আবারো যশোর পঙ্গু হাসাপাতালের ডা. আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে অভিযোগ

ইয়ানূর রহমান : অপচিকিৎসাই পা কেটে ফেলা হয়েছে বলে যশোরের আলোচিত পঙ্গু
হাসাপাতালের ডা. আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে আবারো অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ
করেছেন আক্কাচুর রহমান (৪১) নামে এক ব্যক্তির স্ত্রী রুমা বেগম। শনিবার
(৪ ডিসেম্বর) এক সড়ক দূর্ঘটায় আক্কাচুর রহমানের একটি পা হাঁটুর নিচ থেকে
ভেঙ্গে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে যশোর পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করেন।
তিনি আর্স বাংলাদেশ নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যশোর চৌগাছা
অঞ্চালের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক। তার বাড়ি বরিশালের বাবুগঞ্জ থানার মাধবপাশা
গ্রামে।

ভুক্তভোগীর বড় বোন মোনা আক্তার ও স্ত্রী রুমা বেগম জানান, মোটরসাইকেল
দূর্ঘটনায় আক্কাচের পা ভাঙ্গার সাথে তার ভাসকুলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাকে
যশোর পঙ্গু হাসপাতালে নেয়া হয়। ওই হাসপাতালে ভাসকুলার সার্জন না থাকায়
ক্ষতস্থান শক্ত করে বেধে জোড়াতালি দিয়ে চারদিন অপচিকিৎসা করা হয়।
ক্ষতস্থান শক্ত করে বেধে রাখায় সেখানে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে পঁচন ধরে যায়।
বুধবার (৭ ডিসেম্বর) অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার পর ডা. আব্দুর রউফ বিষয়টি
বুঝতে পেরে অপারেশন করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

দ্রুত ঢাকা জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে রেফার করেন। বৃহস্পতিবার (৮
ডিসেম্বর) জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার (১০
ডিসেম্বর) জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক
প্রফেসার ডা. জাহাঙ্গীর আলমের তত্বাধনে আক্কাচুর রহমানের ডান পায়ে পঁচন
ধরায় জীবন বাঁচাতে হাঁটুর উপর থেকে কেটে ফেলা হয়। যশোরের অর্থোপেডিক
সার্জন প্রফেসর ডা. আব্দুর রউফকে ব্যাক ডেটেড বলেছেন বলে তারা জানান,
চিকিৎসক প্রফেসর ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চিকিৎসা জ্ঞানের অভাবে তাকে
চারদিন হাসপাতালে ভর্তি রেখেছিলেন। ভাসকুলার ইনজুরির কারণে যে নিয়মে
ব্যান্ডেজ করতে হয় সেভাবে করা হয়নি। ফলে ভেঙ্গে যাওয়ার পরের অংশে রক্ত
সঞ্চালন বন্ধ হয়ে মাংস পঁচন শুরু হয়। মাংস পঁচা শুরু হলে বেগতিক দেখে
তিনি ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে রেফার্ড করে।

ভাসকুলার সার্জন এর সহযোগিতা নিয়ে তিনি অপারেশন করতে পারতেন। এছাড়াও তারা
আরোও বলেন, পঙ্গু হাসপাতাল যশোরের প্রফেসর ডা. আব্দুর রউফ ডায়াগনোসিস
করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ওই বিষয়ে তাঁর জ্ঞান নেই। মারাত্মক ভাসকুলার
ইনজুরিতে দ্রুত চিকিৎসা করতে হয়। পরে হাড় ভাঙ্গার চিকিৎসা করতে হয়।
ভাসকুলার ইনজুরির রোগী ও স্টোক করার রোগীর যত দ্রুত চিকিৎসা দেয়া যায় তত
দ্রুত সুস্থতা বা আরোগ্য লাভের সুযোগ থাকে।

পঙ্গু হাসপাতাল নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। হাসপাতালটিতে রোগীকে জিম্মি করে
স্বজনদের গলা কাটা হয়। চিকিৎসা বাবদ মোটা অংকের বিল ধরিয়ে দেয়া হয়
স্বজনদের হাতে। যার প্রতিবাদ করায় খুন হতে হয়েছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের
আড়পাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী মফিজুর রহমানকে। নিখোজের তিনদিন পর গত দুই
এপ্রিল ডা. আব্দুর রউফের ব্যক্তি মালিকাধীন পঙ্গু হাসপাতালের লিফটের
নিচেই মেলে নিখোজ ব্যবসায়ী মফিজুর রহমানের (৬৫) গলাকাটা লাশ। হত্যার
অভিযোগে পঙ্গু হাসপাতালের মালিক ডাক্তার আব্দুর রউফ, পরিচালক ডাক্তার
নাজমুল সাদী রেজাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে গত ২৪ আগষ্ট নিহতের স্ত্রী রোমানা
বেগম বাদি হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন। সে বিষয়ে মামলা চলমান রয়েছে।

এছাড়াও পঙ্গু হাসপাতালে আসা রোগীদের জিম্মি করে লম্বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার
পর জরুরি অপারেশনের কথা বলা হয়। রোগীদের ভয় দেখিয়ে বলা হয় জরুরিভাবে
অপারেশন না করলে পঙ্গু হয়ে যাবে। অনেক সময় চুক্তি ছাড়াই রোগীকে অপারেশন
করা হয়। এর পরে বিল হাকানো হয় ইচ্ছ মতো। এসব কারণে পঙ্গু হাসপাতলের মালিক
ডাক্তার আবদুর রউফকে কসাই বলে অভিহিত করেছেন অনেকে।

আর্স বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক মো. শামছুল আলম বলেন, আক্কাচুর রহমানের
পায়ের হাড় ভাঙ্গার সাথে ভাসকুলার ইনজুরি হয়। ভাসকুলার ইনজুরির চিকিৎসা না
করায় তার পায়ের নিচের অংশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অবশেষে শনিবার (১১ ডিসেম্বর)
হাঁটুর উপর থেকে পা কেটে ফেলতে হয়। তার ক্ষতিপূরণের জন্য ডা. আব্দুর
রউফের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করাসহ আইনি নৌটিশ প্রদান করা হবে। শামছুল আলম
সাংবাদিকদের জানান।