বাংলাদেশ লেখক সমিতির ৫০৩ তম সাহিত্যসভা
অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ লেখক সমিতির ৫০৩ তম সাহিত্য সভা হয়ে গেল গত শনিবার ১৯ নভেম্বর বিকেলে। সভা শুরুর কথাছিল ৪টায়। নামাজ ও লেখকদের উপস্থিতি কম থাকায় শুরু হল ৪-৩০ মিনিটে। স্থানটি ছিল রাজধানীর কমলাপুরস্থ রেলওয়ের আঞ্চলিক স্কাউট ভবনের হল রুমে। অত্যন্ত সুন্দর ও মনোরম পারিবেশ। সাহিত্য সভার জন্য এমন জায়গা ঢাকা শহরে দ্বিতীয় আরেকটা আছে বলে জানা নেই। বাগান বাড়ি বললে ভুল হবেনা। সমিতির নিয়ম অনুযায়ী সংগঠনের সভাপতি রানা জামানের সভাপতিত্বে সঞ্চালন করেন সাধারণ সম্পাদক রবিউল মাশরাফি। সভায় যথাক্রমে প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি,আলোচক নির্বাচন করা হয়
কবি, সাংবাদিক আলম হোসেন,কবি নূর আল ইসলাম,কবি নাসির হেলাল ও কবি রহমান হাবিবকে।
সংগঠনের নিয়মানুযায়ী ছড়া পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল কার্যক্রম। এখন শীতকাল। তাই খান কাওসার কবিরের শীত উৎসব নামক ছড়া পাঠের মধ্য দিয়েই উপস্থিত শ্রোতারা শীতের পিঠার স্বাদ গ্রহণ করলেন। পাঠ করার সময় ছন্দের দোলায় দুলছিল কেউ কেউ।
কবি নূর মোহাম্মদ তার বিদেশি বেলুন কবিতায় তুলে ধরেছেন সম্প্রতি বিদেশি সংস্কৃতির বিস্তারে দেশীয় সংস্কৃতি আজ কোনঠাসা। প্রতিবাদ করতে গেলেও যেন ‘অজানা আতঙ্ক হাঁ করে রক্তেও কামড় মারে।’ অক্ষর বৃত্ত ছন্দে লেখা কবিতাটিকে আমরা প্রতিবাদী কবিতা হিসেবে উল্লেখ করতে পারি। সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লেখা মোহাম্মদ নূরুল হকের ছড়া সবার মন কেড়েছে। ‘নষ্ট এবং ভ্রষ্টরা সব’ নামক ছড়ায় সামাজিক অত্যাচার -অবিচার ছাড়াও নিত্যপন্যের দামবাড়ানো কথা বলে কবি বলেছেন একদিন এই ভ্রষ্টারা পালানোর পথ খুঁজবে।
ছড়াকার ফরিদ সাইদ পাঠ করেছেন ছড়া। অর্থ সঙ্কট, সামাজিক ভয় ভীতি ছাড়াও নৈতিক অবক্ষয় তার ছড়াটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। তিনি আঁধার গলিয়ে জাতিকে আলোর পথে হাঁটার আহবান করেছেন তার আঁধার কেটে আসুক আলো নামক সুপাঠ্য লেখায়।
জাফর পাঠান কবিতা পাঠ করেছেন। শিরোনাম আল্লহু আকবর। শিরোনামের মতোই উচ্চকণ্ঠের উচ্চারণ আল্লাহ বিরোধীদের বিরুদ্ধে। অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে সদম্ভব চিৎকার আল্লাহু আকবর।
গিয়াস হায়দার মৃত্যুভাবনা নিয়ে ছড়া পাঠ করেছেন। নাম ভল্লাগেনা। মৃত্যুর কথা মনে এলেই পাপের বিচারের কথা মনে আসে। তখন ভাল লাগেনা। স্রষ্টা যেহেতু ক্ষমাশীল তাই তার কাছেই সুখ কামনা করেছেন অনুতপ্ত হয়ে। ছড়ার ঢংয়ে বক্তব্যপ্রধান কবিতা পড়লেন শাহিন ইসলাম। শিরোনাম উপদেশ। তিনি বলছেন আল্লাহর জ্ঞানের কাছে সব তুচ্ছ। মৃত্যু হলেও আল্লাহর দেয়া পথে থাকতে হবে অবিচল। মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান পাঠ করেন চমৎকার একটা পদ্য। নাম আসমানী চাঁদ। মা ও ছেলে কাজের জন্য একসময় আলাদা হয়। মন আলাদা হয়না। কখনো কাছে এলে যেন চাঁদ হাতে পাওয়ার মত আনন্দিত হয়। কষ্টলীনা নামক কবিতা পাঠ করেছেন জেসমিন দীপা। কবিতাটির দীর্ঘ ব্যখ্যা হতে পারে।হতে পারে বিভিন্ন আঙ্গিকে। কষ্টের বিভিন্নরূপ তিনি বিধৃত করেছেন চির চির করে। কবিতাটি পাঠকে ভাবাবে।অক্ষরবৃত্ত ছন্দে লেখা। কবিতাটি কাব্যমানসম্পন্ন বলা যায়।পরের কবিতাও কষ্ট নিয়ে লিখেছেন আলম হোসেন। সহজ সরল কথায় বলেছন অনেক কষ্টই ভুলা যায় আপজনের কষ্ট এতই কষ্টদায়ক যা লেপ্টে থাকে বুকের মাঝে।কবিতার নাম আপনজনে। কিশোর গ্যাং
নিয়ে ছড়া লিখেছেন ওয়াজ কুরুনী ছিদ্দিকী। ছড়াটি সময়োপযোগী প্রতিবাদী ছড়া। ছন্দ মাত্রা ও শব্দ চয়ন প্রশংসনীয়।
কবি রানা জামান পাঠ করেন আমার আমিত্বে সাপের খোলস। নির্ভেজাল ছন্দ উপমায় ভরপুর চমৎকার শব্দের গাঁথুনি প্রকীকাশ্রয়ী কবিতা উপস্থিতির মন কেড়ছে এ আধুনিক কবিতাটি। কবি নূর আল ইসলাম উপস্থাপন করেছেন কদাকার চিমনি। এই চিমনিকে ধুয়ে মুছে ঝকঝকে পরিষ্কার করে সমাজকে আলোকিত করার পরামর্শ দিয়েছেন কবি। তার কবিতা পাঠে যেমন মুগ্ধতা ছিল তেমনি শব্দ চয়নে ছিল দারুন মুন্সিয়ানা। আধুনিক ঢং-এ লেখা কবিতাটি এক কথায় পথের দিশারী। রম্য ছড়া পাঠ করলেন জুলফিকার স্বপন। নাম ব্যাচেলর। ২৮বছর চাকরি করে বাচ্চা কাচ্চার বাপ হয়েও ব্যাচেলর ম্যাচে থাকায় নিজের ব্যাচেলর পরিচয় মুছতে পারেননি স্বল্প বেতনের এক কর্মী। বর্ননায় হাস্যরস থাকায় ভাল লেগেছে। মিলি হকের কবিতার শিরোনাম -জলে ভাসা চোখ। তিনি কবি পাশাপাশি বাচিক শিল্পী বলা চলে। বক্তব্য ছন্দ উপমা,অলঙ্করণেসমৃদ্ধ কবিতা প্রেমিদের জন্য পুষ্টিগুনসম্পন্ন উপাদেয়।
সৈয়দা হাবিবা মুস্তারিনের কবিতা’নারী তুমিই বাংলাদেশ।’ কবি বঙালি নারীদের বহুমুখী কর্ম তৎপরতায় দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে বিভিন্নভাবে। সহজ সরল কথায় কবিতাটি ব্যাপক অর্থবহ। কাঙ্খিত সাদা’সরদার আব্বাস উদ্দিনের কবিতা। তিনি সাদা মনের মানুষ খুঁজতে গিয়ে ওলটপালট করলেন সব। সাদা পেয়েছেন তবে কাঙ্খিত নয় কেউ। তবে কবিতায় ছন্দের গতিময়তা ভাল লেগেছে। মানব সমাজকে লক্ষ্য করে কবি তার হে মানুষ কবিতায় তালে তালে বেতাল মানুষকে তালে আনার জন্য নসিহত করেছন। বিশ্বে অন্যায় অবিচারে ভরপুর।আধুনিকতার নামে উলঙ্গপনা এখন কারো কারো কাছে অন্যায় নয়। সমকামিতার অপরাধে একবার মানুষের উপর গজব এসেছিল।এখন আইন করে জায়েজ করা হচ্ছে।কাজেই আবারো গজব আসবেই। তিনি বিশ্বসমাজের অনেক অসঙ্গতি তুলে ধরেছেন তার স্বরবৃত্ত ছন্দে লেখা কবিতায়। ইচ্ছে করে কবিতাটি তরতর করে পড়েছেন কবি এম এ হালিম খান।মানুষ কখনো গৃহ বন্দি পছন্দ করেনা। সে উড়তে ঘুরতে চায়। পাশাপাশি জনকল্যাণ করতেও চায়।কবি এমনটাই বলেছন তার কাব্যকথায়। তুমি আমার অসুখ হইও /আমি তোমার সুখ।প্রেমিকার প্রতি এমনি প্রেম নিবেদন প্রেমিকের। আর এটা লিখেছেন কবি রহমান হাবিব। অনুষ্ঠানে প্রেমের কবিতা ছিল একটাই। নতুন নতুন শব্দচয়নে নিপুনতার পরিচয় দিয়েছেন। জহির উদ্দিন স্বপনের কবিতা বারাবরই ভাল লেখেন।এসভায়ও ভাল কবিতা পাঠ করেছেন। নাসির হেলাল সুরা ফিল-এর কাব্যানুবাদ করে নব্য আবরাহাদের মনে করে দিয়েছেন ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির কথা।
একটি গল্প পড়েছেন কথাশিল্পী নাসিমুল বারী।তিনি বরাবরই ভাল গল্প লেখেন। রাতের অভিসারিকা নামে চমৎকার রোমান্টিক প্রেমের গল্প উপস্থাপন করে সকলের মন কেড়েছেন।
প্রেম ও শাসন বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন আবুল খায়ের নঈমুদ্দিন। তিনি বলেন, যার মনে প্রেম-ভালবাসা নেই সে ভাল শাসক হতে পারেনা।
কবি বলেছেন শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে গো।তার দীর্ঘ আলোচনায় উদাহরণসহ তা সুন্দরভাবে বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন। স্বর্গ হতে আসে প্রেম স্বর্গে চলে যায়।গাজী মো আবু সাঈদ তার প্রেম বিষয়ক প্রবন্ধে মানুষকে আল্লাহর প্রেমে মশগুল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। যেমন আল্লাহ বলেছেন ‘তোমরা আমাকে স্মবণ কর আমি তোমাদের স্মরণ কররো। তার আলোচনার মুল বিষয় এটাই ছিল। পঠিত গদ্য লেখার ওপর আলোচনা করেন জনাব নাসির হেলাল। তিনি বলেন কাকতালীয়ভাবে তিনটি লেখাই ভালবাসা নিয়ে লেখা। অবশ্য বিভিন্ন আঙ্গিকে। তিনি প্রবন্ধের কাঠামো নিয়ে কথা বলেন।লেখাগুলো আরো সমৃদ্ধ করার পরার্মশ দেন। তবে লেখারগুলোর প্রশংসা করে আগামিতে আরো প্রবন্ধ লিখতে উৎসাহিত করেন। পঠিত ছড়া কবিতার ওপর চুলচেরা আলোচনা করেন কবি রহমান হাবিব। তিনি যেমন লেখকদের ভুল ধরিয় দিয়েছে তেমনি প্রশংসাও করেছেন। বিশেষ অতিথি কবি নূর আল ইসলাম ও প্রধান অতিথি আলম হোসেন সাহিত্যের বিভিন্ন প্রসঙ্গিক বিষয় নিয়ে কথা বলেন।সভাপতি রানা জামান সংগঠন পরিচালনায় সকলে সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি পঠিত ভাল লেখার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন এখন থেকে প্রতি মাসে তিনজন লেখককে বই পুরস্কার দেয়া হবে। এ আসরেও তিনজনকে পুরস্কৃত করা হয়। তিনি যথাসময়ে সকলকে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করে সভা সমাপ্ত করেন।