এবাদত আলী
এর কিছুক্ষণ পর সত্যি সত্যিই হাচেন বীর জনতার ভিড় ঠেলে ঈদগাহ ময়দানের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। দু হাতের কব্জিতে এবং গলায় লাল রংয়ের মাল পেঁচানো, পরনে লাল রংয়ের হাফ প্যান্ট পরে হাচেন বীর বীরদর্পে মাঠের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো। বড় মাপের রাজনৈতিক নেতার জন্য শত ভীড়ের মাঝেও জনসাধারণ যেমন করে নেতার গমনাগমণের পথ করে দেয় ঠিক তেমনি লোকজন হাচেন বীরের জন্য পথ করে দিলো।
হাচেন বীর ধীরে ধীরে মাঠের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে খানিক এদিক সেদিক চেয়ে ইয়া আলী বলে চিৎকার করে উঠে লাফাতে লাগলো। তার লম্ফ ঝম্ফ দেখে কে? বিরাট ঈদগাহ মাঠের এ প্রান্ত হতে ও প্রান্তে সে বীর দর্পে দৌড়া দৌড়ি ও ছুটা-ছুটি করতে থাকে। উপস্থিত হাজার হাজার মানুষ অতি উৎসাহ ভরে হাচেন বীরের শারিরীক ক্রীড়া-কসরত দেখতে লাগলো। কিন্তু সমস্যা দেখা দিলো মূল লড়াইকে কেন্দ্র করে। অর্থাৎ লড়াই করার জন্য হাচেন বীর মাঠে নেমেছে । হচেন বীর লড়বে কিন্তু কার সঙ্গে লড়বে? আসল সমস্যা এই খানেই।
লড়াই পরিচালনা কমিটির কর্মকর্তারা ততক্ষণে ঘেমে নেয়ে উঠেছেন। হাচেন বীরের সঙ্গে লড়াই করার মত কোন মহিষ মিলছেনা। মির্জাপুর গ্রামের বেশ কয়েক ব্যক্তি হাচেন বীরের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য তাদের মহিষ দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু হাচেন বীরের এহেন বীরত্ব দর্শণের পর মহিষের মালিকদের দারুন ভয় ধরে গিয়েছিলো যদি লড়াই করতে গিয়ে তাদের মহিষের মৃত্যু ঘটে তবে ক্ষতিপুরণ দেবে কে? মহিষের মালিকগণ একজোট হয়ে লড়াইয়ের আয়োজকদের নিকট জানালো যদি হাচেন বীরের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে তাদের মহিষের মৃত্যু ঘটে তাহলে ক্ষতিপুরণ দেবে কে?। তারা বললো কমিটি যদি এই দায়িত্ব নেয় তবে তারা লড়াইয়ের জন্য মহিষ ই মাঠে নিয়ে আসবে নচেৎ নয়।
ফাঁকা মাঠে হচেন বীরের লাফা লাফি দেখে আয়োজকগণও ঘাবড়ে যায় সত্যি সত্যি যদি লড়াই করতে গিয়ে মহিষের মৃত্যু ঘটে তবে তারা কেন এর দায়ভার বহন করতে যাবে? এমনিভাবে দর কষাকষি করতে করতে একসময় মহিষের মালিকগণ সেখান থেকে সরে যায়। আয়োজকগণও অবস্থা বেগতিক দেখে আস্তে আস্তে গা ঢাকা দেয়। হাচেন বীরের সঙ্গে মহিষের লড়াইয়ের জন্য সেখানে আর কোন মহিষ পাওয়া যায়না।
দীর্ঘক্ষণ ধরে অপেক্ষা করার পর যখন মহিষের লড়াইয়ের সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ তখন উপস্থিত হাজারো দর্শকের মাঝে গুঞ্জন শুরু হয়। লোকজন চিৎকার চেচামেচি আরম্ভ করে দেয়। কেউ কেউ বলতে থাকে আমরা অত শত বুঝিনা আমরা লড়াই দেখতে চাই। আমরা যখন লড়াই দেখতে মাঠে এসেছি তখন গরুর কিংবা মহিষের যার লড়াই্ হোকনা কেন আমরা লড়াই দেখতে চাই। উপস্থিত লোকজন ভীষণ চেঁচামেচি শুরুকরে দেয়। রাজনৈতিক কোন সমাবেশ হলে হৈ হট্টগোল করতে করতে লাঠ লাঠি হতো, মাথা ফাটা ফাটি হতো। ভাগ্যিস এই ঈদগাহ মাঠে তেমন কোন ঘটনার অবতারনা হয়নি। তবে লড়াইয়ের আয়োজকদের চৌদ্দ গোষ্ঠি উদ্ধার যে করা হয়নি তা কিন্তু নয়। অবস্থা বেগতিক দেখে আয়োজকরা আগে ভাগেই কেটে পড়েছিলো বলে রক্ষে তা না হলে তাদের ভাগ্যে যে কি ঘটতো তা ভাবাই মুশকিল।
অগত্যা সেদিনের মত মহিষের লড়াই আর হলোনা। কিন্তু হাচেন বীরের সাহস হাজারো গুনে বেড়ে গেল। ফাঁকা ময়দানে হাচেন বীর ইয়া আলী ইয়া আলী বলে জোরেশোরে লাফাতে লাগলো। সেই থেকে হাচেন বীরের সাহস এমনি বৃদ্ধি পায় যে এ ঘটনার কিছু দিন পর পাবনা স্টেডিয়ামে (তৎকালিন জিন্নাহ পার্ক) প্রখাত কুস্তিবিদ আাসলাম, গোগা, কিংকং এবং করাচির মজিদ প্রমুখ কুস্তিবিদগণ কুস্তি প্রদর্শনের জন্য আগমণ করেন। এই খবর শোনার পর সেই হাচেন বীর ঐসকল কুস্তি বিদদের সঙ্গে কুস্তি লড়াইয়ের জন্য তথায় গিয়ে হাজির হয়। হাচেন বীরের প্রস্তাব শুনে কুস্তিবিদ আসলাম সাহেব নাকি তার বাম হাতের কব্জির উল্টো পীঠ দিয়ে হাচেন বীরকে একটি চাঁটি মারলে হাচেন বীর তিন উল্টান দিয়ে পাঁচ-সাত হাত দুরে ছিটকে পড়ে বাবারে-মারে মরে গেলামরে বলতে বলতে ছুটে পালাতে চেষ্টা করে। কিন্তু আসলাম সাহেব একটু রশিকতা করার জন্য হাচেন বীরের ঘাড় ধরে খানিকটা শুন্যে উঠিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে বলেন, ‘ইয়ে আদমীকো মেন্টাল হসপিটাল মে লে যাও।’ (ক্রমশ:)
(লেখক: সাংবাদিক, কলাস্টি)।
এবাদত আলী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সদস্য পাবনা প্রেসক্লাব