// ইয়ানূর রহমান : যশোর জেনারেল হাসপাতালের করোনা পরীক্ষার ফি’র আত্মসাৎ করা ২২ লাখ ১৬ হাজার ৭০০ টাকা ফেরতের নির্দেশ
দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। হাসপাতালটির সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায়, ডা. আখতারুজ্জামান, প্যাথলজি
কনসালটেন্ট ডা. হাসান আব্দুল্লাহ ও টেকনিশিয়ান (ল্যাব) গোলাম মোস্তফাকে টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। তাদের
বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ডা. দিলীপ কুমার রায় ও
প্যাথলজি কনসালটেন্ট ডা. হাসান আব্দুল্লাহর পেনশন আটকে রাখা হয়েছে।
তবে করোনা পরীক্ষার ফি আত্মসাতে ৪ জন ফেঁসে গেলেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে ফি’র টাকা সংগ্রহকারী
স্বেচ্ছাসেবীরা।
জানা গেছে, হাসপাতালের করোনা পরীক্ষার ফি’র টাকার হিসেবে ব্যাপক গড়মিল হয়। ওই টাকা দায়িত্বরতরা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে গায়েব করে দেন। টাকা আত্মসাতের সাথে বেশি জড়িত ছিলো স্বেচ্ছাসেবীরা। কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা সরকারি টাকা বেশুমার লুটপাট করে। যা নিয়ে ব্যাপক
আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
বিষয়টি অবগত হয়ে হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. আখতারুজ্জামান প্রাথমিকভাবে ৮০ হাজার টাকা তছরুপের সত্যতা পান। এরপর ২০২২ সালের ১২ মার্চ তার নির্দেশে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন হয়। কমিটির প্রধান ছিলেন সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রহিম মোড়ল। ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয় কমিটিকে। এ বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে টনক
নড়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের। পরে অধিদপ্তরের অডিট টিমের সদস্যরা তদন্তে আসেন।
হাসাপাতাল সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, অডিট টিমের সদস্যদের যাচাইয়ে করোনার পরীক্ষার ফি’র টাকা আত্মসাতের বিষয়টি ধরা পড়ে। এছাড়া হাসপাতালের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও টাকা আত্মসাত প্রমাণিত হয়। তখনকার দায়িত্বরত কর্মকর্তারা তদন্ত প্রতিবেদন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠিয়ে দেন।
সেই তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায়, ডা. আখতারুজ্জামান, প্যাথলজি কনসালটেন্ট ডা. হাসান আব্দুল্লাহ ও টেকনিশিয়ান (ল্যাব) গোলাম মোস্তফাকে ২২ লাখ ১৬ হাজার ৭০০ টাকা ফেরতের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
ফলে তাদের ৪ জনকে এই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে।
জানা গেছে, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় ২০২১ সালের ১১ মে ও প্যাথলজি কনসালটেন্ট ডা. হাসান আব্দুল্লাহ ২০২২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর সরকারি চাকরি থেকে অবসরে গেছেন।
করোনা পরীক্ষার টাকা কেলেংকারীর ঘটনায় কর্তৃপক্ষ তাদের ছাড়পত্র দেননি। তাদের পেনশন আটকে রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে চাকরি জীবন শেষ করবেন টেকনিশিয়ান (ল্যাব) গোলাম মোস্তফা। বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত উল্লিখিত দুই জনের মতো তারও পেনশন আটকে রাখবে কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছে, যারা করোনা পরীক্ষা টাকা
আত্মসাতের বিষয়টি উদঘাটন করেছেন তাদের কেউ কেউ ফেঁসে
গেছেন। কিন্তু করোনা পরীক্ষার ফিসের টাকা সংগ্রহকারী সেই
স্বেচ্ছাসেবীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে। তাদের
লুটপাটের দায় নিতে হচ্ছে তখনকার দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের।
এই ব্যাপারে হাসপাতালের হিসাবরক্ষক ইসরাফিল হোসেন
জানিয়েছেন, করোনা পরীক্ষার ফি’র টাকা ফেরত দেয়ার জন্য
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নির্দেশনাপত্র পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি
সংশ্লিষ্টদের অবগত করা হয়েছে। বিষয়টির সমাধান না হওয়া
পর্যন্ত তাদের কেউ পেনশন পাবেন না বলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে
জানানো হয়েছে। #