই বছরে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা। ১৯৬৫ সালে আইয়ুব খান এবং ফাতেমা জিন্নাহ’র প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ঐ একই বছরে পাক-ভারত যুদ্ধের ঘটনা এখনো মানসপটে অমলিন হয়ে আছে। ১৯৬৬ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে শেখ মুজিবুর রহমান পাবনা সফরে আসেন । টাউন হল ময়দানে বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। আমার জীবনে প্রথম শেখ মুজিবুর রহমানকে কাছে থেকে দেখা এবং তাঁর বক্তৃতা শোনার সুযোগ পেয়েছিলাম । শুধু তাই নয় উনার আগমনের পূর্বে পাড়ার বড় ভাইদের সাথে ক্ষুদ্র কর্মী হবার সুযোগ ঘটেছিল। পাড়ার বড় ভাই মখলেছুর রহমান মুকুল, সাঈদ আকতার ডিডু, মিজানুর রহমান তরুণ ( যারা তিনজনই পাবনার প্রথম সারির মুক্তিযোদ্ধা) বাড়ীর দুইশত গজ দুরে মক্তব মোড়ে আব্দুল মান্নান গোড়া ( মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার), মোহররম ( শহীদ মুক্তিযোদ্ধা) রমজান আলী, মনছের আলী, আব্দুল কাদের এবং সোলেমান দোকানদার ( মুক্তিযুদ্ধে নক্সালপন্থিদের হাতে নিহত) প্রমুখদের সাথে শেখ মুজিবুর রহমানের আগমন নিয়ে কাজ করি। উনার পাবনা আগমনের দিন মক্তবে অভ্যর্থনা এবং মিছিল করে টাউন হল পর্যন্ত যাওয়া সব কিছুতে ছিলাম একজন রাজনৈতিক কর্মীর মত। সেদিন পাবনা টাউন হলে শেখ মুজিবুর রহমানের শ্রুতিমধুর ভাষন আমাকে বিমোহিত করেছিল। সেদিন জনসম্মুখে তিনি ৬দফা ঘোষণা করেন এবং পরবর্তী কয়েকদিনের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ।

তখন থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর নতুন করে নির্যাতন শুরু হয়। বলা যায় এই উপমহাদেশের প্রাচীন এই দলটি সৃষ্টির পর কঠিন দু’টি সময় পার করেছে। তার একটি আইয়ুব খাঁনের শাসনকালে এবং আরেকবার ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে নিহত হবার পরে। এ ব্যাপারে একটি বিষয়ে অপ্রাসঙ্গিকভাবে বলি। এদেশের দুটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং জাসদ সৃষ্টির জননী ছিল ছাত্রলীগ। আরেকটি ব্যাপার হলো দুটি দলই সৃষ্টির সময় ভূমিকম্পের মত কম্পন করে সৃষ্টি হয়েছিল। তবে দু’দলের ব্যতিক্রম ও ব্যবধান অনেক। আওয়ামী লীগ সৃষ্টির অল্পদিনের মধ্য অল্প সময়ের জন্য পাকিস্তানের ক্ষমতায় বসার সুযোগ পেয়েছিল । কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তানের কুচক্রীমহল ষড়যন্ত্র করে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে প্রথমে জেনারেল সাঈদ ইসকেন্দার ও পরে জেনারেল আইয়ুব খান অবৈধভাবে সামরিক শাসন কায়েম করে। যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতার হারানোর পর ১৯৫৭ সালে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী দলত্যাগ করে ন্যাপ গঠন করেন। আওয়ামী লীগের এই বিভক্তি পাকিস্তান সামরিক জান্তার মসনদ দখলে রাখার সহায়ক হয়েছিল । পরবর্তীতে পাক সরকার ন্যাপকে নিরাপদে রেখে আওয়ামী লীগ নির্মুলে দমন নিপীড়ন চালানো শুরু করে । ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে ফাঁসিতে লটকানোর চক্রান্ত শুরু হয় । ইতিমধ্যে ন্যাপের ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে মতিয়া ও মেনন গ্রুপ বিভক্ত হয় এবং ন্যাপও ভেঙ্গে যায়। ন্যাপ ভাসানী ও ন্যাপ মোজাফ্ফর নামে দুই দল হয়। এমনতর সময় রাজনীতির নতুন মেরুকরন ঘটতে থাকে। আগরতলা মামলা প্রত্যাহার, রাজবন্দীদের মুক্তি ও সামরিক শাসন অবসানের দাবীতে সারাদেশে ছাত্র, শ্রমিক ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা ব্যাপক আন্দোলন শুরু করে। তীব্র গণআন্দোলনে ১৯৬৯ সালে ২২শে ফেব্রুয়ারীশেখ মুজিবুর রহমান মুক্তি দেন এবং পরে আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে নেন।

প্রসঙ্গগত উল্লেখ্য আমার জীবনে প্রথম ১৯৬৭ সালে একুশে ফেব্রুয়ারী উদযাপন করি। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর ১৯৬৭ সালে পাবনায় শ্রেষ্ঠ একুশ উদযাপন করা হয়েছিল । বলা যায় ১৯৬৭ – ৬৮ – ৬৯ -৭০ এর একুশ ছিল বাঙালী জাতীয়তাবাদের চেতনা এবং প্রেরণার প্রতীক। একুশ হয়ে উঠে পাকশাসকের বিরুদ্ধে মরন আঘাত । সেই অস্ত্র বুকে ধারন করে ৬৭ সালে প্রথম একুশ উদযাপনে শরীক হয়েছিলাম। সামরিক শাসন দীর্ঘ সময় চলার কারনে রাজনীতি তখন অনেকটা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল। কিন্তু ঐ সময়ে সারাদেশে ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনগুলি শক্তিশালী অবস্থানে ছিল। পাবনায় তখন ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন ( মেনন) খুবই শক্তিশালী সংগঠন ছিল। ছাত্র ইউনিয়ন ( মতিয়া) তাদের নেতাকর্মীর সংখ্যা কম হলেও তারা ছিল খুব সুশৃঙ্খল ও প্রগতিশীল। তখন ছাত্রলীগের প্রধান নেতা ছিলেন আলী রেজা, রবিউল ইসলাম, আবুল এহসান গোরা, আতাউল হক হুকু , সোহরাব উদ্দিন সোবা, আব্দুস সাত্তার লালু, রফিকুল ইসলাম বকুল, সাহাবুদ্দিন চুপ্পু , ফজলুল হক মন্টু, আব্দুর রহিম পাকন, রেজাউর রহিম লাল, আঃ কাদের, অখিল রঞ্জন বসাক ভানু , খোন্দকার আওয়াল কবীর, ইশারত আলী জিন্নাহ। ছাত্র ইউনিয়ন ( মেনন) গ্রুপে ছিল টিপু বিশ্বাস, আব্দুল মতিন, বারী সরদার, মন্তাজ বিশ্বাস, জিয়াউল ইসলাম মাসুদ, শহীদুর রহমান শহীদ, নূরুন্নবী হুমু, তোতা, আব্দুল হালিম, শাহ আলম বাচ্চু প্রমুখ। ছাত্র ইউনিয়ন ( মতিয়া) গ্রুপের প্রধান নেতা ছিলেন মতিউর রহমান বাচ্চু, শফি আহমেদ , রবিউল ইসলাম রবি, শিরীন বানু মিতিল, জাহিদ হাসান জিন্দান, সুলতান আহমেদ বুড়ো, শহীদ, রইস উদ্দিন, মতিয়ার রহমান প্রমুখ। এই তিন সংগঠনের প্রধান দুইটি দল ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন ( মেনন) গ্রুপের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার সাথে প্রায় মারামারি হতো। এমনকি দুই গ্রুপের বহু বার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। এই রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে চলতে থাকে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে আন্দোলন।

১৯৬৭ সালের একুশে ফেব্রুয়ারী উদযাপনের জন্য জেলা ছাত্রলীগ ব্যাপক প্রস্ততি গ্রহন করে । পাড়ায় পাড়ায় ছাত্র-কর্মী, ছোট-বড়, মুরুব্বি সবার মধ্যে ব্যাপক তোড়জোর শুরু হয় । প্রতিযোগীতা শুরু হয় কোন পাড়া থেকে সবচেয়ে বেশী লোক জমায়েত করতে পারবে। আমাদের এলাকায় আগের রাতে রাধানগর মক্তব পয়েন্টে নেতাকর্মী উপস্থিত হতে থাকে। নেতাদের উদ্যোগে খিচুড়ী রান্না করা হয়। সারারাত জেগে মাঝরাতে খিচুড়ী খাওয়া, ফুল সংগ্রহ করে মালা বানানো হয়। তখনতো একুশে ফেব্রুয়ারীর প্রধান কর্মসূচি হতো প্রভাত ফেরী করে দিবসের সুচনা করা। তখন কোথাও শহীদ মিনার ছিল না। এডওয়ার্ড কলেজের ব্যায়ামাগার ও টেনিস কোর্টের মাঝে বাঁশ, কাঠ, খুটি আর কাগজ কেটে অস্থায়ী শহীদ মিনার বানানো হয়েছিল। আমরা ভোরের সূর্যোদয়ের আগে পাড়া মহল্লা থেকে দলে দলে প্রভাত ফেরী বের করে শহরে যাই। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে হাজির হই। এরপর একসাথে ছাত্রলীগের দীর্ঘ মিছিল নিয়ে এডওয়ার্ড কলেজ অভিমুখে রওনা হই। বিশাল মিছিল সহ এডওয়ার্ড কলেজের অস্থায়ী শহীদ মিনারে গিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পন করি। আমার এটাই হলো রাজনীতিতে হাতে খড়ি। ১৯৬৭ সালে পাবনার ঐতিহাসিক ভূট্টা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলাম।

