লালমনিরহাট প্রতিনিধি।
লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম পৌরসভা সাধারণ নির্বাচনের ৫বছর মেয়াদপূর্তি হতে চলছে।৪র্থ দফায় ২০২১ সালে ১৪ ফেব্রুয়ারি পাটগ্রাম পৌরসভার সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে তফশীল ঘোষণা করা হয়েছে।এবারের
সাধারণ নির্বাচনে ভোটের লড়াই হবে হেভিওয়েট প্রার্থীদের।পাটগ্রাম উপজেলা ও
পৌর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের মাঝে দেখা দিয়েছে স্নায়ু যুদ্ধ। একজন-আরেকজনকে
দোষারোপ করে প্রচার-প্রচারনায় মাঠ সরগরম করে তুলেছেন। উপজেলা ও পৌর বিএনপির
একই অবস্থা হলেও এবারে তারা নিজেদের ঘরে যাচাই- বাছাই করে প্রার্থীতা
দিবেন একজনকে। আওয়ামী লীগ-বিএনপির ডজনখানেক হেভিওয়েট প্রার্থী। এ সুবাদে
সুযোগ সন্ধানী জাপা এবার ছিনিয়ে নিতে চান মেয়র পদটি এমন তথ্য জানা গেছে।
তারা পুরাতনকে নতুন করে সাজাতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন। আওয়ামী লীগের
রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এখন চাউর হয়ে গেছে।ভোটের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, আলোচনা ততই
চায়ের টেবিলে ঝড় তুলছে। ইতোমধ্যে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা
ব্যানার-ফেস্টুন-পোস্টার লাগিয়ে দোয়া প্রার্থী হয়ে মাঠে নেমেছেন। বর্তমান
মেয়র মোঃ শমসের আলী তাঁর জীবনে প্রথমবার ১৯৮৭ সালে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য এরপর
পরপর ২বার পাটগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ২০০২ সালের ২০ জুলাই
পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত ও পরপর ২বার মেয়র নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী
হয়ে নগরপিতা হিসেবে আজ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এবার তাকে হারাতে
বড় ২টি দলের হেভিওয়েট একডজন মেয়র প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। একজন নগর
পিতার আসনে জনগণ যাকে পছন্দ করবে তাকেই ভোট দিবেন। বর্তমান মেয়র শমসের আলী
আবারও নৌকা প্রতীক পাবেন, নাকি অন্য কেউ এবারে নৌকা প্রতীক ছিনিয়ে নিবেন
এমন জল্পনা-কল্পনা চলছে হাটে-বাজারের চায়ের টেবিলে রাজনৈতিক মহলে। এবারে
আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক চেয়ে ইতোমধ্যে ১০জন প্রার্থী তাদের আবেদন জমা
দিয়েছেন পাটগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বাবু পূর্ণ চন্দ্র-এর বরাবরে।
সেই আবেদনগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে স্থানীয় জাতীয় সংসদ সদস্য মোতাহার
হোসেনের কাছে।দলীয়
ও প্রচারণা সূত্রে জানা গেছে, আগামী পৌরসভা সাধারণ নির্বাচনে মেয়র পদে
প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক চেয়ে আবেদন করেছেন অনেকে। তাদের মধ্যে ২জন
হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক ছাত্রনেতা পরপর ২বার পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ
সম্পাদক কাজী আসাদুজ্জামান আসাদ ও পাটগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক
দপ্তর সম্পাদক কাদের এলাহী লাভলুর নাম সেই তালিকায় দেয়া হয়নি। তবে বর্তমান
মেয়র পাটগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি শমসের আলী, পরপর ২বারে
নির্বাচিত পৌর সভাপতি গোলাম রব্বানী, যুবলীগ সভাপতি রাশেদুল ইসলাম সুইট,
পাটগ্রাম উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছাত্রনেতা আক্তারুল ইসলাম সুমন,
কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বর্তমান পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন
আহমেদ ইকবাল রমি, তরুণ লীগের পাটগ্রাম উপজেলা সভাপতি তারেকুজ্জামান ফাইন,
তরুণ লীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল হক আরিফ, পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক
সম্পাদক সাইফুর রহমান তফু, ছাত্রনেতা রুবেল, বাদশাসহ ডজনখানেক প্রার্থী।অপরদিকে
প্রার্থী সংকটে চলছে বিএনপির রাজনীতিতে। পৌর বিএনপির সদস্য সচিব মোর্শেদ
আলম একবার পৌর নির্বাচনে হেরে গেলেও এবার দল তাকেই মনোনয়ন দিতে পারে এমন
গুঞ্জন উঠেছে।পাটগ্রাম পৌর বিএনপির সভাপতি গত ২বার পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে
ভোট করে অল্প ভোটে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন বলে এবারে তারা
নতুন প্রার্থীর খোঁজে মাঠে নেমেছেন। এ কারণে জাতীয় পার্টির লক্ষ্য পাটগ্রাম
পৌরসভার মেয়র পদে যোগ্য প্রার্থী দিয়ে নিজেদের ঘরে আনতে কাজ করছেন জাপা।অন্যদিকে
বিএনপির পৌর আহবায়ক এ কে এম মোস্তফা সালাউজ্জামান ওপেল, সদস্য সচিব
মোর্শেদ আলম শ্যামল, পাটগ্রাম উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক সফিকার রহমান ও
পাটগ্রাম উপজেলা ছাত্রদল সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছাত্রনেতা সাইফুল ইসলাম সবুজ
মনোনয়ন প্রত্যাশী।
এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এখনও ঘোষণা করা হয়নি। এবারে পাটগ্রাম পৌরসভার প্রায় ১৯হাজার ভোট। গতবার ১৬হাজার ২শত ৬৪ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মেয়র শমসের আলী পেয়েছিল ৭হাজার ১শত ৫২টি এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী একেএম মোস্তফা সালাউজ্জামান ওপেল পান ৪হাজার ১শত ২৪টি। তৃতীয় অবস্থানে ছিলেন সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মেয়র প্রার্থী ওয়াজেদুল ইসলাম শাহীন ৩হাজার ৮শত ৯৪টি, চতুর্থ অবস্থানে ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী ১হাজার ৯৪টি ভোট।
এবারের নির্বাচন হবে টাফ। দলের ভিতরে কোন্দল মিটিয়ে একজন প্রার্থী নির্বাচন করতে না পারলে জাপার সুযোগ সন্ধানী কৌশলকে টপকে মেয়র পদ ছিনিয়ে নিতে পারেন বিএনপি এমন ধারনা পৌরবাসীর। সব মিলে পৌরসভা সাধারণ নির্বাচনকে ঘিরে পাটগ্রামে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা।