আসামিকে কবরস্থানে আটকে রেখে পুলিশের মুক্তিপণ আদায়

ভাঙ্গুড়া প্রতিনিধি ঃ

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় হজের এজেন্সিতে কর্মরত আলহাজ্ব জামাত আলী নামে ওয়ারেন্টের এক আসামিকে অপহরণ করে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে পুলিশ কর্মকর্তা ও কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। রোববার মধ্যরাতে জামাত আলীকে অপহরণের সময় স্ত্রী ও কন্যাকে শারীরিক লাঞ্ছিত করে বলেও অভিযোগ পরিবারের। ভাঙ্গুড়া থানা পুলিশের সহকারি উপ পরিদর্শক এএসআই জাহিদ হাসান ও পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুরুল ইসলাম এই ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে জামাত আলীর মেয়ে পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জায়গা সংক্রান্ত বিরোধীদের জেরে সরকার পক্ষ বাদী হয়ে দায়ের করা একটি মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি জামাত আলী। এএসআই জাহিদ ও কাউন্সিলর জহুরুল রবিবার রাত পৌনে এগারোটার দিকে পৌরশহরের সরদারপাড়া মহল্লায় জামাত আলীর বাড়িতে যায়। সেখানে তারা জামাত আলীকে নিয়ে নির্জন কোন স্থানে যেতে চায়। এতে বাধা দেয় জামাত আলীর স্ত্রী ও দুই কন্যা। কিন্তু স্ত্রী ও কন্যাদের লাঞ্ছিত করে জামাত আলীর হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে মোটরসাইকেলে করে তুলে নিয়ে যায় ওই পুলিশ কর্মকর্তা। পরে জামাত আলীকে উপজেলা শহর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে পারভাঙ্গুড়া কবরস্থানের সামনে নির্জন স্থানে আটকে রেখে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করা হয়। অবশেষে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দেয়ার কথা স্বীকার করলে কাউন্সিলর জহুরুল ইসলাম জামাত আলীর বাড়ি গিয়ে নগদ ৬০ হাজার ও ৯০ হাজার টাকার একটি চেক নিয়ে আসে। এরপর রাত একটার দিকে জামাত আলীকে বাড়ি পৌঁছে দেয় ওই পুলিশ কর্মকর্তা ও কাউন্সিলর। পরের দিন পৌরসহরের শরৎনগর বাজারের অগ্রণী ব্যাংকের শাখা থেকে ওই চেকের টাকা উত্তোলন করে নেয় তুহিন নামে এক ব্যক্তি।

এদিকে জামাত আলী পলাতক থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে তার মেয়ে রিয়া আক্তার মিম অভিযোগ করেন, ওয়ারেন্টির আসামি কিনা আমার বাবা তা জানা নেই। মধ্যরাতে কাউন্সিলর জহুরুল ও পুলিশ অফিসার জাহিদ কোন কাগজপত্র না দেখিয়ে বাবাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায়। এসময় বাধা দিলে আমার হাতে হ্যান্ডকাফ পড়ায়। এ সময় আমার সাথে ও মায়ের সাথে নোংরা আচরণ করে। আমার বাবা মূর্খ হওয়ায় বাড়ির ফোন নাম্বার বলতে পারেনি। পরে কাউন্সিলর জহুরুল বাড়িতে এসে ফোন ধরিয়ে দিয়ে দেড় লাখ টাকা দিতে বলে। টাকা উচিত দেয়ার পরে বাবাকে তারা বাড়িতে রেখে যায়।

অভিযোগের বিষয়ে সহকারি উপ পরিদর্শক এসআই জাহিদ হাসান বলেন, জামাত আলী হৃদরোগ ও শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত। তাই ওয়ারেন্ট ভুক্ত আসামি হওয়ায় তাকে আটক না করে জামিন নেওয়ার জন্য সময় দিতে একটু দূরে নিয়ে কথা বলা হয়েছে মাত্র। টাকা পয়সা নেওয়া ও স্ত্রী কন্যাকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে তিনি দাবি করেন।

কাউন্সিলর জহুরুল ইসলাম এই অভিযোগের বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি রাশিদুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে অভিযোগ এসেছে। একজন ব্যক্তির অপকর্মের দায় পুরো বিভাগ নিবে না। তাই ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে।

কথা বলতে পাবনা পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সিকে ফোন করেও পাওয়া যায়নি।