নাটোর প্রতিনিধি
নাটোরের গুরুদাসপুরে মামলাবাজ সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বসতভিটার জায়গা দখল ও চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণাসহ শতাধিক গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এঘটনাটি উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের বাবলাতলা গ্রামের।
অভিযুক্ত সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তার নাম মো. আব্দুল বারী। দূর্নীতিদমন কমিশন (দুদুক) বগুড়া অফিসে পুলিশ পরিদর্শক ছিলেন। ২০১৬ সালে অবসরে যান তিনি। দুদুকের বগুড়া অফিসের সহকারি পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম মুঠোফোনে তাঁর পদটি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও অবৈধভাবে দখল করা জায়গা দখলমুক্তসহ চাকরির নামে হাতিয়ে নেওয়া টাকা ফেরত চেয়ে মানববন্ধন কর্মসুচী পালন করেছেন গ্রামের মানুষ। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে বাবলাতলা গ্রামের ‘ চিকুর মোড়ে’ ওই কর্মসুচীর আয়োজন করা হয়। পুরুষের পাশাপাশি নারীও এতে অংশ গ্রহন করেন।
মানববন্ধন কর্মসুচীতে উপস্থিত ভুক্তভোগী আব্দুল হাকিম ও আবতাব মোল্লার ১৭ শতক জায়গা দখল করেন। হোসেন আলীর অভিযোগ তাঁর ৬ কাঠা জায়গা জোর করে ভোগ দখল করছেন পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল বারী।
স্থানীয় বাসিন্দা ছইমুদ্দিন অভিযোগ করেন তাঁর ৮ বছরের মেয়েকে ২ হাজার টাকা মাসিক চুক্তিতে গৃহকর্মী রেখেছিলেন তিনি। ৫ বছর কাজ করলেও মজুরিদেননি। পরে ৩ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। পরে ফাঁদে ফেলে ৩০ হাজার টাকা আদায় করেছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল বারী।
বেকার যুবক আব্দুর রহিম অভিযোগ করেন পুলিশের চাকরি দেওয়ার কথা বলে ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। চাকরি ও টাকা ফেরত না দেওয়ায় ভুক্তভোগী রহিমের বড়ভাই রাশিদুল ইসলাম বাদী হয়ে গুরুদাসপুর আমলি আদালত-৩ প্রতারণা মামলা (মামলা নং-২৪০ সি/১৯) দায়ের করেন। সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল বারীকে এ মামলায় আসামী করা হয়।
এসব ঘটনার প্রতিবাদ করায় জায়গার মালিকসহ ১০০জন গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, নারী নির্যাতন, ১৪৪ ও ৭ ধারা এবং সিভিল কোর্টসহ মোট ৫টি মামলা দায়ের করছেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল বারী। প্রতিটি মামলায় একই ব্যক্তিদের আসামী করা হয়েছে। এসব মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে হয়রানি ও আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন সাধারন মানুষ। পাশাপাশি সামাজিক মানহানীর শিকার হচ্ছেন তাঁরা। হয়রানীমূলক এসব মামলা থেকে মুক্তি পেতে চান গ্রামের মানুষ।
গ্রামবাসীরা আরো অভিযোগ করেন,‘ ২০১৯ সাল থেকে কম বেশি দুই মাসের ব্যবধানে গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে ৫টি মামলা দায়ের করেছেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মো. আব্দুল বারী। এনিয়ে গ্রামবাসী উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তাঁরা সমঝোতার উদ্যোগ নিলেও হাজির হননি ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
বিয়াঘাট ইউটি চেয়ারম্যান প্রভাষক মোজাম্মেল হক ‘ গ্রামের মানুষের হয়রানি লাঘবে একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। একবার সমঝোতা বৈঠকে হাজির হয়ে সমঝোতাপত্রে স্বাক্ষরও করেছিলেন আব্দুল বারী। তার পরও গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে পর পর ৫টি মামলা দায়ের করেছিলেন তিনি। সকল মামলাতে জামিনে রয়েছেন আসামীরা।
উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ গ্রামবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাবেক ওই পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল বারীকে তিন দফা নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নোটিশকে আমলে নেননি তিনি। উপরন্ত তিনি পুলিশের দাপট দেখিয়ে গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়ে নানাভাবে হয়রানি করেই চলছেন।’
সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল বারী তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রসঙ্গে দাবি করেন, ‘ কারো জায়গা অবৈধ দখলে নেননি। চাকরি দেওয়ার নামে দায়ের করা মামলাটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত ছিল। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার কারনেই গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে ৫টি মামলা দায়ের করেছেন। তাছাড়া জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আস্থা না থাকায় তাঁদের ডাকে সারা দেননি তিনি।