// ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি-
জাতীয় পরিচয়পত্রে নামের বানান সংশোধন করতে তিন মাস আগে ফরিদপুরের সদরপুর নির্বাচন অফিসে আবেদন করেছিলেন পূর্ব শ্যামপুর এলাকার মিজানুর রহমান। এর পর পাঁচবার নির্বাচনী কার্যালয়ে গিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে আবেদনটি কোন অবস্থায় আছে সেটিও জানতে পারেননি। শুধু মিজানুর নন– সদরপুর নির্বাচন কার্যালয়ে যাওয়া অধিকাংশ সেবাগ্রহীতার অবস্থাই একই।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলার এই নির্বাচনী কার্যালয় ঘিরে গড়ে উঠেছে দালাল সিন্ডিকেট। নতুন জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদন, সংশোধন, স্থানান্তরসহ সব ধরনের সেবা নিতেই এই চক্রের দ্বারস্থ হতে হয়। দালাল ধরে সরকার নির্ধারিত ফির বাইরে টাকা দিলে দ্রুতই সমাধান হয়। না হলে মাসের পর মাস ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তারা আরও অভিযোগ করেন, নির্বাচন অফিসেরই কয়েকজন কর্মচারী এবং সামনের কয়েকটি কম্পিউটারের দোকানের মালিক এই সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে চক্রটি ৪০-৫০ হাজার টাকাও চেয়েছে।
কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, জাতীয় পরিচয়পত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ নথিতে সমস্যা থাকলে পাসপোর্ট, চাকরিসহ অন্যান্য জরুরি কাজে ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের। সমস্যা সমাধানে সরকার নির্ধারিত ফি এবং প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র জমা দিয়েও সমাধান পাওয়া যায় না সদরপুর নির্বাচন অফিস থেকে। কার্যালয়ে গেলে কর্মকর্তারা কোনো কথা বলেন না। কী করতে হবে, কীভাবে করতে হবে– কিছুই জানানো হয় না। পরে নির্বাচন কার্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটররা সামনের কম্পিউটারের দোকানে পাঠিয়ে দেন। সেখানে দোকানিরা কাজের ধরন অনুযায়ী টাকার রেট বলে দেন। জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদন, সংশোধন, স্থানান্তরে তারা ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা নেন। টাকা দিলেই অল্প সময়ের মধ্যে কাজ হয়ে যায়।
স্থানীয় হোসেন শেখ জানান, তাঁর পরিচয়পত্রে জন্ম ১৯৮৮ সালের পরিবর্তে ১৯৭৭ লেখা হয়েছে। অথচ তাঁর মায়ের জন্মই ১৯৭৫ সালে। এটি সংশোধনে নির্বাচন অফিসের সামনের কম্পিউটারের দোকানে গেলে বলা হয়, এত বেশি বয়স নির্বাচন অফিস ঠিক করবে না। এ জন্য ৪০ হাজার টাকা দিতে হবে। টাকার পরিমাণ শুনে তিনি সরকারি ২৫০ টাকা ফি জমা দিয়ে আবেদন করে চলে আসেন। ১৫ দিন পর তাঁর মোবাইল ফোনে মেসেজ করে জানানো হয় আবেদনটি বাতিল করা হয়েছে। এর পর ওই কম্পিউটার দোকানে গেলে আরও বেশি টাকা দাবি করা হয়।
কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের নিজগ্রাম এলাকার নাইম উদ্দিনের অভিযোগ, তাঁর খালাতো ভাইয়ের জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেটে সমস্যা সমাধানে গেলে নির্বাচন অফিসের কম্পিউটার অপারেটর এনায়েত ৬ হাজার টাকা চান।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসের সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর এনায়েত মল্লিক দাবি করেন, তিনি ঘুষ নেন না, অফিসের অন্য কোনো কর্মচারী জড়িত থাকতে পারেন। ওই ব্যক্তি কে– জানতে চাইলে অবশ্য কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। পরে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি স্যারকে জানাব। উপজেলার কিছু দোকানির মাধ্যমে চুক্তিতে কাজ করার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, আমি কোনো কন্ট্রাক্ট করি না। আপনারা যাচাই করেন।
সদরপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, আমি যোগদানের পর এমন কোনো অভিযোগ পাইনি। বিষয়গুলো আমার নজরেও আসেনি। ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ দিলে অফিসের কোনো স্টাফ জড়িত থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।