হরিজনদের কর্মবিরতিতে যশোর শহরে ময়লার স্তূপ

পাঁচ দফা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন যশোর পৌরসভার
পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। ফলে ময়লারস্তূপ জমে ভাগাড়ে রূপ নিয়েছে শহর যশোর।
সম্প্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের পরামর্শে পরিচ্ছন্ন শহর প্রকল্পের আওতায়
গৃহস্থালী বর্জ্য সংগ্রহের জন্য ‘স্মরণ’ ও ‘সম্মৃদ্ধি’ নামে দুটি
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সাথে সমঝোতা হয় পৌরসভার। যারা মাসিক ৫০ থেকে ১৫০
টাকার বিনিময়ে নাগরিকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আধুনিক
পদ্ধতিতে ময়লা সংগ্রহ করবে। এরই প্রেক্ষিতে আন্দোলন শুরু করেন পৌরসভার
চুক্তিভিত্তিক পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।
পৌরসভা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মতিলাল হরিজন জানান, নগর ও গৃহস্থালী
বর্জ্য সংগ্রহে এনজিওর সাথে সম্পাদিত চুক্তি বাতিল, পৌরসভায় অহরিজনদের
নিয়োগ বাতিল, মজুরি বৃদ্ধি, চাকরি স্থায়ীকরণ ও শ্রম আইন বাস্তবায়নে
কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি রেখেছিলেন তারা। মেয়র আশ্বাস দিয়েছিলেন, তিনি
দাবি-দাওয়া পূরণ করবেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত দাবি পূরণের কোনো আলামত দেখা
যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে তারা শহরের ময়লা অপসারণ বন্ধ করে কর্মবিরতি
পালন করছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত দাবি না মানা হবে ততক্ষণ শ্রমিকরা কাজে
ফিরবেন না। শহরের কোনো ময়লা স্থানান্তরও করা হবে না।

মতিলাল বলেন, ‘মেয়র সাহেব ঢাকায় থাকায় আমাদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সের
মাধ্যমে কথা বলার জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। কিন্তু আমরা ওভাবে মেয়র
সাহেবের সাথে কথা বলতে চাচ্ছি না। এর আগেও তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন,
কিন্তু তা তিনি বাস্তবায়ন করেননি। তিনি যদি আমাদের সাথে কথা বলতে চান তবে
আমাদের ইউনিয়ন বরাবর একটা চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানাক। তাহলে আমরা সেখানে
সব শ্রমিক সংগঠন এবং সাংবাদিকদের নিয়ে মিটিং করতে যাব। অন্যথায় পাঁচ দফা
দাবি না মানা পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করবো না।’

পৌর নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার
রেন্টু ঢাকায় অবস্থান করায় শ্রমিক আন্দোলন বিষয়ে তার বক্তব্য জানা সম্ভব
হয়নি।

তবে এই বিষয়ে পৌরসভার সচিব আজমল হোসেন বলেন, ‘আমরা লোক পাঠিয়ে তাদের
(শ্রমিকদের) আলোচনার জন্য ডেকেছি। কিন্তু তারা আমাদের কাছে না এসে তৃতীয়
কোনো পক্ষের উসকানিতে কাজ বন্ধ করে আন্দোলন করছে। মেয়র মহোদয় নির্বাচনের
কাজে ঢাকায় অবস্থান করায় আমরা তাদের অপেক্ষাও করতে বলেছি। কিন্তু তারা তা
শোনেনি, কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘হরিজনদের একটি দাবিও যৌক্তিক নয়। বাংলাদেশের কোনো
পৌরসভায় মাস্টাররোল ছাড়া পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ হয় না। তারপরও আমরা
মেয়রের সাথে আলাপ করে তাদের দু-একটা দাবি বিবেচনা করার কথা জানিয়েছি।
কিন্তু তারা সে পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে পারলো না। আর তারা এনজিওর সাথে যে
চুক্তির কথা বলছে, এটা বিভ্রান্তিকর। তাদের কাজ রাস্তা পরিষ্কার করা,
বাসা-বাড়ির ময়লা সংগ্রহ নয়। কিন্তু তারা অনেকটা গায়ের জোরে এটা করতে চায়।
এর ফলে নাগরিকরা হয়রানি আর অস্বস্তির শিকার হচ্ছেন।’

শহরের ময়লার স্তূপের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আজমল হোসেন বলেন, ‘তারা
যদি ময়লা না ফেলেন, তাহলে আমরা পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় শ্রমিক ভাড়া
করে ময়লা অপসারণ করবো। এটা নিয়ে নাগরিকদের চিন্তার কারণ নেই। ওসি সাহেবকে
জানিয়েছি, তিনি হরিজনদের সাথে বসে আলোচনা করে আমাদের জানালে আমরা পরবর্তী
পদক্ষেপ নেব।’

এদিকে, দাবি আদায়ের লক্ষে বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি)  মিছিল ও বিক্ষোভ
সমাবেশ করেছে পৌরসভা শ্রমিক ইউনিয়ন। দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরের সামনে
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি মতিলাল হরিজন, সাধারণ
সম্পাদক কমল বিশ্বাস, হরিজন ঐক্য পরিষেদের যশোর জেলা সভাপতি রাজেন
বিশ্বাস, সহ-সভাপতি মন্টু হরিজন, আনন্দ দাস, সাধারণ সম্পাদক কমল বিশ্বাস,
পৌর শাখার সাধারণ সম্পাদক বিষ্টুকুমার দাস, গোরাপাড়া আঞ্চলিক নেতা বাবলু
দাস, ধর্মতলা আঞ্চলিক নেতা শ্রীরাম প্রমুখ।