ডিবি পুলিশ পরিচয়ে মুক্তিপন দাবি করায়, সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আটক

ভাঙ্গুড়া (পাবনা) প্রতিনিধি: পাবনার ফরিদপুরে ভুয়া ডিবি পুলিশ পরিচয়ে এক ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে অপহরণের পর মুক্তিপনের টাকা দাবি করার অভিযোগে মেহেদী হাসান রানা নামে আরেক নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ভাঙ্গুড়া পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে থেকে তাকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সাব্বির নিজেই বাদী হয়ে রানা, সজীব ও হিমেলের নাম উল্লেখসহ আরো তিন জনকে অজ্ঞাত করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। আটককৃত রানা ভাঙ্গুড়া পৌর সদরের সারুটিয়া মহল্লার মৃত জাহাঙ্গীর আলম টুকুর ছেলে। তিনি ভাঙ্গুড়া পৌর সেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ন আহ্বায়ক বলে জানা গেছে। অপহৃত সাব্বির পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর উপজেলার দেওভোগ গ্রামের মো. মামুন প্রামাণিকের ছেলে। তিনি বৃলাহীরিবাড়ী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি বলে জানা গেছে। ফরিদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় মেহেদী হাসান রানা, সজীব ও হিমেলসহ অজ্ঞাত ২/৩ জন যুবক তিনটি মোটরসাইকেল যোগে ফরিদপুর উপজেলার বৃলাহীরিবাড়ী ইউনিয়নের দেওভোগ গ্রামে গিয়ে ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাব্বিরকে ফেনসিডিল ব্যবসায়ী বলে তাদের মোটরসাইকেলে তোলার চেষ্টা করে। এ সময় সাব্বির চিৎকার দিলে তাকে চেতনা নাশক স্প্রে করে মোটরসাইকেলে তুলে ভাঙ্গুড়া পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে আব্দুল আলীমের একটি ফাঁকা বাড়িতে আটকে রাখে। সেখানে সাব্বিরকে মারধর করে সাব্বিরের মোবাইলে বিকাশে থাকা ৫ হাজার টাকা ক্যাশ আউট করে নেয়। এরপর সাব্বিরের মোবাইল থেকে তার বাড়িতে ফোন করে মুক্তিপণের জন্য আরো ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ওই বাড়িতে আসতে বলে তারা। তখন সাব্বিরের পরিবার বিষয়টি থানা পুলিশ ও বৃলাহীরিবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রিপন আহমেদকে জানায়। এরপর রিপন আহমেদ এবং ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল গফুর সহ ২০/২৫ যুবক ভাঙ্গুড়ায় আব্দুল আলীমের বাড়িতে এসে পুলিশের সহযোগিতায় সাব্বিরকে উদ্ধার করেন। কিন্তু এ সময় রানা ছাড়া অন্যরা পালিয়ে যায়। ওই বাড়িতে মাদক সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জামাদিও পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আহমেদ শরীফ ডাবলু বলেন, বিষয়টি দুই জনই সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা। মুক্তিপন অথবা টাকা চাওয়ায় অভিযোগ করা হয়েছে। তবে যদি এমন কোন ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বৃলাহীরিবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিপন আহমেদ বলেন, বিষয়টি জানার পর দ্রুত পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করি। তবে একজন স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা হয়েও দিনের পর দিন সাংবাদিক ও প্রশাসন পরিচয় দিয়ে অপহরণ, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা করছে এই রানা। আমরা পুলিশের কাছে এর সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছি।
তবে অভিযোগের বিষয়ে মেহেদী হাসান রানা বলেন, আমি সংবাদকর্মী পরিচয় দিয়ে তাকে তুলে নিয়ে এসেছি। ডিবি পরিচয় দেইনি। মাদক ব্যবসা ও অন্যান্য অপহরণের বিষয়ে রানা বলেন, আগে দুই একটি ঘটনা ঘটেছে। তবে এখন আমি ভালো হয়েছি।
ভাঙ্গুড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান বলেন, সাব্বির অপহরণের ঘটনাটি ভাঙ্গুড়া উপজেলার বাইরে হওয়ায় ফরিদপুর থানায় মামলা হয়েছে। তবে মেহেদী হাসান রানার বিরুদ্ধে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে মাদক ও অপহরণের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ বিষয়টি কঠোরভাবে দেখছে।
পাবনার সহকারী পুলিশ সুপার (চাটমোহর সার্কেল) হাবিবুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় মেহেদী হাসান রানাসহ কয়েকজনকে আসামি করে অপহরণ ও চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করা হয়েছে। রানাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করে অন্যদেরকেও আটকের চেষ্টা চলছে।