// আজ রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯টি সংসদীয় আসনে ১ হাজার ৯৭০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ইসিতে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে এই নির্বাচনে ২৮টি রাজনৈতিক দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১ হাজার ৫৩৪ জন প্রার্থী। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে আছেন ৪৩৬ জন।২৯৯ সংসদীয় আসনে মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ২৪টি। এসব কেন্দ্রে ভোটকক্ষ ২ লাখ ৬১ হাজার ৯১২টি।
সর্বশেষ প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৮৯ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৬ কোটি ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৭৪১ ও নারী ভোটারের সংখ্যা ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৮ হাজার ৬৯৯। এছাড়া সারাদেশে এবার তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন ৮৪৯ জন।
এদিকে, শনিবার (৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ভোটারদের কেন্দ্রে গিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। একই সঙ্গে তিনি প্রার্থীদের উদ্দেশে বলেছেন, শক্ত ও অনুগত পোলিং এজেন্ট না থাকলে সম্ভাব্য ভোট কারচুপি প্রতিরোধ করা সম্ভব না-ও হতে পারে।
কোনো প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে কারচুপির প্রমাণ পেলে তার প্রার্থিতা বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচন বিষয়ক আইন ও বিধিবিধান সংশ্লিষ্ট সবাইকে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ভোটকেন্দ্রসমূহের পারিপার্শ্বিক শৃঙ্খলাসহ, প্রার্থী, ভোটার ও নির্বাচনী কর্মকর্তাসহ সর্বসাধারণের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। কোনো প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে জাল ভোট, ভোট কারচুপি, ব্যালট ছিনতাই, অর্থের লেনদেন ও পেশীশক্তির সম্ভাব্য ব্যবহার কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে।
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, এ ধরনের কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর প্রার্থিতা তাৎক্ষণিক বাতিল করা হবে। প্রয়োজনে কেন্দ্র বা নির্বাচনী এলাকার ভোটগ্রহণ সামগ্রিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে।
ভোট শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর করতে জনগণকেও ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকল প্রকারের নির্বাচনী অনিয়ম-অনাচার প্রতিহত করার উদাত্ত আহ্বান জানান সিইসি।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ গণমাধ্যমকে জানান, নির্বাচন পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা খাত মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছিল। পরে বরাদ্দের চাহিদা বেড়ে সবমিলিয়ে ব্যয় প্রায় ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, এবারের নির্বাচনে তিন হাজারের মতো ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন। এ ছাড়া, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের সংখ্যা ও মোতায়েনের সময় বাড়ায় ব্যয় বেড়েছে। এবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাহিদা অনুযায়ী সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২২৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা। আর নির্বাচন পরিচালনা খাতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫০ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
এর আগে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও পরে তা বাড়ানো হয়েছিল। তার আগে, দশম সংসদ নির্বাচনে প্রায় ২৬৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, নবম সংসদ নির্বাচনে ১৬৫ কোটি টাকা, অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ৭২ কোটি ৭১ লাখ টাকা, সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ১১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে ৩৭ কোটি টাকা, পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ২৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা, তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা, দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে ২ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছিল। আর ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ দেশের প্রথম সংসদ নির্বাচনে মোট ৮১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়।
এবারের নির্বাচনে সারাদেশে আনসার সদস্য থাকছেন পাঁচ লাখ ১৬ হাজার জন। পুলিশ ও র্যাব থাকছেন এক লাখ ৮২ হাজার ৯১ জন, কোস্টগার্ড দুই হাজার ৩৫০ জন এবং ৪৬ হাজার ৮৭৬ জন বিজিবি সদস্য থাকছেন। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য থাকছেন প্রায় অর্ধলাখ। এ ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে এবার চার লাখ ছয় হাজার ৩৬৪ প্রিজাইডিং অফিসার, দুই লাখ ৮৭ হাজার ৭২২ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার ৪৪৩ জন পোলিং অফিসার থাকছে। এ ছাড়া বিদেশি পর্যবেক্ষকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা এবং ইসি সচিবালয় ও প্রশিক্ষণেও বিপুল অর্থ খরচ হচ্ছে