এরপর ১৯৬৮ সালে ছাত্রলীগের স্কুল কমিটি গঠন করা হলে শফিকুল ইসলাম মানিক সভাপতি এবং আমি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই। ১৯৬৮ সালে রাজবন্দীদের মুক্তির দাবীতে প্রায়ই মিটিং,মিছিলে শরীক হতাম। পাবনায় বহুল আলোচিত ভুট্টা আন্দোলনে আটক বন্দীদের মুক্তির দাবীতে মিছিল করা হতো। তখন আমি পাড়া ছেড়ে শহরমুখী হওয়া, পার্টির অফিসে যাওয়া আসা করতাম। ১৯৬৯ ও ৭০ সালে ঢাকায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে শরীক হওয়ার সুযোগ হয়। তখন থেকে ফুলটাইম রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে নিয়োজিত হয়েছিলাম। ১৯৬৮ -৬৯ সালে গনআন্দোলনে মিছিল সমাবেশে অংশ নেওয়া থেকে বাদ পড়েছি বলে মনে পড়ে না। স্কুল ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন সহ ৬৯ এ গন-আন্দোলনের সময় ছাত্র ইউনিয়নের দুইগ্রুপ ও ছাত্রলীগের সমন্বয়ে স্কুল ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ পাবনা জেলা কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক নির্বাচিত হয়েছিলাম। ১৯৭০ সালে জানুয়ারী মাসে পাকিস্তান দেশ ও কৃষ্টি বই বাতিলের দাবীতে আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে জড়িত ছিলাম। তখন জেল জুলুম নির্যাতন ও মৃত্যু ভয়কে উপেক্ষা করে নিরন্তন চেষ্টা করেছি সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারের মত শহীদ হওয়ার জন্য। তবে শহীদ হতে না পারলেও ১৮ বছর বয়সে ভয়ানক নির্যাতনের পর প্রায় তিন বছর জেলে থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল!!

মহান একুশের ৬৪ বছর পার হয়ে যাচ্ছে। যার প্রায় ৫০ বছর দেখার সৌভাগ্য হলো। গত ৬৪ বছর একুশ কখনো এসেছে নীরবে, আবার কখনো সরবে। কখনো অনুষ্ঠিত হয়েছে অনাড়ম্বর, আবার কখনো আড়ম্বর। পাকিস্তান শাসনামলের সময়ে একুশ, স্বাধীনতাত্তোর যুদ্ধ ও রাজনীতি বিধ্বস্ত দেশে একুশ কখনো পালিত হয়েছে আবার কখনো পালন করা সম্ভব হয়নি। আমার জীবনে একুশে ফেব্রুয়ারী থেকে অনেক পেয়েছি । আমাকে রাজনীতির পাঠশালায় স্বরবর্ণ শিখেয়েছে। ইতিহাসের সব দারুন দারুন তীর্থস্থান দর্শন করিয়েছে। ১৯৬৯ এর এক স্মৃতি এখনো মনের মধ্যে অমলিন হয়ে আছে। ঢাকায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে গিয়ে ” জীবন থেকে নেওয়া ” ছবির শহীদ মিনারের শ্যুটিং দেখেছিলাম। যাদের মধ্য পাবনার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বর্তমান কমান্ডার হাবিবুর রহমান হাবিব , ডিপুটি কমান্ডার আবদুল লতিফ সেলিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ হেল কাফি সহ অনেকেই ছিল। আমার জীবনের ৬৭ – ৬৮ – ৬৯ – ৭০ এর একুশ যেমন দেখেছি তেমন দেখছি গত কয়েক দশকের ঐতিহ্যমন্ডিত একুশ। একুশ আজ দলমত নির্বিশেষে সার্বজনীন উৎসব। একুশ আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বিশ্ব দরবারে মর্যাদার আসন অর্জন করেছেন।

এই প্রাপ্তির সাথে অপ্রাপ্তি অনেক। এখনো রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে সর্বত্র বাংলা চালু হয়নি। শহীদের মর্যাদা দিবস কেন্দ্রীক রয়ে গেছে। শহীদ মিনার সংরক্ষন না করে অবমাননা চলছেই। শহীদ দিবসের ঐতিহ্য প্রভাতফেরী এখন বিলীন । শোক প্রকাশের বদলে একুশ আজ আনন্দ উৎসবে পরিনত হয়েছে । শোকের প্রতীক কালো কাপড় বিলীন হয়ে রঙ্গীন কাপড় স্থান পেয়েছে। একুশের অনুষ্ঠান আজ বইমেলা কেন্দ্রীক রুপ নিয়েছে । ভাষা শহীদ, ভাষা সংগ্রামী আর রাজনৈতিক নেতা কর্মীরা একুশের দিবসে উপেক্ষিত। এখন মধ্যরাতে প্রভাতফেরী করা হয়। যেটা একুশের চেতনায় খন্ডিত ইতিহাস। এমন একুশ কি আমাদের কাম্য ? আমি মনে করি অবশ্যই নয় !! পরিশেষে কামনা করি অবিলম্বে একুশের প্রকৃত চেতনা আমাদের মাঝে ফিরে আসুক। একুশ হোক বাংলার – একুশ হোক বাঙালীর। শহীদ স্মৃতি অমর হোক – মহান একুশ অমর হোক।

আমিরুল ইসলাম রাঙা
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিক
পাবনা।