চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি
সোমবার (৯ জানুয়ারী) পাবনার চাটমোহরের প্রধান সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শতাধিক কৃষক। চলতি বোরো চাষ মৌসুমে সেঁচ যন্ত্রের মালিক কর্তৃক সেঁচ চার্জ বাবদ সিকি ভাগ ধান আদায়ের চেষ্টার প্রতিবাদে এবং টাকা দিয়ে জমিতে সেঁচ নেওয়ার দাবীতে চাটমোহরের বোয়াইলমারী ও এর আশপাশ এলাকার কৃষকরা এ বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন যাবত কৃষক ও সেঁচ যন্ত্রের মালিকের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল।
কৃষকদের অভিযোগ এ এলাকার প্রথা অনুযায়ী সেঁচযন্ত্রের মালিকরা চারভাগের এক ভাগ ধান নিয়ে আসছিলেন কৃষকের নিকট থেকে। কৃষককে সেঁচযন্ত্রের মালিকের অংশের ধানও কেটে দিতে হতো। এতে বছরের পর বছর কৃষকের লোকসান হচ্ছিল। কৃষকের লোকসান এড়াতে সর্বশেষ বিঘাপ্রতি ২,২০০ টাকা হারে সেচ চার্জ নির্ধারণ করা হয়।
বোয়াইলমারী এলাকার কৃষকেরা জানান, বোয়াইলমারী এলাকায় তিনটি গভীর নলকূপ ও একটি অগভীর নলকূপের মাধ্যমে প্রায় ৬০০ বিঘা জমিতে সেঁচ দেন সাবেক এমপি শামসুদ্দিন খবির। চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই তিনি কৃষককে চারভাগের এক ভাগ ধানের বিনিময়ে আবাদ করার কথা বলে আসছিলেন। এতে কৃষক সম্মত না হওয়ায় তিনি তার অধীনস্ত গভীর ও অগভীর নলকূপ এলাকায় কৃষকের জমিতে পানি দিচ্ছেন না। ফলে কৃষক বোরো চাষ করতে পারছেন না। এ নিয়ে কৃষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বিএডিসি কর্মকর্তা ও কৃষি কর্মকর্তা বরাবর বরাবর লিখিত অভিযোগও করেন। দফায় দফায় চেষ্টার পরও কোন সমাধান না আসায় সোমবার বিক্ষোভ শেষে কৃষকেরা ফের দেখা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ মহলের সাথে।
কৃষকদের একটি প্রতিনিধি দল তাদের দাবী দাওয়া নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে বৈঠক করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুঠোফোনে ৪ টি সেঁচ যন্ত্রের মালিক সাবেক এমপি শামসুদ্দিন খবিরের সাথে কথা বলেন। তাঁর সাথে কথা বলার পর সিদ্ধান্ত হয় চলতি মৌসুমে কৃষক কমিটি করে সাবেক এমপি শামসুদ্দিন খবিরের সেঁচযন্ত্রগুলো পরিচালনা করবেন। সকল যন্ত্রপাতি যেভাবে গ্রহণ করবে আবাদ শেষে কৃষক সেভাবে নলকূপের মালিককে বুঝিয়ে দিবে। প্রতিমাসের বিদ্যুৎ বিল নলকূপ মালিকের নামেই পরিশোধ করবে কৃষক। চারজন ড্রাইভার ও একজন ম্যানেজারের একমাসের বেতন, বিদ্যুৎ সংযোগ, স্কীম সংস্কার খরচ বাবদ কৃষক ১,৩৮,০০০ টাকা নলকূপ মালিককে অগ্রিম পরিশোধ করবে। কৃষক কমিটি জমির মালিকদের নিকট থেকে সরকার নির্ধারিত সেঁচ চার্জের অতিরিক্ত চার্জ গ্রহণ করতে পারবে না।
কৃষক নেতা ও নলকূপ মালিকের সাথে কথা বলে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অপেক্ষমান সকল কৃষককে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন। ১১ জানুয়ারী এটি চূড়ান্ত করা হবে এবং নলকূপগুলো চালু করা হবে বলে কৃষককে আশ্বস্ত করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ মহল। ফলে আপাতত এ দ্বন্দ্বের অবসান হলো।
এসময় চাটমোহর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ইছাহক আলী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফিরোজা পারভীন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ.এ মাসুম বিল্লাহ, ছাইকোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুজ্জামান নূরু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, উপজেলার অন্যান্য এলাকার গভীর ও অগভীর নলকূপ মালিকদের কেউ কেউ ইতিমধ্যে সেঁচ দেওয়া শুরু করেছেন। কিছু এলাকায় সরিষা থাকায় আরো কিছু দিন পর বোরো আবাদ শুরু হবে।