// লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি ঃ
নাটোরের লালপুরের ঐতিহ্যের এক অন্যতম নিদর্শন শ্রী. ফকির চন্দ্র গোসাইয়ের আশ্রম। প্রায় সোয়া ৩০০ বছরের পুরনো এই আশ্রম। অশ্রমের অন্যতম প্রধান উৎসব হলো নবান্ন। হাজারো ভক্তবৃন্দ ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় উৎসবমুখর পরিবেশে মুখরিত হয়ে উঠেছে
এই অংশ্রমস্থল।
বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) দিনব্যাপি আশ্রম পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ লালপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় কুমারের সভাপতিত্বে ৩২৬তম নবান্ন অনুষ্ঠানে আশ্রম পরিদর্শন করেন নাটোর-১ (লালপুর (বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল, সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাড. আবুল কালাম আজদ। এসময় উপস্থিত ছিলেন লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন ঝুলফু, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ নাটোর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. প্রসাদ কুমার তালুকদার, দুড়দুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন, আশ্রম পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন কুমার দত্ত, সাংগঠনিক সম্পাদক আশীষ কুমার সরকার সুইট, আশ্রমের প্রধান সেবাইত শ্রী পরামানন্দ সাধু, সহকারী সেবাইত শ্রী মঙ্গল সাধু, শ্রী অপূর্ব বাল্য সাধু সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সহ দলীয় নেতাকর্মীরা।
হাজারো ভক্তবৃন্দ ও দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে ৩২৬তম এই উৎসব শেষ হবে সন্ধ্যায়।
আশ্রমের প্রধান সেবাইত পরমানন্দ সাধু জানান বাংলা ১২১৭ সালে উপজেলা প্রায় ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে দূড়দুড়িয়া ইউনিয়নের পানসি পাড়া গ্রামে গহীন অরণ্যের একটি বট বৃক্ষের নিচে আস্তানা করেন শ্রী ফকির চন্দ্র বৈষ্ণব। এখান থেকে সাধু ধ্যান তাপস্য ও বৈষ্ণব ধর্ম প্রচার শুরু করেন। প্রতিবছর দোল পূর্ণিমা গঙ্গাস্নান ও নবান্ন উৎসব উপলক্ষে হাজারো ভক্তবৃন্দ, দর্শনার্থী ও সাধকরা উপস্থিত হন। সাধু ফকির চন্দ্র বৈষ্ণবের মৃত্যুর পর নওপাড়া জমিদার তারেকস্বর বাবু তার স্বরণে সমাধিটি পাকা করে দেন এবং ভক্তবৃন্দদের সুবিধার্থে ৬৮ বিঘা জমি ও দুটি সান বাঁধানো পুকুর দান করেন। আশ্রমের দালান কোথাও অবকাঠামো নির্মাণেও তার অবদান আছে। দৃষ্টিনন্দন আশ্রমের প্রধান ফটকটি বাঘ ময়ুর,বিভিন্ন প্রাণীর মূর্তি ও লতা পাতার কারুকার্য খচিত। অশ্রমের ফটকের ডান পাশে রয়েছে ভক্ত ও সাধু মাতাদের আবাসন। বাম পাশে রয়েছে ৬ জন সাধুর সমাধি। একটু সামনে রয়েছে চারকোনা আকৃতির ফকির চন্দ্র বৈষ্ণবের সমাধিস্থল।
শ্রী ফকির চাঁদ বৈষ্ণবের বর্গাকৃতির ৪০ ফুট সমাধি সৌধে রয়েছে আরেকটি ৩০ ফুট গৃহ। এর একটি দরজা ছাড়া কোন জানালা পর্যন্ত নেই। মূল মন্দিরে শুধুমাত্র প্রধান সেবাইত প্রবেশ করেন। কাথিত আছে, মন্দিরের মধ্যে সাধু ফকির চাঁদ স্বশরীরে প্রবেশ করে ঐশ্বরিকভাবে স্বর্গ লাভ করেন। তাঁর পরিধেয় বস্ত্রাদি সংরক্ষণ করে সমাধি স্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। গম্বুজ আকৃতির সমাধির উপরিভাগ গ্রিল দিয়ে ঘেরা রয়েছে। ঘরের দেওয়াল ও দরজায় গাছ, লতা-পাতা খচিত কারুকার্য শোভা পাচ্ছে। ভেতরে রয়েছে ঝাড় বাতি। সোনা, রোপা ও কষ্ঠি পাথরে তৈরি মূল্যবান কারুকার্যগুলি চুরি হয়ে গেছে।
আশ্রমের মধ্যে রয়েছে বিশাল আকৃতির এক কুয়া। যার একটি সিঁড়ি পথ রয়েছে পাশের রান্না ঘরের সাথে সংযুক্ত। এই সিঁড়ি পথে সাধুরা রান্নাসহ পানিয় জল সংগ্রহ করতেন। বর্তমানে কুয়ার পানি ব্যবহার অযোগ্য অবস্থায় রয়েছে। তার পাশেই রয়েছে ভক্তদের জন্য আরেকটি কুয়া। বড় বড় মাটির চুলায় রান্না হয় ভক্তদের প্রসাদ।
পরিচালনা কমিটির সভাপতি শ্রী সঞ্জয় কুমার কর্মকার বলেন, এই প্রাঙ্গনে ৩২ বিঘা ছাড়াও নওপাড়া, রাজশাহীর বাঘার সুলতানপুর এবং নওগাঁর আত্রাইয়ে আশ্রমের জমি রয়েছে।