চলনবিল এলাকার কৃষকেরা অগ্রহায়ন মাসে জমি থেকে বোনা আমন ধান, বীনা সেভেন, ব্রীধান উনচল্লিশ, স্বর্ণাসহ বিভিন্ন জাতের ধান কেটে ঘরে তুলেছেন। বর্তমান চলনবিল এলাকার হাট বাজারে বেশ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ধান। চালের দামের তুলনায় ধানের দাম বেশি হওয়ায় এ এলাকার মিল চাতাল মালিকরা ঝুঁকি নিতে ভয় পাচ্ছেন। এছাড়া বন্যায় এ এলাকার ধান ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া ও অটো মিলের প্রভাবে চলনবিল এলাকার অর্ধেক হাস্কিং মিল এখনও চালু হয় নি। মৌসুম শুরুর আগে চলনবিলাঞ্চলের চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, সিংড়া, তাড়াশসহ এর আশ পাশ এলাকার ধান চাল ব্যবসায়ীদের হাস্কিং মিল চাতাল ব্যবসা প্রায় বন্ধই ছিল। ধান ওঠার পরও ধানের সংকট থাকায় অর্ধেক ব্যবসায়ী এখনো ব্যবসা শুরু করতে পারেননি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমান চলনবিলাঞ্চলের চাটমোহরের অমৃতকুন্ডা, মির্জাপুর, ভাঙ্গুড়ার শরৎনগর, ফরিদপুরের এরশাদ নগর, গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড়, নাজিরপুর, বড়াইগ্রামের জোনাইল, বনপাড়া, সিংড়ার সিংড়া সদর, তাড়াশের হাটবাজারসহ চলনবিলাঞ্চলের অন্যান্য হাট বাজারে প্রতিমন পুরাতন ২৯ ধান ১ হাজার ২শ ৩০ টাকা, নতুন বীনা-৭ ধান ১ হাজার ১শ টাকা, নতুন স্বর্ণা ধান ১ হাজার ১শ ৫০ টাকা মন দরে বিক্রি হচ্ছে। এর সাথে যোগ হচ্ছে পরিবহন খরচ ও মিল খরচ বাবদ আরো ৮৫ টাকা। প্রতি মন ২৯ ধান থেকে চাল করতে ব্যবসায়ীদের খরচ হয়ে যাচ্ছে ১ হাজার ৩শ ১৫ টাকা। এ ধান থেকে ২৬ কেজি নন সুটার চাল হচ্ছে যার বর্তমান বাজার মূল্য ১ হাজার ৩শ ১৪ টাকা। চাল সুটার মিলে প্রসেস করলে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে ৫০ থেকে ১শ টাকা। প্রতিমন ধানে ১শ টাকার খুদ গুড়া পাচ্ছেন ব্যবসায়ী। সব মিলিয়ে লাভ করতে পারছেন না হাস্কিং ধান চাতাল মিলের ধান চাল ব্যবসায়ীরা।
চাটমোহর রাইস মিল মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মুত্তালিব জানান, ব্যাপারীদের নিকট থেকে ধান কিনতে হয় আমাদের। ধান কেনা, লেবার বিল, ভাঙ্গানো খরচ ও বস্তার দাম মিলে আমাদের যে টাকা খরচ পরছে সে হিসেবে চাল বিক্রি করে লাভ হচ্ছে না। উপজেলার মির্জাপুরের চাল কল মালিক রবিউল করিম জানান, ধানের দামের তুলনায় চালের দাম আরো বেশি হলে তবেই ব্যবসায়ীদের লাভ হবে। চলনবিল এলাকার উপজেলা গুলোর মধ্যে সর্বাধিক ধানের মিল চাতাল অধ্যুষিত এলাকা গুরুদাসপুর। এ উপজেলার চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ¦ শামসুল হক শেখ জানান, গুরুদাসপুরে সমিতির আওতা ভূক্ত ১৮৪ চাল কল সহ প্রায় ৩শ মিল চাতাল রয়েছে। দুইটি অটো মিল ও রয়েছে গুরুদাসপুরে। এলাকায় ধান সংকটের কারণে এ এলাকার ছোট ছোট ধান চাল ব্যবসায়ীরা এখনো ব্যবসা শুরু করতে পারেন নি। বাইরের জেলা গুলো থেকে আমাদের ধান সংগ্রহ করতে হচ্ছে। কোন কোন সময় লাভ লোকসান কোনটাই হচ্ছে না। কখনো মন প্রতি ২০ টাকা লোকসান হচ্ছে আবার কখনো ২০ টাকা লাভ হচ্ছে। তিনি আরো জানান, এ অবস্থায় কৃষক ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন। আশা করা যাচ্ছে আগামিতে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। কৃষক আবার ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছে।
অটো মিলে অপেক্ষাকৃত প্রসেস খরচ কম। বাজারে ধানের সংকট থাকায় চলনবিল এলাকার অটো মিল মালিকরা বেশী দাম হলেও মিল সচল রাখতে বাধ্য হয়ে ধান কিনছেন। ধানের বাজার উর্ধ্বমুখী হওয়ায় কৃষক ও বেশি দামের আশায় খুব প্রয়োজন ছাড়া ধান বিক্রি করছেন না। যোগান কম এবং অটো মিলারদের অধিক ধান ক্রয়ের ফলে হাস্কিং মিলের মালিকরা ধান কিনতে পারছে না। পাশাপাশি যেসব ব্যবসায়ীর পুঁজি কম তারা বাইরে থেকে ধান কিনতে পারছেন না।
জানা গেছে, গুরুদাস পুরে প্রায় ৩শ, চাটমোহরের প্রায় ৮৭, সিংড়ায় প্রায় ১শ টি, বড়াইগ্রামের দেড় শতাধিক মিলচাতালসহ চলনবিলাঞ্চলে প্রায় ৮ শতাধিক মিল চাতাল রয়েছে। এক একটি মিল চাতালে গড়ে প্রায় ২২ জন নারী পুরুষ শ্রমিক কাজ করতো। এসব মিল চাতালে অন্যান্য সময় প্রায় ১৮ হাজার শ্রমিক কাজ করলেও বর্তমান নয় থেকে দশ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। অন্যরা পেশা পরিবর্তন করে কেউ ইটের ভাটায় কেউ খেত খামারে কাজ করছেন। কেউ কেউ রিক্সা ভ্যান চালাচ্ছেন অথবা অন্য পেশায় নিয়েজিত হয়েছেন।