// সাজ্জাদ হোসেন সাজু (ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি)
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা সদর এলাকা দিয়ে প্রবহমান ভুবেনশ্বর নদটি গত ২০ বছর ধরে কচুরী পানা ও জঙ্গলাকীর্ণ অবস্থায় পরিত্যক্ত জলাশয় হিসেবে পড়ে রয়েছে। উপজেলা সদরের একমাত্র নদের অতিত ঐতিহ্য আজ আর নেই। তবুও সংস্কারের নেই কোনো উদ্যোগ। এতে হারিয়ে গেছে নদীমাতৃক চরভদ্রাসনের আদি ঐতিহ্য। জানাযায়, ভুবেনশ্বর শাখা নদটি পার্শ্ববতী সদরপুর উপজেলার আকোটেরচর ইউনিয়নের পদ্মা নদী গর্ভ থেকে বের হয়ে উপজেলা পরিষদের সামনে দিয়ে বিভিন্ন গ্রাম ও ইউনিয়ন ভেদ করে জেলা শহর পর্যন্ত প্রায় ৩০ কি.মি. এলাকার জলমহল নিয়ে বিস্তৃত। আবহাওমান কাল ধরে ভুবেনশ্বর নদটি ছিল উপজেলাবাসীর বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। এ নদ দিয়ে ছোট বড় নৌকা চলাচল, লঞ্চে করে জেলা শহর সহ বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করত এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর সারা বছরের মাছের অভাব পূরন, গোসলকার্য, সেচ ও কৃষি জমির উর্বরতা ফিরিয়ে দিত এ নদটি।
এ ছাড়া বর্ষকালে নৌকা বাইচ, কলা গাছের ভ্যাইরা বাইচ ও সাঁতার প্রতিযোগীতা সহ বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল ওই নদ। কালের বিবর্তনে নদটির প্রায় সমস্ত এলাকা পলি মাটি পড়ে নাব্যতা হারিয়ে গেছে। বর্ষার ¯্রােতে কচুরীপানা ও তৃণলাদি ভেসে এসে ভরে যায় নদটি। ফলে নদটি এখন আর মানুষের কোনো কাজে আসছে না। এখন শুধু মশা, মাছি ও সর্প বিচরনের অভয়ারণ্যে পরিনত হয়েছে এ নদ। অবশ্য, ২০১৯ সালে নদটি সচল করার জন্য উপজেলায় একটি নদী রক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সে সময়ে ওই কমিটির উদ্যোগে নদটি সংস্কার, পরিস্কার ও খননের জন্য মানববন্ধন ও স্মারকলিপি পেশ সহ বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে সরকারের কাছে দাবী দাওয়া তুলে ধরা হয়েছিল। এ ব্যপারে বুধবার উপজেলা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ মোতালেব হোসেন মোল্যা জানান, “ প্রায় তিন বছর আগে উপজেলার একমাত্র নদটি সচল করতে এবং নদের প্রাণ ফিরে পেতে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি
পালন করে সরকারের কাছে দাবী তুলেছিলাম। আমাদের দাবীর মুখে কিছুটা কাজও হয়েছিল। কিন্তু গত তিন বছরে কাজের গতি ঝিঁমিয়ে পড়েছে বিধায় আবারও নদটি গহীন জঙ্গলের অভায়ারণ্যে পরিনত হয়েছে। তিনি আরও জানান, উপজেলার একমাত্র নদটির প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য জন্য আবারও আমরা কার্যক্রম শুরু করবো”। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, উপজেলার ঘর গৃহস্থরা সারা বছর এ নদে মাছ ধরা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করত। উপজেলার লাখো জনগোষ্ঠী নৌকা জাল, বরশি, দোয়ারী ও ভেসাল পেতে মাছ শিকার করত। এ ছাড়া নদের জলাশয়ে গাছের শুকনো ডালপালা ফেলে ঘের তৈরী করে বড় বড় মাছ শিকার করত জেলেরা। এ ছাড়া প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম শুরু থেকে টানা চার মাসকাল এ নদে লঞ্চ ও নৌকা যাতায়াত সচল থাকতো। ভাদ্র মাসজুড়ে এ নদে বাংলা সাংস্কৃতির আদি ঐতিহ্য নৌকা বাইচ বিনোদনে মেতে থাকত গ্রামবাসী।
বছর ভরে কৃষকরা সেচ সুবিধা, গোসলকার্য ও যাবতীয় পানির অভাব পুরন করতো ওই নদ থেকে। কিন্তু এখন উপজেলার একমাত্র নদটি পরিস্কার, সংস্কার ও ড্রেজিংয়ের অভাবে সমস্ত সুবিধা হতে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলাবাসী।