সঞ্জু রায়, বগুড়া: ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ছাত্রদের নাম বাদ পড়ার জেরে বগুড়া জিলা স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে অভিভাবকদের হাতাহাতির অভিযোগ উঠেছে। বুধবার সকাল পৌনে ১১ টার দিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে।
বগুড়া জিলা স্কুল সূত্রে জানা যায়, গত ১২ জানুয়ারি একযোগে দেশের সব সরকারি বিদ্যালয়ে অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। ওইদিন বিকেল ৫ টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করা হয় অনলাইনে ও স্কুলের নোটিশ বোর্ডে। এ সময় একই শিক্ষার্থীর নাম ভর্তি তালিকায় একাধিকবার পাওয়া যায় ৷ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা আবেদন প্রক্রিয়ায় কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে একাধিকবার আবেদন করায় এমনটি ঘটে বলে জানাযায়। এ নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) নির্দেশ দেয় একাধিকবার আবেদন করা শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ পাবেনা৷
ভর্তি প্রক্রিয়া পর্ব চূড়ান্ত করতে বগুড়া জিলা স্কুল কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার থেকে শিক্ষার্থীদের আবেদন ও কাগজ পত্র যাচাই-বাছাই শুরু করে। এ সময় স্কুল কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবারেই ৫৪ শিক্ষার্থীর আবেদন বাতিলের তালিকা প্রকাশ করে। একাধিকবার আবেদন, আবেদনের সাথে জন্মনিবন্ধনের মিল না থাকা ও অনলাইন জন্মনিবন্ধন না থাকায় তাদের আবেদন বাতিল করা হয়৷
এ ঘটনার জের ধরে সকাল বুধবার সকাল পৌনে ১১ টার দিকে প্রায় ২০ জন নারী ও পুরুষ অভিভাবক জিলা স্কুলের প্রশাসনিক ভবনের দরজার ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ে আসেন। এ সময় অভিভাবকরা শিক্ষদের ওপর চড়াও হয়ে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন৷ জিলা স্কুলের দিবা শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক রফিকুল আলম ও প্রভাতি শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক আনোয়ার ইসলাম হেনস্তার শিকার হন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও বগুড়া জিলা স্কুল থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া আল মুসা সাদাফ বলেন , ‘কয়েকজন অভিভাবক সরাসরি স্যারদের ওপর আক্রমণ করে বসেন৷ এ সময় তারা হাতাহাতি শুরু করেল আমিসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অন্যান স্যাররা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ওই অভিভাবকরা স্কুল থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর মূল দরজা লাগিয়ে দেই। ‘
একাধিকবার আবেদনে বাদ পরা শিক্ষার্থীর অভিভাবক রেফাত আরা বলেন, ‘ আমি না বুঝেই দিবা ও প্রভাতি শাখার একবার করে দু’বার আবেদন করেছি। এজন্য আমার ছেলেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাদ দিলে কেন তারা আবেদন একাধিকবার নিয়েছে। ‘
বগুড়া জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামপদ মোস্তাফী জানান, লটারিতে জালিয়াতি করায় মঙ্গলবার ৫৪ শিক্ষার্থীর আবেদন বাতিল করা হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত আরও ৩ শিক্ষার্থীর আবেদন বাতিল করেছি৷ মাউশি নির্দেশে আমরা এ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি৷ কিছু অভিভাবক এসে সকালের দিকে হট্টগোল শুরু করেন। তাদের নিয়ন্ত্রণে এনে মাউশির কাছে আবেদনের পরামর্শ দিয়েছি।
বগুড়া সদর পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) খোরশেদ আলম জানান, কিছু অভিভাবক হট্টগোল করেছিলেন। এরপর আমাদের সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এখন কোন ঝামেলা নেই৷
বগুড়া জিলা স্কুল সূত্রে আরও জানা যায়, এ বছর তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তির জন্য ১১ হাজার ৪০০ শিক্ষার্থী আবেদন করে। এরমধ্যে প্রভাতি ও দিবা শাখায় ২০৬ শিক্ষার্থী লটারিতে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়। তবে আবেদন প্রক্রিয়ায় জালিয়াতি ও ত্রুটি থাকা শিক্ষার্থীদের বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেয় মাউশি। এজন্য প্রথম তালিকা থেকে সব আসন পূর্ণ হচ্ছে না। অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তি করা হবে।