৪৫-এর পথে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

// রানা আহম্মেদ অভি, ইবি।

২২ নভেম্বর ৪৪ বছর পূর্ণ করে ৪৫ বছরে পা রাখতে যাচ্ছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহের শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে যাত্রা শুরু হয় স্বাধীনতাত্তোর দেশের প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের। শিক্ষা-গবেষণায়, সংস্কৃতি-ক্রীড়াঙ্গনে উল্লেখযোগ্য অর্জন এই পথচলাকে গৌরবান্বিত করেছে। সমস্ত প্রতিকূলতা সার্থকভাবে মোকাবেলার মাধ্যমে শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করে এগিয়ে চলেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

জুন ২০২৩ পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়টির ৮টি অনুষদের ৩৬টি বিভাগে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৪ হাজার ৯৯, যাদের মধ্যে ছাত্র ৯ হাজার ২৪ এবং ছাত্রী ৫ হাজার ৭৫ জন। ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে নতুন ভর্তিকৃত শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৪৩৭। বর্তমানে ৪০৪ জন শিক্ষক শিক্ষাদানে নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়াও ৫০৪ জন কর্মকর্তা,  ১০৮ জন সহায়ক কর্মচারী এবং ১৫৪ জন সাধারণ কর্মচারী বিশ^বিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রেখে চলেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়টি এ পর্যন্ত ৬২৭ জনকে পিএইচ.ডি এবং ৭৭৪ জনকে এম.ফিল ডিগ্রি প্রদান করেছে। বর্তমানে ১৭২ জন পিএইচ.ডি এবং ৪২ জন এম.ফিল গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন। এডি সায়েন্টিফিক ইনডেক্স প্রকাশিত “ওয়ার্ল্ড সায়েন্টিস্ট র‌্যাংকিং-২০২৩” এ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ৭৪ জন গবেষকের নাম এসেছে।

শিক্ষা ও গবেষণাক্ষেত্রে সহযোগিতা বিনিময়ের লক্ষ্যে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা স্মারক  চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা এখন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস থেকে যথাসময়ে সার্টিফিকেট, মার্কসশীট, ট্রান্সক্রিপ্ট সংগ্রহ করতে পারছেন । আশা করা হচ্ছে, অফিসটি নতুন ভবনে স্থানান্তরিত হলে সেবার মান আরও বাড়বে।

এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪টি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম সমাবর্তন ২৭ এপ্রিল ১৯৯৩ সালে, দ্বিতীয় সমাবর্তন ৫ ডিসেম্বর ১৯৯৯ সালে, তৃতীয় সমাবর্তন ২৮ মার্চ ২০০২ সালে এবং সর্বশেষ ৪র্থ সমাবর্তন ৭ জানুয়ারি ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত হয়।

শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি ক্রীড়াক্ষেত্রেও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। এরই ধারাবাহিকতায় আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ব্যাডমিন্টন (ছাত্র) প্রতিযোগিতা ২০২৩ এ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় বাস্কেটবলের প্রতিযোগিতা ২০২৩ এ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় দল রানার আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে । আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতা ২০২৩ এ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়  হ্যান্ডবল দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।  এছাড়াও  বঙ্গবন্ধু আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপ-এর ৩য় আসরের হ্যান্ডবল ফাইনালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ৩১-২২ গোলে এবং বাস্কেটবল ইভেন্টে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে ৭৪-৬২ পয়েন্টে পরাজিত করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন হয়। আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অ্যাথলেটিক্স  প্রতিযোগিতা ২০২৩ এ  ১১০মিটার  হাডেলস-এ স্বর্ণপদক লাভ করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সোহেল রানা।এ বিশ্বব্দ্যিালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্রী তামান্না আক্তার ৭বার দেশের জাতীয় অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় ১০০ মিটার হাডেলস ইভেন্টে স্বর্ণপদক লাভ করেন। আশা করা হচ্ছে, শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগটি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় ক্রীড়াঙ্গনে বড় ধরণের ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের দেশব্যাপী ব্যাপক উন্নয়নযজ্ঞের অংশ হিসাবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও উন্নয়ন কর্মকান্ড চলমান রয়েছে। ৫৩৭ কোটি ৭ লাখ টাকার মেগা প্রকল্পের আওতায় নয়টি দশ তলা ভবনের সবগুলোর নির্মাণকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। একটি ১০ তলা ছাত্র হলের প্রায় ৮০ শতাংশ নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। অপর আরেকটি ১০ তলা ছাত্র হল এবং শেখ রাসেল হল বি বøকের আনুমানিক ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়াও ১০ তলা ছাত্রী হল, একাডেমিক ভবন, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের আবাসিক ভবন, কর্মচারীদের আবাসিক ভবন, প্রশাসনিক ভবনের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।।দশতলা বিশিষ্ট আবাসিক হলগুলো নির্মাণ শেষ হলে আবাসন সুবিধা নিশ্চিত হবে ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর। বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের সংকট দূর হবে এবং নতুন-নতুন বিভাগ খোলার সুযোগ সৃষ্টি হবে একাডেমিক ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হলে। এছাড়া প্রশাসন ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হলে অফিসসমূহের সেবার মান উন্নত হবে এবং স্থান সংকট অনেকটাই নিরসন হবে। প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টির মধ্যে সব কয়টি ভবনের উর্দ্ধমুখী স¤প্রসারণের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় দৃষ্টিনন্দন লেকের কাজ শেষ পর্যায়ে।  ২টা বড় বাস, ১টি হায়েস মাইক্রোবাসও কেনা হয়েছে। প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে কেন্দ্রীয় গবেষণাগার । ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে বিদ্যুৎ সাবস্টেশন ও সোলার প্যানেল স্থাপনের কাজ শেষ পর্যায়ে। বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে  ২টি গভীর নলকূপ এবং ১টি উন্মুক্ত জলাশয় তৈরির কাজ সম্পন্ন হওয়ার পথে।

বর্তমানে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীতে বই রয়েছে এক লক্ষ ২৩ হাজার (প্রায়)। এছাড়াও জার্নাল, ম্যাগাজিন এবং নিউজ পেপার এর সংখ্যা ১৯ হাজার (প্রায়)। রিমোট এক্সেস এর মাধ্যমে অনলাইনে সাবস্ক্রাইবড ই-বুক  এবং ই-জার্নাল পড়ার সুবিধা রয়েছে। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য বর্তমানে ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের পরিবহন পুলে নিজস্ব  গাড়ি রয়েছে ৪৬টি। এর মধ্যে ৫২ আসনের নন এসি বাস ১৩টি, দ্বিতল বাস ১টি, এসি বাস ১টি, ৩০ আসনের এসি কোস্টার ৭টি, নন-এসি মিনিবাস ৫টি, হায়েস এসি মাইক্রো ৫টি, জীপ ৭টি, কার ৩টি, পিক-আপ ২টি এবং অ্যাম্বুলেন্স ২টি। এছাড়াও ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য ভাড়াকৃত ৬টি দ্বিতল বাসসহ মোট ৩২টি বাস-মিনিবাস রয়েছে।  

২২ নভেম্বর ২০২৩ তারিখ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে আনুষ্ঠানিকভাবে স্টুডেন্টস ই-পেমেন্ট কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হবে । এই ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোন পেমেন্ট অনলাইনে করা সম্ভব হবে। এর ফলে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে পেমেন্টের ভোগান্তি এবং সময়ের অপচয় থেকে শিক্ষার্থীরা রেহাই পেলো।এদিকে, অর্থ ও হিসাব অফিস-এর প্রায় পুরো কার্যক্রম এখন অটোমেশনের আওতায় এসেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়মিতভাবে বের হচ্ছে ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বার্তা’, ডায়েরি ও ক্যালেন্ডার।  তথ্য, প্রকাশনা ও জনসংযোগ অফিস এসব প্রকাশনার দায়িত্ব অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করছে। এছাড়া বার্ষিক প্রতিবেদন-২০২২ তৈরীর লক্ষ্যে গঠিত কমিটি গত অক্টোবরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন-২০২২ প্রকাশ করেছে। জার্নালসমূহ নিয়মিতভাবে প্রকাশেরও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রুপান্তরের যে মহালক্ষ্য অর্জনে জাতিকে সুদক্ষভাবে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন তারই অংশ হিসাবে  ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় তার শিক্ষার্থীদের স্মার্ট সিটিজেন হিসাবে গড়ে তোলার নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ কর্মযজ্ঞে সুদক্ষ নেতৃত্ব দিচ্ছেন বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ মাহবুবুর রহমান এবং ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোঃ আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া ও রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান।