// আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটি আসনে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে পারবে রাজনৈতিক দলগুলো। তবে দলীয়ভাবে একবার রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়ন জমা দিলে আর স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করতে পারবেন না কোনো প্রার্থী। মনোনয়ন প্রত্যাহারের আগে দল বা জোট যাকে চূড়ান্ত হিসেবে মনোনয়ন দেবে কেবল তিনিই প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। ঐ আসনে দলের বা জোটের অন্য প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বাতিল হয়ে যাবে। এর ফলে দলীয়ভাবে মনোনয়ন জমাকারীদের আর বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকল না। এ ক্ষেত্রে কেউ নির্বাচন করতে চাইলে আগে থেকেই দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে।
এদিকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ১২ দেশের ৪৪ জন আবেদন করেছেন, যার ১১ জনই উগান্ডার। এছাড়া পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে কারাবন্দি, বিদেশিরাও ভোট দিতে পারবেন। ত্রাণ, অনুদান ও প্রকল্প স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে ইসি, বন্ধ থাকবে ফলক উন্মোচনও। এছাড়া নির্বাচনের কাজের অজুহাতে এনআইডি সংশোধন বন্ধ করা যাবে না।
ইসির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের ক্ষমতা প্রার্থী বা তার এজেন্টের হাতেই ছিল। ফলে দল বা জোট কাউকে চূড়ান্ত মনোনয়ন না দিলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারতেন। কিন্তু বিগত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন করে ১২ ধারা ৩ এ(বি) এবং ১৬ ধারা (২) তে রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রার্থী চূড়ান্তকরণের এই ক্ষমতা দেওয়া হয়।
তবে স্বতন্ত্রভাবে কেউ প্রার্থী হতে চাইলে আগেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট আসনের ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর সংযুক্ত করতে হবে। প্রার্থী সাবেক এমপি হলে ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর লাগবে না। তপসিল অনুযায়ী, আগামী ৩০ নভেম্বর মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময়। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারবে। তবে বাছাইকালে কারো প্রার্থিতা বাতিল হয়ে গেলেও অন্যদের মধ্যে থেকে ১৮ ডিসেম্বর প্রত্যাহারের আগে এক জনকে চূড়ান্ত করার সুযোগ পাবে দলগুলো।
১১ জনই উগান্ডার পর্যবেক্ষক :জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ১২টি দেশ থেকে ৪৪ জন পর্যবেক্ষক আসবেন বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। যার মধ্যে উগান্ডা থেকেই আসছেন ১১ জন পর্যবেক্ষক। গতকাল নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জনসংযোগ শাখা থেকে এই তথ্য জানানো হয়। এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া থেকে এক জন, ইতালির এক জন, আইরিশ এক জন, স্লোভাক এক জন, ব্রিটিশ এক জন, ফ্রান্সের এক জন, উগান্ডা থেকে ১১ জন, জার্মানি থেকে দুই জন, জাপানিজ এক জন, সুইডিশ এক জন, নিউজ এজেন্সি এএফপি থেকে ১২ জন, ভারতীয় এক জন, সাউথ এশিয়ান ফোরাম থেকে চার জন, ব্রিটিশ হাইকমিশন থেকে এক জন, নিউ দিল্লি টেলিভিশন থেকে দুই জন আবেদন করেছেন। সব মিলিয়ে ৪৪ জন পর্যবেক্ষক আসার জন্য ইসিকে জানিয়েছে।
এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, বিদেশি পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো সময় বাড়ানোর আবেদন করেছিল। এটা কমিশন অনুমোদন করেছে। এক্ষেত্রে বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের জন্য ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদনের সময় বাড়ানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১২টি দেশের বিভিন্ন সংস্থা ও পর্যবেক্ষকের আবেদন পেয়েছি।
ঢাকার বাইরে যাচ্ছেন তিন কমিশনার: জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে ঢাকার বাইরে সফরে যাচ্ছেন নির্বাচন কমিশনাররা। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান আজ বুধবার খুলনা বিভাগের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করছেন। আরেক কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা রংপুর ও রাজশাহী সফরের উদ্দেশে আজ ঢাকা ছাড়বেন। আর কমিশনার মো. আনিছুর রহমান আজ সকাল সাড়ে ১০টায় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর জেলা কর্মকর্তা এবং বিকাল ৩টায় নেয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর জেলা কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।
কারাবন্দি ও বিদেশিরাও ভোট দিতে পারবেন: এবার ভোটার তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা কারাগারে কিংবা বিদেশে থাকলে কিংবা নির্বাচনি কাজে থাকলেও পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন। তবে পোস্টাল ব্যালটে ভোট প্রদানে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের নির্বাচনের তপসিলঘোষিত হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের নিকট আবেদন করতে হবে।
ত্রাণ, অনুদান ও প্রকল্প স্থগিত রাখার নির্দেশ :নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখার লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরকে ত্রাণ, ফলক উন্মোচন, অনুদান, নতুন প্রকল্প গ্রহণ স্থগিত রাখতে নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান পৃথক চারটি নির্দেশনায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং রেড ক্রিসেন্টকে এই নির্দেশনা পাঠিয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এনআইডি সংশোধন বন্ধ করা যাবে না: নির্বাচনের বিভিন্ন কাজের অজুহাতে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিবন্ধন ও সংশোধন সংক্রান্ত কার্যক্রম বন্ধ করা যাবে বলে মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তপসিল হয়ে যাওয়ায় মাঠ কর্মকর্তাদের অনেকেই নানা অজুহাতে নতুন করে নিবন্ধন, এনআইডি সংশোধন কার্যক্রমে অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন। বিষয়টি কমিশনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। যেহেতু জাতীয় পরিচয়পত্র এখন অপরিহার্য, তাই এই সেবা থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না।